আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা আধুনিক ব্যবসার আইডিয়া খুঁজে থাকেন। এই ধরণের মানুষ সাধারণত আধুনিকমনা হয়ে থাকেন। তাদের মধ্যে প্রযুক্তি নিয়ে ভাল আগ্রহ আছে।
মূলত আধুনিক ব্যবসাগুলোতে প্রযুক্তির ছোয়া থাকবে না তা হতে পারে না। প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব ব্যবসায় দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবেন।
আসুন তাহলে আমরা আধুনিক ব্যবহার আইডিয়া হিসেবে কয়েকটি ব্যবসা সম্পর্কে জেনে নিই।
আধুনিক ব্যবসার আইডিয়া
আধুনিক ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে অনেক ধরণের ব্যবসা আছে। তবে আমি এসব ব্যবসার মধ্যে ৮ টি আধুনিক ব্যবসা নিয়ে আলোচনা করবো। এগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ
১. ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসা
২. রাইড শেয়ারিং ব্যবসা
৩. ড্রপশিপিং
৪. ই-কমার্স ব্যবসা
৫. ট্রাভেল গেস্ট শেয়ারিং
৬. ইন্টেরিয়র ডিজাইন
৭. চাইল্ড কেয়ার সেন্টার
৮. ফ্যাশন হাউজ
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসা
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কথাটা শুনেই বুঝতে পারছেন ইভেন্ট আয়োজন করা এবং গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে এই ব্যবসার মূল বিষয়।
ইভেন্ট ম্যানেজ করা খুব সহজ কোন কাজ নয়। গ্রাহকদের বিভিন্ন ধরণের চাহিদা থাকে। সেসব চাহিদা পূরণ করে সঠিকভাবে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং কাজ।
এই ধরণের ব্যবসা করতে হলে আপনার কিছু রুচিশীল এবং সৃজনশীল চিন্তাভাবনা করতে পারে এমন মানবসম্পদ লাগবে। কারণ একটি ইভেন্ট সফলভাবে এবং আকর্ষণীয়ভাবে আয়োজন করতে অবশ্যই রুচিশীল এবং সৃজনশীল চিন্তাভাবনা করতে পারে এমন ব্যক্তির প্রয়োজন হবে।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসা কার্যক্রম এর মধ্যে রয়েছেঃ
১. ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী ভেন্যু নির্বাচন করতে হবে।ক্লায়েন্টকে একাধিক ভেন্যুর অফার করতে পারেন। তারপর তারা যে ভেন্যু পছন্দ করবে সেই ভেন্যুর খরচসহ যাবতীয় তথ্য ক্লায়েন্টকে জানাতে হবে।
২. ইভেন্ট ম্যানেজ করার জন্য একটি সুন্দর এবং গোছানো পরিকল্পনা করতে হবে।
৩. সফলভাবে ইভেন্ট সম্পন্ন করতে হলে কি পরিমাণ বাজেট লাগবে তার পূঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব করতে হবে।
৪. অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে স্থানীয় নিয়মকানুন পালন করার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
৫. অনুষ্ঠানে অতিথি আপ্যায়ন, খাবার ম্যানু, যাতায়াতের ব্যবস্থা এবং বসার সিটের ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
৬. ডেকোরেশন আইটেম সরবরাহকারী, খাবার সরবরাহকারী, ফটোগ্রাফার, গায়কসহ সবার সাথে সমন্বয় রক্ষা করতে হবে,
৭. ইভেন্ট আয়োজন করতে যেসব লজিস্টিক সাপোর্ট প্রয়োজন তা সরবরাহ করা,
৮. অনুষ্ঠান আয়োজনে কোন সমস্যা হলে তা সমাধান করা,
আরও পড়ুন: ২০২৫ সালে শুরু করতে পারবেন এমন ১০ টি স্মার্ট ব্যবসার আইডিয়া
রাইড শেয়ারিং ব্যবসা
রাইড শেয়ারিং নাম শুনেই বুঝতে পারছেন ব্যবসার মূল বিষয় হচ্ছে রাইড শেয়ারি। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি তার গাড়িতে যাত্রী পরিবহন করবে এবং এর বিনিময়ে তিনি ভাড়া পাবেন।
রেভিনিউ মডেল
১. ড্রাইভার এবং যাত্রীর কাছ থেকে আলাদা আলাদা অথবা উভয়ের কাছ থেকেই কমিশন নিতে পারেন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শুধু ড্রাইভারের কাছ থেকেই কমিশন নেওয়া হয়।
২. সময়, ট্রাফিক এবং ড্রাইভারের প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন ভাড়া এবং কমিশন নির্ধারণ করতে পারেন।
আধুনিক ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে এই ধরণের ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে যা করতে হবে:
১. মার্কেট এনালাইসিস করতে হবে। যেহেতু মার্কেটে উবার পাঠাও এর মত কোম্পানি আছে। তাই তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করে আপনি মার্কেট ধরতে পারবেন কিনা তা ভালভাবে এনালাইসিস করুন।
২. আপনার টার্গেট মার্কেট নির্ধারণ করুন,
৩. ভাড়া এবং কমিশন পলিসি নির্ধারণ করুন,
৪. ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ তৈরি করুন,
৫. কোম্পানির নিবন্ধন করুন এবং যাথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি গ্রহণ করুন
৬. ব্র্যান্ডের পরিচিতি মানুষের কাছে পৌছানোর ব্যবস্থা করুন,
৭. কোম্পানির কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য দক্ষ মানবসম্পদ নিয়োগ দিন।
ড্রপশিপিং ব্যবসা
আধুনিক ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে ড্রপশিপিংকে রাখতেই হবে। প্রযুক্তির এই যুগে ড্রপশিপিং এর মতো ব্যবসার প্রসার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ড্রপশিপিং ব্যবসায় ৩ টি পক্ষ থাকে,
১. ড্রপশিপার
২. ক্রেতা
৩. উতপাদক বা সাপ্লায়ার
ড্রপশিপিং ব্যবসার মডেল অনুযায়ী ড্রপশিপার তার অনলাইন স্টোরে উতপাদক বা সাপ্লায়ারের পণ্য প্রদর্শন করে। ক্রেতা সেসব পণ্য দেখে ক্রয় করার জন্য অর্ডার করে।
ড্রপশিপার সেই অর্ডার উতপাদক বা সাপ্লায়ারের কাছে পাঠিয়ে দেয়। তিনি তখন সেই পণ্য ক্রেতার নিকট পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
ড্রপশিপারের লাভ হচ্ছে তিনি উতপাদক বা সাপ্লায়ারের দামের চেয়ে কিছু বেশি দামে পন্য বিক্রি করেন। যেমন একটি পণ্য উতপাদক বা সাপ্লায়ার ১০০ টাকায় বিক্রি করলে ড্রপশিপার সেটি ক্রেতার কাছে ১১০ টাকায় বিক্রয় করে। ১০ টাকা হচ্ছে ড্রপশিপারের লাভ।
বিস্তারিত পড়ুন: ড্রপশিপিং কি? ড্রপশিপিং ব্যবসার পূর্ণ গাইডলাইন।
ই-কমার্স ব্যবসা
ই-কমার্সকে অবশ্যই আধুনিক ব্যবসার আইডিয়া এর মধ্যে রাখতে হবে। আপনি যদি আধুনিক কোন ব্যবসা করতে চান তাহলে আপনি ই-কমার্সকে বেছে নিতে পারেন।
ই-কমার্স ব্যবসা করতে হলে আপনাকে যা করতে হবে,
১. প্রথমে আপনি কোন ধরণের পণ্য নিয়ে ব্যবসা করবেন সেটি ঠিক করুন,
২. বাজারে আপনার পণ্যের চাহিদা কেমন সেটি যাচাই করুন,
৩. একটা ওয়েবসাইট বানাতে হবে। ওয়েবসাইটের পাশাপাশি অ্যাপও বানাতে পারেন।
৪. ওয়েবসাইটে আপনার পণ্যগুলো ক্যাটাগরি চেয়ে অনুযায়ী প্রদর্শন করার ব্যবস্থা করুন,
৫. গ্রাহকদের কাছে পণ্য পৌঁছে দিতে সোশাল মিডিয়া মার্কেটিং করুন,
৬. সার্চ ইঞ্জিন থেকে অর্গানিক ট্রাফিক পাওয়ার জন্য সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন করুন।
ট্রাভেল গেস্ট শেয়ারিং
একটা অনেকটা রাইড শেয়ারিং ব্যবসার মতই ব্যবসা। পৃথিবীর অন্যতম স্টার আপ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান Airbnb এই ব্যবসা করে আজ বিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে।
এই ব্যবসার মডেল যেভাবে কাজ করে:
১. যারা গেস্টকে তাদের বাড়িতে রাখবে তাদের প্রথমেই আপনার কোম্পানির অ্যাপে গিয়ে সকল তথ্য দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে। এর মতে বাড়ির রুমের ছবি, সুযোগ সুবিধা এগুলো অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে,
২. গেস্ট আপনার অ্যাপ বা ওয়েবসাইট থেকে তার পছন্দ অনুযায়ী রুম বুক করবে।
৩. আপনার কাছে গেস্ট পেমেন্ট করবে। আপনি আপনার কমিশন কেটে হোস্টের নিকট পেমেন্ট পৌঁছে দিবেন।
রেভেনিউ মডেল
১. গেস্টকে তার রুম বুকের মোট টাকার মধ্যে কয়েক পারসেন্ট কমিশন আপনাকে প্রদান করতে হবে,
২. হোস্টের আয়ের উপর কয়েক পারসেন্ট কমিশন ধার্য করতে পারেন।
এই ধরণের ব্যবসা শুরু করতে হলে আপনাকে একটি ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ তৈরি করতে হবে। আইটিতে দক্ষতাসম্পন্ন জনবল নিয়োগ দিতে হবে। ড্রাইভারদের পারফরম্যান্স নিয়মিত মিনিটর করতে হবে। কারণ ড্রাইভারদের পারফরম্যান্স এর উপর এই ব্যবসার সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করবে। যাত্রীদের কোনো অভিযোগ পেলে সেটা দ্রুত সমাধান করতে হবে।
ইন্টেরিয়র ডিজাইন – আধুনিক ব্যবসার আইডিয়া
দিন দিন আমাদের দেশে সৌখিন ও রুচিশীল মানুষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব মানুষ তাদের বাড়ি এবং অফিসের অভ্যন্তর সুন্দরভাবে ডিজাইন করতে চায়। এইসব মানুষের চাহিদা মেটাতে গিয়েই ইন্টেরিয়র ডিজাইন ব্যবসার ধারণাটি এসেছে।
ইন্টেরিয়র ডিজাইন ব্যবসা করতে হলে আপনাকে রুচিশীল এবং সৃজনশীল চিন্তাধারার হতে হবে। আপনি কত সুন্দরভাবে ডিজাইন করতে পারছেন তার উপর নির্ভর করবে আপনার ব্যবসার সফলতা। আপনি যত ভাল ডিজাইন করতে পারবেন তত বেশি আপনার সুনাম ছড়িয়ে পড়বে এবং গ্রাহক বাড়বে।
আপনার করা সুন্দর ডিজাইনের কাজগুলোর ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিন। এছাড়া নিজের একটা ওয়েবসাইট তৈরি করুন। যেখানে আপনার করা ইন্টেরিয়র ডিজাইনগুলো গ্রাহকদের সামনে প্রদর্শিত হবে। এভাবে আপনি অনেক নতুন গ্রাহক পাবেন।
চাইল্ড কেয়ার সেন্টার – আধুনিক ব্যবসার আইডিয়া
আমাদের দেশে চাকরিজীবী পিতামাতার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাকরি এসব পিতামাতারা তাদের সন্তানদের দেখাশোনা করার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আত্নীস্বজন এবং কাজের লোকদের উপর নির্ভর করে। কিন্তু যখন কাউকে পাওয়া যায় না তখন তারা চাইল্ড ডে কেয়ার সেন্টারেই তাদের সন্তানদের রেখে অফিসে যায়।
আধুনিক ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে চাইল্ড ডে কেয়ার সেন্টার একটি উপযুক্ত ব্যবসা। আধুনিক যুগে সময়ের প্রয়োজনে এই ব্যবসার উদ্ভব হয়েছে।
এই ধরণের ব্যবসার উপযুক্ত যায়গা হচ্ছে বড় বড় শহর এবং শিল্পাঞ্চল। এসব স্থানে আপনি যদি চাইল্ড ডে কেয়ার সেন্টার দিতে পারেন তাহলে প্রচুর গ্রাহক পাবেন।
চাইল্ড ডে কেয়ার সেন্টারে শিশুদের যত্ন নেওয়া এবং তাদের তাদের দেখাশোনার জন্য হাসিখুশি যত্নশীল মহিলা প্রয়োজন। আর শিশুরা যাতে খেলাধুলা করতে পারে এজন্য সেন্টারে খেলনাসহ শিশুদের বিভিন্ন রাইডের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
আরও পড়ুন: শীর্ষ ১০ টি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া
ফ্যাশন হাউজ
আপনি যদি একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হয়ে থাকেন তাহলে আপনি একটি ফ্যাশন হাউজ খুলতে পারেন। ফ্যাশন সচেতন তরুণ-তরুণীদের টার্গেট করে বিভিন্ন ডিজাইনের জামাকাপড় তৈরি করতে পারলে আপনি সহজেই মার্কেট ধরতে পারবেন।
বর্তমানে কোন ধরণের ফ্যাশন মার্কেটে চলছে এই বিষয়ে আপনাকে অবগত থাকতে হবে। কারণ ফ্যাশন হচ্ছে পরিবর্তনশীল একটা বিষয়। একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর ফ্যাশন পরিবর্তন হয়। তাই আপনি যদি চলমান ট্রেন্ড অনুসরণ করে পোশাক তৈরি করতে পারেন তাহলে এই ব্যবসায় ভাল করতে পারবেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশেষ করে ইন্সটাগ্রাম, টিকটকের মতো প্লাটফর্মে আপনাকে একটিভ থাকতে হবে। কারণ তরুণরাই এসব প্লাটফর্ম বেশি ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়েও আপনি ফ্যাশন সচেতন মানুষের কাছে খুব সহজেই আপনি পৌঁছাতে পারবেন।