বেশিরভাগ ডিজিটাল মার্কেটার ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করার আগে প্রথমেই চিন্তা করেন কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করবো।
তবে এই চিন্তাটা মাথায় আসা খুবই স্বাভাবিক। কারণ ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করা একজন নতুন মার্কেটারের জন্য একটি রোমাঞ্চকর ও চ্যালেঞ্জিং যাত্রা হতে পারে।
সঠিক কৌশল এবং পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকলে আপনি সফলভাবে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারবেন। তবে এই পথচলায় কিছু চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে। নিচে বিস্তারিতভাবে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো।
ডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে শুরু করবো?
একজন নতুন মার্কেটার হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করার জন্য আপনাকে কতগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হবে।
আপনি যদি সফলভাবে এসব ধাপ অতিক্রম করতে পারেন তাহলে সহজেই আপনি ডিজিটাল মার্কেটার হতে পারবেন। নিচে ধাপগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো :
১. মার্কেটিং সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা গ্রহণ
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন উপাদান সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন অনলাইন কোর্স, টিউটোরিয়াল এবং ব্লগ থেকে SEO, SEM, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, কন্টেন্ট মার্কেটিং, ইমেইল মার্কেটিং, গুগল অ্যাডস ইত্যাদি সম্পর্কে শিখতে পারেন। এই বিষয়গুলোর উপর মৌলিক ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করুন।
২. SEO এবং SEM শিখুন
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) এবং সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (SEM) ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের দুটি প্রধান অংশ। এগুলো শিখলে কিভাবে ওয়েবসাইট ট্র্যাফিক বাড়ানো যায় এবং কীভাবে পেইড অ্যাডের মাধ্যমে দ্রুত ফলাফল আনা যায় তা বোঝা সহজ হবে।
আরও পড়ুন : এসইও (SEO) কি? এসইও সম্পর্কে স্টেপ বাই স্টেপ গাইডলাইন
৩. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং শিখুন
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং শক্তিশালী ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, লিঙ্কডইন এবং টুইটারের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য কীভাবে কন্টেন্ট তৈরি করতে হয় এবং টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাতে হয় তা শিখুন।
আরও পড়ুন : সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কিভাবে কিরবেন?
৪. কন্টেন্ট ক্রিয়েশন এবং কনটেন্ট মার্কেটিং
কনটেন্ট তৈরি করা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মুল ভিত্তি। ব্লগ, ভিডিও, ই-বুক ইত্যাদি তৈরি করার মাধ্যমে আপনি গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে পারবেন। তাই কিভাবে মানসম্পন্ন কনটেন্ট তৈরি করতে হয় তা শিখুন। কনটেন্ট মার্কেটিং এর কৌশলগুলো বোঝার চেষ্টা করুন।
৫. ডেটা অ্যানালিটিক্স শিখুন
ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করার জন্য আপনাকে ডেটা অ্যানালিটিক্স শিখতে হবে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এর মাধ্যমে আপনি পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করতে পারবেন। Google Analytics এবং অন্যান্য টুলসের মাধ্যমে ওয়েবসাইট এবং ক্যাম্পেইন পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করতে শিখুন। এটি আপনার মার্কেটিং কৌশলগুলিকে আরও কার্যকর করতে সাহায্য করবে।
৬. ব্যক্তিগত প্রোজেক্ট বা ফ্রিল্যান্স কাজ শুরু করুন
প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য নিজস্ব প্রোজেক্ট শুরু করতে পারেন। আপনি নিজের ব্লগ বা একটি ছোট ব্যবসার ডিজিটাল মার্কেটিং পরিচালনা করতে পারেন। এছাড়া বিভিন্ন ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে কাজ করে হাতে কলমে অভিজ্ঞতা নিতে পারেন।
৭. নেটওয়ার্ক তৈরি করুন
ডিজিটাল মার্কেটিং কমিউনিটিতে যোগ দিন এবং অন্যান্য মার্কেটারদের সাথে যোগাযোগ গড়ে তুলুন। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ, ফোরাম, এবং ওয়েবিনারগুলোতে অংশগ্রহণ করুন, যেখানে আপনি নতুন নতুন ধারণা ও প্রবণতা শিখতে পারেন।
৮. অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ কন্টেন্ট ও ট্রেন্ড সম্পর্কে আপডেট থাকুন
ডিজিটাল মার্কেটিং দ্রুত পরিবর্তনশীল একটি ক্ষেত্র। তাই প্রতিনিয়ত নতুন ট্রেন্ড, টুলস এবং কৌশল সম্পর্কে আপডেট থাকা জরুরি। নিয়মিতভাবে ব্লগ পড়ুন, অনলাইন কোর্স করুন এবং মার্কেটিং কনফারেন্সে যোগ দিন।
আশা করি উপরের লেখার মাধ্যমে কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করবো তার প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছি। এই ধাপগুলো অনুসরণ করলে আপনি সফলতার সাথে ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করাতে পারবেন।
নতুন মার্কেটারদের জন্য সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জসমূহ
একজন নতুন মার্কেটার হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করার ক্ষেত্রে আপনাকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। একজন ভাল ডিজিটাল মার্কেটার হতে হলে আপনাকে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে:
১. অধিক জ্ঞানের প্রয়োজন
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে অনেকগুলো বিষয় থাকে—SEO, SEM, কনটেন্ট মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেইল মার্কেটিং ইত্যাদি। নতুন মার্কেটার হিসেবে এতগুলো বিষয় দ্রুত শেখা এবং প্রতিটি বিষয়ে দক্ষ হওয়া কঠিন হতে পারে। প্রথমে প্রতিটি ক্ষেত্র সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা নিয়ে পরে বিশেষায়িত ক্ষেত্রের উপর আরও গভীরভাবে জ্ঞান অর্জন করুন।
২. প্রতিযোগিতা
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে প্রতিযোগিতা খুব বেশি। অনেক অভিজ্ঞ মার্কেটার এবং সংস্থা এই ক্ষেত্রে সক্রিয় আছে। নতুন হিসেবে আপনি তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হবেন। তাই নিজের দক্ষতা বাড়াতে এবং ক্রমাগত উন্নতির চেষ্টা করতে হবে।
৩. পরিবর্তনশীলতা
ডিজিটাল মার্কেটিং ক্ষেত্রটি খুব দ্রুত পরিবর্তিত হয়। গুগলের এলগরিদম আপডেট, নতুন সোশ্যাল মিডিয়া ফিচার, কিংবা নতুন মার্কেটিং টুলস প্রতি বছরই বের হয়। তাই সবসময় নিজেকে আপডেট রাখা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
৪. পারফর্মেন্স পরিমাপের জটিলতা
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে অনেক পরিসংখ্যান এবং ডেটা বিশ্লেষণ করতে হয়। নতুন হিসেবে এই ডেটা বিশ্লেষণ করা এবং তার উপর ভিত্তি করে কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হতে পারে।
৫. বাজেটের সীমাবদ্ধতা
অনেক সময় নতুন মার্কেটাররা কম বাজেট নিয়ে কাজ করতে বাধ্য হয়। তাই অল্প বাজেটে সর্বোচ্চ ফলাফল পাওয়ার জন্য সঠিক কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।
৬. ফলাফল পেতে সময় লাগা
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে অনেক কৌশল রয়েছে যেগুলোর ফলে তাৎক্ষণিক ফলাফল পাওয়া যায় না। যেমন SEO এবং কনটেন্ট মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে সময় লাগে এবং ধৈর্য ধরে কাজ করতে হয়। নতুন মার্কেটারদের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে, কারণ অনেকেই দ্রুত ফলাফল আশা করেন।
৭. গ্রাহকের প্রত্যাশা মেটানো
গ্রাহকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখতে হয় এবং তাদের প্রত্যাশা মেটাতে হয়। তাদের চাহিদা অনুযায়ী কনটেন্ট বা বিজ্ঞাপন তৈরির সময় তাদের চাহিদা বুঝতে ভুল হতে পারে, যা মার্কেটিং প্রচারণার সাফল্যে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
কিভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবেন?
১. ধীরে ধীরে শেখার প্রবণতা তৈরি করুন
একসাথে সবকিছু শেখার চেষ্টা না করে প্রতিটি উপাদান আলাদাভাবে শিখুন। প্রতিটি বিষয়ে ধীরে ধীরে দক্ষতা অর্জন করুন।
২. আপডেট থাকুন
ডিজিটাল মার্কেটিং ব্লগ, নিউজলেটার এবং সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপে জয়েন হয়ে নিয়মিতভাবে নতুন ট্রেন্ড ও কৌশল সম্পর্কে জানুন।
৩. মেন্টর খুঁজুন
অভিজ্ঞ মার্কেটারদের সাথে যোগাযোগ করুন এবং তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিন। এটি আপনাকে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে।
৪. ডেটা অ্যানালিটিক্স শিখুন
বিভিন্ন ডেটা বিশ্লেষণ টুল সম্পর্কে শিখুন এবং তাদের ব্যবহার করতে পারদর্শী হন।
৫. ধৈর্য এবং অধ্যবসায়
দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যান এবং তাৎক্ষণিক ফলাফলের জন্য অস্থিরতা না দেখিয়ে ধৈর্য ধরুন।
উপসংহার
একজন নতুন মার্কেটার হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করার জন্য ধাপে ধাপে এগোনো এবং প্রতিনিয়ত শেখার মানসিকতা থাকা জরুরি।
যদিও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে সঠিক জ্ঞান, পরিকল্পনা এবং প্র্যাকটিসের মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠা সম্ভব। এই যাত্রা কঠিন হলেও এটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হতে পারে এবং ভবিষ্যতে ক্যারিয়ারের জন্য অসীম সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে পারে।