টুইটার (বর্তমানে X) হচ্ছে একটি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। প্রতি মাসে ৬০০ মিলিয়ন ব্যবহারকারী ব্যবহারকারী টুইটার ব্যবহার করছে । এই বিশাল ব্যবহারকারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার থেকে আয় করা কঠিন কোন বিষয় নয়।
ইলন মাস্ক টুইটার ক্রয় করার পর থেকেই টুইটারের নাম, ইন্টারফেস, টুইটার ব্লু সাবস্ক্রিপশন এবং রেভেনিউ শেয়ারিংসহ বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তন সাধন করেছেন।
তবে টুইটার (X) থেকে আয় করার জন্য আপনার একটি সক্রিয় অনুসারী দল থাকা জরুরি, কারণ টুইটারের মনিটাইজেশন মডেলগুলো ফলোয়ার ও এনগেজমেন্টের ওপর অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে ।
টুইটার (X) থেকে আয় করার উপায়
১. টুইটার অ্যাড রেভিনিউ শেয়ার (Ads Revenue Share)
২. স্পন্সর্ড পোস্ট করে টুইটার থেকে আয়
৩. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
৪. ডিজিটাল পণ্য বিক্রি করে টুইটার থেকে আয়
৫. টুইটার স্পেস (Twitter Space) থেকে আয়
৬. টিপ জার
৭. সুপার ফলোস (Super Follows)
৮. অ্যাডভাইজরি সার্ভিস এবং কনসাল্টিং
নিচে টুইটারের মাধ্যমে আয়ের বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:
১. টুইটার অ্যাড রেভিনিউ শেয়ার (Ads Revenue Share)
২০২৩ সালে টুইটার তাদের প্লাটফর্মে কাজ করা কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের আয়ের সুযোগ করে দিতেই অ্যাড রেভিনিউ শেয়ার প্রোগ্রাম চালু করে। এর ফলে কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা আগের চেয়ে অনেক বেশি কন্টেন্ট টুইটারে শেয়ার করতে উদ্বুদ্ধ হয়।
Twitter Ads Revenue Sharing Program এর মাধ্যমে টুইটার ব্যবহারকারী টুইটের মধ্যে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপন থেকে আয় করতে পারেন। তবে এই প্রোগ্রাম থেকে আয় করতে হলে আপনাকে টুইটারের ভেরিফায়েড ব্যবহারকারী হতে হবে। ভেরিফায়েড ব্যবহারকারীরা যখন টুইট করবে এবং সেটি অর্গানিক রিচ করবে তখন ব্যবহারকারী বিজ্ঞাপনের আয়ের একটি অংশ পাবে ।
এই প্রোগ্রামে যুক্ত হওয়ার পর টুইটার যে টুইট অর্গানিক রিচ করবে বেশি সেই টুইটের কমেন্ট সেকশনে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করবে। পোস্টে যত বেশি ইম্প্রেশন এবং এনগেজমেন্ট হবে আপনার টুইটার থেকে ইনকাম তত বেশি বাড়বে।
টুইটার এড রেভিনিউ প্রোগ্রামে যুক্ত হতে যেসব যোগ্যতা লাগবে:
- কমপক্ষে ৫০০ প্রিমিয়াম অনুসারী থাকতে হবে।
- গত ৩ মাসে ৫ মিলিয়ন অর্গানিক ইম্প্রেশন থাকতে হবে।
- টুইটারের মনিটাইজেশন প্রোগ্রামে যোগ দেওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে
টুইটার অ্যাড রেভিনিউ এর জন্য এক্স প্রিমিয়াম একাউন্ট সেট করার নিয়ম
আগেই বলেছি আপনি যদি রেভিনিউ শেয়ার প্রোগ্রামে যুক্ত হতে চান তাহলে আপনাকে X Premium Subscription program এ যুক্ত হতে হবে।
এজন্য আপনার হোমের বাম পাশে দেখবেন X Premium অপশন আছে। এই অপশনে ক্লিক করার পর নতুন উইন্ডো আসবে । সেখানে প্রিমিয়ামে আপগ্রেড করার অপশন পাবেন। তবে আপনাকে ১৪ দিনের ফ্রি ট্রায়ালের সুবিধা দেওয়া হবে যাতে আপনি এই প্রিমিয়ামের ফিচারের কি কি সুবিধা সুবিধা আছে সেটি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন ।
প্রিমিয়াম আপগ্রেড করার আবেদনের পর এক্স কর্তৃপক্ষ যাচাই করে দেখবে আপনি যোগ্য কিনা । যোগ্য হলে তারা আপনার আইডির পাশে ব্লু টিক মার্ক দিয়ে দিবে ।
মনিটাইজেশনের জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়া
হোম পেজের বাম দিকে থাকা ম্যানু বার থেকে “More” অপশনে ক্লিক করে “Monetization” ট্যাবে প্রবেশ করুন। সেখানে “Ads revenue sharing” এর জন্য আপনি যোগ্য কিনা সেটা দেখা যাবে।
এর পাশাপাশি পেমেন্ট পাওয়ার জন্য আপনাকে Stripe Account সেট করতে হবে । পেমেন্ট পাওয়ার জন্য আপনাকে কমপক্ষে ১০ ডলার আয় করতে হবে। টুইটার প্রতি দুই সপ্তাহ পর পর পেমেন্ট প্রদান করবে ।
আরও পড়ুন: ইউটিউব থেকে আয় করা যায় কিভাবে? বিস্তারিত গাইডলাইন।
২. স্পন্সর্ড পোস্ট করে টুইটার থেকে আয়
বর্তমানে টুইটারে স্পন্সর্ড পোস্টের মাধ্যমে আয় করা অনলাইন থেকে আয়ের একটি জনপ্রিয় মাধ্যমে পরিণত হয়েছে । সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররা বিভিন্ন কোম্পানির পক্ষে স্পন্সর্ড পোস্ট করে ভাল পরিমানে আয় করছে ।
উপরের ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন বিখ্যাত ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো কিভাবে পোস্টের মাধ্যমে WHooP App ডাউনলোড করার জন্য একটি স্পন্সর্ড পোস্ট করেছেন । সেই পোস্টটি ১৩ মিলিয়ন রিচ করেছে । আপনি জানেন তিনি প্রতি পোস্টের জন্য কি পরিমান অর্থ দাবি করেন? ৩.২ মিলিয়ন ডলার!
৩. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হলো টুইটারের মাধ্যমে আয় করার আরেকটি সহজ উপায়। আপনি বিভিন্ন পণ্যের অ্যাফিলিয়েট লিংক শেয়ার করবেন এবং কেউ যদি সেই লিংকের মাধ্যমে পণ্য কিনে, তাহলে আপনি একটি নির্দিষ্ট কমিশন পাবেন।
টুইটারে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য আপনাকে প্রথমে একটি কমপ্লিট প্রোফাইল তৈরি করতে হবে । নিয়মিত ভাল ভাল কন্টেন্ট পোস্ট করে ফলোয়ারদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। তাদেরকে আপনি যে পণ্যটি ক্রয় করতে উৎসাহিত করবেন তার ভাল এবং কিছু খারাপ গুণ গ্রাহকদের সামনে উপস্থাপন করবেন। তাদেরকে বুঝিবে বলতে পারেন যে প্রতিটা পণ্যের ভালোর পাশাপাশি কিছু সমস্যা থাকতেই পারে এভাবে তাদেরকে কনভিন্স করতে পারেন ।
৪. ডিজিটাল পণ্য বিক্রি করে টুইটার থেকে আয়
আর্টিকেলের প্রথমেই বলেছি প্রতি মাসে ৬০০ মিলিয়ন মানুষ টুইটার ব্যবহার করছে। এই বিশাল ব্যবহারকারীকে টার্গেট করে আপনি খুব সহজেই ডিজিটাল পণ্য বিক্রি করে আয় করতে পারেন । ডিজিটাল পণ্যের মধ্যে রয়েছে ইবুক, কোর্স, সফটওয়ার, অ্যাপস বা অন্য কোন অনলাইন ভিত্তিক সেবা ।
আপনার যদি ভাল পরিমানে অনুসারী থাকে তাহলে এই ধরণের ব্যবসা করা খুব কঠিন কিছু নয় । উপরের ছবিতেই দেখতে পাচ্ছে Rony নামের লোকটি কিভাবে তার কোর্স বিক্রি করার অফার দিচ্ছে। যদিও এখানে কিছু জিনিস তিনি ফ্রি দেওয়ার অফার করছে কিন্তু তার সকল প্রিমিয়াম কোর্স পেইড।
তাই আপনি যদি মনে করেন আপনি কোন একটা বিষয়ে এক্সপার্ট তাহলে আজই বানিয়ে ফেলুন একটি কোর্স এবং সেটি টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিক্রয় করা শুরু করুন ।
আরও পড়ুনঃ টিকটক থেকে আয় করুন ৭ টি উপায়ে
৫. টুইটার স্পেস (Twitter Space) থেকে আয়
Twitter Space হলো একটি লাইভ অডিও চ্যাট রুম। এখানে যেকেউ যুক্ত হতে পারে , শুনতে পারে এবং কিছু বলার থাকলে বলতে পারে । এখানে স্পেস ক্রিয়েটর হচ্ছে হোস্ট। অর্থাৎ যিনি এটি খুলেন তিনিই হোস্ট। টুইটার স্পেস তৈরি করা খুব সহজ । বাম পাশে More অপশনে ক্লিক করলে Create your Space অপশন পাবেন । সেই অপশনে ক্লিক করলেই পাশে পপ আপ ইউন্ডো আসবে। সেখানে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে Start Now তে ক্লিক করে Space তৈরি করুন ।
এটি একটি পাবলিক প্লেস। আপনার অনুসারী নয় এমন ব্যবহারকারীও আপনার স্পেসের শ্রোতা হতে পারবে । আপনি চাইলে লিংক পাঠিয়ে কাউকে আপনার স্পেসে যুক্ত হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ পাঠাতে পারবেন । একসাথে সর্বোচ্চ ১৩ জন (১ জন হোস্ট এবং ২ জন কো-হোস্টসহ) স্পেসে কথা বলতে পারবে ।
টিকেট স্পেস (Ticket Space)
টুইটার স্পেস মনিটাইজেশন এর প্রথম পদ্ধতি হচ্ছে টিকেট স্পেস । তবে এজন্য আপনাকে কিছু যোগ্যতা পূরণ করতে হবে। যেমন: কমপক্ষে ১ হাজার অনুসারী থাকতে হবে, বিগত ৩০ দিনে কমপক্ষে ৩ টি স্পেস হোস্ট করতে হবে এবং বয়স কমপক্ষে ১৮ হতে হবে।
টিকেট স্পেস কিভাবে কাজ করে? আপনার স্পেসে যুক্ত হওয়ার জন্য শ্রোতারা আপনার নির্ধারিত দামে টিকেট ক্রয় করবে। আপনি কত জনের কাছে টিকেট বিক্রয় করবেন সেটিও আপনার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে। এভাবে আপনি টুইটার থেকে আয় করতে পারবেন । টুইটারের নিয়ম অনুযায়ী সার্ভিস ফি বাদ দিয়ে টিকেট স্পেস থেকে আয়ের ৯৭% পাবে হোস্ট।
প্রোডাক্ট বা সার্ভিস প্রমোশন
টুইটার স্পেস থেকে আয়ের আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে শ্রোতাদের কাছে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস প্রমোট করা। মিটিং চলার সময় আপনি চাইলে কোন ওয়েবসাইটের এর বিষয়ে শ্রোতাদের বলতে পারেন। শ্রোতারা যখন সেই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করবে তখন সেখানে বিজ্ঞাপন, অ্যাফিলিয়েট পণ্য বিক্রি, লিড জেনারেশন বা নিজস্ব পণ্য বা সার্ভিস বিক্রি করে আপনি আয় করতে পারেন ।
৬. টিপ জার
টিপ জার হচ্ছে টুইটার থেকে আয়ের আরেকটি পদ্ধতি। শ্রোতারা টিপ জার আইকনের ব্যবহার করে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরকে টিপ প্রদান করতে পারে । সাধারণত এই ফিচারটি মোবাইলে ব্যবহার করা যায়।
টিপ জার সেট করার জন্য Edit Profile এ যান। তারপর Tips অপশনে ক্লিক করে চালু করুন টিপস।
বিভিন্ন পেমেন্ট প্লাটফর্ম যেমন বিটকয়েন, ব্যান্ডক্যাম্প (Bandcamp), ক্যাশ অ্যাপ, প্যাট্রন (Patreon), পেপাল, ভেনম (Venmo) ইত্যাদির মাধ্যমে টিপ প্রদান করা যায়।
কিভাবে টিপ জার থেকে আয় করবেন? নিয়মিত তথ্যবহুল বা মজাদার কন্টেন্ট তৈরি করুন এবং শ্রোতাদের কাছে টিপ প্রদান করার জন্য অনুরোধ করুন । টিপ থেকে আয়ের কোন অংশ টুইটার দাবি করে না ।
৭. সুপার ফলোস (Super Follows)
টুইটার কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের আয়ের সুযোগ করে দিতে সুপার ফলোস ফিচার চালু করেছে। এই ফিচারের বিশেষ দিক হচ্ছে কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা তাদের সবচেয়ে ভাল অনুসারীদের জন্য এক্সক্লুসিভ কন্টেন্ট অফার করে।
সুপার ফলোস কিভাবে কাজ করে? আপনার কিছু স্পেশাল কন্টেন্ট থাকবে শুধুমাত্র তাদের জন্য যারা সাবস্ক্রিপশন ফি প্রদান করে সেসব কন্টেন্টে প্রবেশ করতে পারবে । এই ফিচারটি তাদের জন্যই পারফেক্ট যারা হাই কোয়ালিটি সম্পন্ন কন্টেন্ট তৈরি করতে পারে ।
৮. অ্যাডভাইজরি সার্ভিস এবং কনসাল্টিং
আপনি যদি কোনো বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে থাকেন তাহলে টুইটারের মাধ্যমে আপনার কনসাল্টিং সার্ভিস বা অ্যাডভাইজরি সার্ভিস অফার করতে পারেন। ফলোয়াররা আপনার পরামর্শের জন্য আপনার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবে এবং আপনি এর জন্য ফি ধার্য করতে পারেন।
পাঠক জিজ্ঞাসা
টুইটার থেকে আয় করার জন্য কি পরিমাণ ফলোয়ার প্রয়োজন?
টুইটার থেকে আয় করার আপনার কমপক্ষে ৫০০ ফলোয়ার লাগবে এবং টুইটার ব্লু (X Premium) তে সাবস্ক্রাইব করতে হবে। এর ফলে আপনি সুপার ফলোস (Super Follows) এবং এড রেভিনিউ শেয়ারিং প্রোগ্রামে জয়েন করতে পারবেন।
১ হাজার ফলোয়ার থাকলে টুইটার থেকে কি পরিমাণ আয় করা যায়?
টুইটার (X) থেকে আয় এর পরিমাণ কেমন হবে তা কিছু মেট্রিক্স যেমন মোট লাইক, রিটুইট এবং মোট কি পরিমাণ মানুষ টুইটের রিপ্লাই দিচ্ছে ইত্যাদির উপর নির্ভর করে।
স্পন্সরকৃত প্রতি পোস্টের জন্য ব্র্যান্ডগুলো একজন ১ হাজার অনুসারী ইনফ্লুয়েন্সারকে ০.৫ ডলার থেকে ১.৫ ডলার পর্যন্ত প্রদান করে থাকে।
১ মিলিয়ন ভিউ এর জন্য টুইটার কি পরিমাণ অর্থ প্রদান করে?
টুইটার প্রতি ১ মিলিয়ন ভিউ এর জন্য প্রায় ৮.৫ ডলার প্রদান করে। তবে এর জন্য আপনাকে এড রেভেনিউ শেয়ারিং প্রোগ্রামের যোগ্য হতে হবে এবং গত ৩ মাসে আপনার শেয়ারকরা টুইটের কমপক্ষে ৫ মিলিয়ন ভিউ থাকতে হবে।