একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারকে অবশ্যই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং মডেল সম্পর্কে জানতে হবে।
কারণ একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার কিভাবে আয় করে জানার জন্য অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং মডেল সম্পর্কে জানা জরুরী।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কমিশন মডেল
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কমিশন এর বিভিন্ন মডেল রয়েছে। প্রতিটি মডেলের নিজস্ব নিয়ম এবং কমিশন কাঠামো আছে। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং মডেল সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :
১. Cost Per Sale (CPS) বা Pay Per Sale (PPS)
এই মডেলে অ্যাফিলিয়েটরা কেবল তখনই কমিশন পান যখন তাদের রেফার করা গ্রাহকরা কোনো পণ্য বা সেবা কেনেন। অর্থাৎ, গ্রাহক পণ্য বা সেবা ক্রয় করলে অ্যাফিলিয়েটরা কমিশন পান।
উদাহরণ:
একজন অ্যাফিলিয়েট ব্লগার অ্যামাজনের একটি পণ্য বা সেবা প্রমোট করছে। তার রেফার করা লিঙ্ক থেকে কেউ যদি পণ্য বা সেবাটি কিনে, তখন ব্লগার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন পান।
সুবিধা:
- এটি সহজে পরিমাপযোগ্য এবং এর পেমেন্ট সুনিশ্চিত।
- মার্চেন্টের জন্যও এই মডেল লাভজনক কারণ পেমেন্ট শুধুমাত্র সফল বিক্রয়ের ওপর নির্ভর করে।
অসুবিধা:
অ্যাফিলিয়েটদের জন্য অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে, কারণ পণ্য বা সেবা বিক্রয় হওয়া না পর্যন্ত কোনো কমিশন পাওয়া যায় না।
২. Cost Per Lead (CPL) বা Pay Per Lead (PPL)
এই মডেলে অ্যাফিলিয়েটরা প্রতিটি সফল লিড বা নির্দিষ্ট অ্যাকশনের ভিত্তিতে কমিশন পান। যেমন কোনো ফর্ম পূরণ করা, নিউজলেটারে সাইনআপ করা, বা অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করা।
উদাহরণ:
একজন অ্যাফিলিয়েট কোনো ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির লিড জেনারেশন ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে। তার মাধ্যমে একজন ভিজিটর ফর্ম পূরণ করলে অ্যাফিলিয়েট কমিশন পাবে।
সুবিধা:
- অ্যাকশন নেওয়া তুলনামূলক সহজ হওয়ায় অ্যাফিলিয়েটদের কমিশন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
- মার্চেন্টদের জন্য নতুন গ্রাহক সংগ্রহ করা সহজ।
অসুবিধা:
লিড জেনারেশন সফল হলেও বিক্রয়ে পরিণত না হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা মার্চেন্টদের জন্য ব্যয়বহুল হতে পারে।
৩. Cost Per Click (CPC) বা Pay Per Click (PPC)
এই মডেলে অ্যাফিলিয়েটরা প্রতি ক্লিকের জন্য কমিশন পান। প্রতিবার ভিজিটর অ্যাফিলিয়েটের রেফার করা লিঙ্কে ক্লিক করলে, মার্চেন্ট অ্যাফিলিয়েটকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করে।
উদাহরণ:
একজন অ্যাফিলিয়েট তার ওয়েবসাইটে একটি বিজ্ঞাপন স্থাপন করেছে। একজন ভিজিটর সেই বিজ্ঞাপনে ক্লিক করলে, অ্যাফিলিয়েট একটি নির্দিষ্ট ফি পাবে।
সুবিধা:
- অ্যাকশন নেওয়া (ক্লিক করা) তুলনামূলক সহজ, তাই ক্লিক সংখ্যা বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- মার্চেন্টদের জন্য প্রচুর ভিজিটর আনার একটি ভালো উপায়।
অসুবিধা:
শুধুমাত্র ক্লিকের মাধ্যমে বিক্রয় নিশ্চিত হয় না, ফলে এটি অনেক সময় মার্চেন্টের জন্য অকার্যকর হতে পারে।
৪. Cost Per Mille (CPM) বা Cost Per Thousand Impressions
এই মডেলে অ্যাফিলিয়েটরা প্রতি ১০০০ ইমপ্রেশনের জন্য কমিশন পান। ইমপ্রেশন হলো একটি বিজ্ঞাপন দেখানো। অর্থাৎ বিজ্ঞাপনটি ১০০০ বার দেখা হলে, অ্যাফিলিয়েট একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পান।
উদাহরণ:
একজন অ্যাফিলিয়েট ব্লগার তার ওয়েবসাইটে একটি ব্যানার অ্যাড স্থাপন করেছে। অ্যাডটি যখন ১০০০ বার দেখা হবে, তখন ব্লগার নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পাবে।
সুবিধা:
- অ্যাড প্রদর্শিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় না, ক্লিক বা সেলের প্রয়োজন নেই।
- অ্যাফিলিয়েটদের জন্য তুলনামূলক সহজ উপায়ে আয় করার সুযোগ।
অসুবিধা:
- ক্লিক বা সেল ছাড়া কেবল ইমপ্রেশন থেকে আয় খুব বেশি হতে পারে না।
- ভিজিটরদের উপর তেমন কনভার্সন পাওয়ার সুযোগ কম।
৫. Two-Tier Affiliate Program
এই মডেল অ্যাফিলিয়েটদের শুধু তাদের বিক্রয় বা লিডের জন্য নয় বরং তাদের দ্বারা রেফার করা অন্য অ্যাফিলিয়েটদের বিক্রয় বা লিডের জন্যও কমিশন প্রদান করে।
অর্থাৎ এই মডেলে অ্যাফিলিয়েটদের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয় এবং সেই নেটওয়ার্কের সাফল্যের জন্যও আয় করা যায়।
উদাহরণ:
একজন অ্যাফিলিয়েট অন্য একজন অ্যাফিলিয়েটকে কোনো প্রোগ্রামে যোগদানের জন্য রেফার করেছে। এখন নতুন অ্যাফিলিয়েটের বিক্রয় বা লিড থেকে কমিশনের অংশ সেই প্রথম অ্যাফিলিয়েটও পাবে।
সুবিধা:
- আরও বড় আয়ের সুযোগ তৈরি হয়।
- নিজস্ব নেটওয়ার্ক থেকে অতিরিক্ত কমিশন পাওয়া যায়।
অসুবিধা:
- সফল নেটওয়ার্ক তৈরি করা কঠিন হতে পারে।
- কমিশন ভাগাভাগি করার জন্য আয় কিছুটা কম হতে পারে।
৬. Recurring Commissions
কিছু অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম গ্রাহকদের মাসিক বা বাৎসরিক সাবস্ক্রিপশন ভিত্তিতে কমিশন প্রদান করে।
যেমন, একজন অ্যাফিলিয়েট যখন কাউকে সাবস্ক্রিপশন ভিত্তিক সার্ভিস বিক্রি করে, তখন প্রতিবার গ্রাহক সেই সার্ভিস রিনিউ করলে অ্যাফিলিয়েট কমিশন পাবে।
উদাহরণ:
একজন অ্যাফিলিয়েট যিনি ব্লুহোস্টের ওয়েব হোস্টিং সার্ভিস প্রমোট করছে এবং হোস্টিং ক্রেতা প্রত্যেকবার সাবস্ক্রিপশন নবায়ন করলে তিনি অ্যাফিলিয়েট কমিশন পান।
সুবিধা:
- দীর্ঘমেয়াদে প্যাসিভ আয়ের উৎস।
- সাবস্ক্রিপশন যতদিন চলবে, ততদিন কমিশন পাওয়া যায়।
অসুবিধা:
- প্রথমে গ্রাহক সংগ্রহ করা কঠিন হতে পারে।
- গ্রাহক যদি সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে, তাহলে আয় বন্ধ হয়ে যায়।
সারসংক্ষেপ
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন মডেল বিভিন্ন মার্কেটার এবং মার্চেন্টের জন্য উপযুক্ত।
CPS এবং CPL মডেলগুলোতে সাধারণত উচ্চ কমিশন পাওয়া যায়, তবে তা নির্ভর করে সফল বিক্রয় বা নির্দিষ্ট অ্যাকশনের উপর।
CPC এবং CPM মডেলগুলোতে তুলনামূলক কম ঝুঁকি থাকে, তবে আয় সাধারণত কম হয়।
Recurring Commissions এবং Two-Tier প্রোগ্রামগুলো বেশি লাভজনক হতে পারে, তবে সফল নেটওয়ার্ক বা গ্রাহক ভিত্তি তৈরি করতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য কত পারসেন্ট কমিশন দেওয়া হয়?
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কমিশন নির্ভর করে বিভিন্ন ফ্যাক্টরের উপর। দেশ, অঞ্চল, ব্যবহারকারীর পরিমাণ কোয়ালিটি ইত্যাদির উপর। সাধারণত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কমিশন ৫% থেকে ৩০ পারসেন্ট পর্যন্ত হয়ে থাকে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ কি কি টুলস ব্যবহার করা হয়?
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে সফল হতে হলে বিভিন্ন টুলসের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কিছু জনপ্রিয় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং টুলস উল্লেখ করা হলো:
১. Google Analytics:
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং টুলস এর মধ্যে গুগল অ্যানালিটিক্স খুব কার্যকরী একটি টুল। ওয়েবসাইটের ট্রাফিক, ব্যবহারকারীর আচরণ এবং কনভার্সন ট্র্যাক করতে গুগল অ্যানালিটিক্স ব্যবহৃত হয়।
২. SEMrush:
SEO এবং কীওয়ার্ড কীওয়ার্ড গবেষণার জন্য বহুল ব্যবহৃত টুল। SEMrush টুল ব্যবহার করে আপনি সহজেই আপনার প্রতিযোগীদের কন্টেন্ট বিশ্লেষণ করতে পারবেন ও অ্যাফিলিয়েট কনটেন্ট উন্নত করতে পারবেন।
৩. ThirstyAffiliates:
অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক ম্যানেজমেন্ট এবং ক্লোকিং করার জন্য একটি জনপ্রিয় টুল।
৪. Ahrefs:
ব্যাকলিঙ্ক বিশ্লেষণ এবং প্রতিযোগিতামূলক কীওয়ার্ড গবেষণার জন্য Ahrefs ব্লগারদের কাছে অনেক জনপ্রিয়।
৫. ConvertKit:
ইমেইল মার্কেটিং এবং ফানেল তৈরির জন্য অত্যন্ত কার্যকরী টুল।
এগুলো ছাড়াও Pretty Links, CJ Affiliate, এবং ClickBank-এর মতো অন্যান্য টুলসও ব্যবহার করা হয়।