কন্টেন্ট মার্কেটিং কি?
কন্টেন্ট মার্কেটিং হচ্ছে লিখিত বা ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করা যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্র্যান্ডের প্রচারণা, গ্রাহকদের মাঝে ব্র্যান্ড সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করা এবং সর্বোপরি বিক্রয় বৃদ্ধি করা। এসব কন্টেন্টের মধ্যে রয়েছে ব্লগ পোস্ট, ইবুক, ইনফোগ্রাফিক তৈরি, ওয়েব পেজ, ভিডিও ইত্যাদি।
কন্টেন্ট মার্কেটিং আরেকটা উদ্দেশ্য হচ্ছে টার্গেট গ্রাহকরা যখন কোন দরকারি তথ্য খুঁজেন বা সমস্যার সম্মুখিন হোন তখন যেন তিনি প্রয়োজনীয় বিষয় খুঁজে পান বা সমস্যার সমাধান পান। যেহেতু আপনার কাছে তারা বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পাচ্ছে বা জানার পিপাসা মিটছে, এর ফলে আপনার ব্র্যান্ডের প্রতি তাদের আকর্ষণ বাড়বে এটাকে ব্র্যান্ড সচেতনতা বলে।
সুতরাং এভাবে বলা যায়, কন্টেন্ট মার্কেটিং হচ্ছে কন্টেন্ট নিয়ে পরিকল্পনা করা এবং কন্টেন্ট তৈরি করে সম্ভাব্য গ্রাহকদের টার্গেট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ব্লগ, ওয়েবসাইট, পোডকাস্ট প্রেস রিলিস, পত্রিকা এবং অন্যান্য মাধ্যম ব্যবহার করে প্রচার করা।
কন্টেন্ট মার্কেটিং কেন প্রয়োজনীয়?
১. মানুষকে সহজে প্রভাবিত করা যায়
আপনি কি জানেন বিজ্ঞাপন এর প্রভাব দিন দিন কমে যাচ্ছে? বর্তমানে ২৯০ মিলিয়ন মানুষ এড ব্লকার ব্যবহার করছেন যাতে তাদের সামনে কোন বিজ্ঞাপন না আসে।
Content Marketing Institute এর এক রিসার্চে দেখা গেছে ৭০% মানুষ কোন পণ্য কেনার আগে সেটা নিয়ে ভাল করে জেনে নেয়। এক্ষেত্রে ইন্টারনেটে থাকা সম্পর্কিত কন্টেন্ট থেকে তারা ধারণা নিয়ে থাকে।
পেইড বিজ্ঞাপন বা কোল্ড মেইল এসবের চেয়ে বর্তমানে কন্টেন্ট মার্কেটিং অত্যন্ত কার্যকর একটি মার্কেটিং কৌশল। যেহেতু এই ধরণের কন্টেন্ট অনেক তথ্যবহুল থাকে তাই এগুলো সার্চ ইঞ্জিনেও র্যাংকিং এ ভাল পজিশনে থাকে।
ব্যবকারীরা যখন এসব কন্টেন্ট এসব থেকে তাদের জানার পিপাসা মেটায় তখন স্বাভাবিকভাবেই কন্টেন্ট ক্রিয়েটর এর প্রতি তাদের বিশ্বাস জন্মায় এবং তাদের কথায় প্রভাবিত হয়।
২. কম খরচে ভাল ফল পাওয়া যায়
Demand Metric দেখিয়েছে যে কন্টেন্ট মার্কেটিং আউটবাউন্ড মার্কেটিং এর চেয়ে ৩ গুণ বেশি বিক্রয় বাড়াতে পারে এবং খরচ গড়ে ৬২% কম হয়।
স্বাভাবিকভাবেই কন্টেন্ট তৈরি করতে পেইড বিজ্ঞাপন এর চেয়ে অনেক কম খরচ হয়ে থাকে। তবে সঠিক পরিকল্পনা এবং গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী তথ্যবহুল কন্টেন্ট তৈরি করতে পারা হচ্ছে চ্যালেঞ্জের বিষয়। আপনি যদি মানুষের চাহিদা অনুযায়ী কন্টেন্ট তৈরি করতে পারেন তাহলে প্রচুর ট্রাফিক পাবেন এবং বিক্রয়ের পরিমাণ বাড়বে।
৩. ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি
এই ধরণের মার্কেটিং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে গ্রাহকদের জন্য মানসম্মত ও তথ্যবহুল কন্টেন্ট তৈরি করে সেই কন্টেন্টের ভেতর নিজস্ব ব্র্যান্ডের বিষয়গুলো এমনভাবে প্রচার করা যাতে গ্রাহকরা আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে জানতে পারে এবং আগ্রহী হয়ে উঠে।
মনে করুন, আপনার একটি ফাইনান্সিয়াল এডভাইসরি একটা প্রতিষ্ঠান আছে। আপনার সার্ভিস হচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বিনিয়োগ পরিকল্পনা করা এবং বাস্তবায়নে সাহায্য করা।
তাহলে আপনার কাজ কি হবে? আপনি নিয়মিত ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ইত্যাদি নিয়ে কন্টেন্ট তৈরি করবেন। এসব কন্টেন্ট যদি তথ্যবহুল এবং মানসম্মত হয় তাহলে দেখবেন ধীরে ধীরে আপনার শ্রোতার সংখ্যা বাড়তে থাকবে।
নিয়মিত আপনার ওয়েবসাইটে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কন্টেন্ট পাবলিশ করলে আপনার যেমন পাঠক শ্রেণি বেড়ে যাবে তার পাশাপাশি আপনার ব্র্যান্ডের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে।
আরও পড়ুন: ইমেইল মার্কেটিং এর সংজ্ঞা টুলস সুবিধা এবং শুরু করার গাইডলাইন।
কন্টেন্ট মার্কেটিং এর প্রকারভেদ
কন্টেন্ট মার্কেটিং বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। নিচে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ধরণগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
অনলাইন কন্টেন্ট মার্কেটিং
যখন আপনি কোন কন্টেন্ট অনলাইনে প্রকাশ করেন তখন সেটাকে অনলাইন কন্টেন্ট মার্কেটিং বলে থাকে। অনলাইন বলতে বিশেষ করে ওয়েবসাইটের কথা বুঝানো হয়েছে।
আপনি যদি নিয়মিত ওয়েবসাইটে ভাল ভাল কন্টেন্ট প্রকাশ করেন তাহলে গুগলও আপনাকে তার সার্চ পেজে ( (SERP) প্রাধান্য দিবে। এর ফলে আপনার ভিজিটরের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকবে।
সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্ট মার্কেটিং
ফেসবুক, টিকটক, টুইটার(X), পিন্টারেস্ট (Pinterest), লিংকডইন ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে ছবি, ভিডিও, রিলস বা লাইভের মাধ্যমে কন্টেন্ট প্রচার করা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্ট মার্কেটিং।
ইনফোগ্রাফিক কন্টেন্ট মার্কেটিং
যখন গ্রাফিক ফরম্যাটে কন্টেন্ট, ছবি, এবং তথ্য উপস্থাপনা করা হয় তাকে ইনফোগ্রাফিক বলে। যেহেতু ইনফোগ্রাফিক এ অনেক কথা অল্প শব্দে প্রকাশ করা হয় এবং পরিষ্কার ছবি ব্যবহার করা হয় তাই এটি সহজেই মানুষকে আকর্ষণ করতে পারে।
ব্লগ কন্টেন্ট মার্কেটিং
কন্টেন্ট মার্কেটিং যেসব মাধ্যম ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে ব্লগ হচ্ছে অন্যতম শক্তিশালী মাধ্যম। ব্লগের মাধ্যমে আপনি আপনার কন্টেন্টগুলো খুব সহজেই সম্ভাব্য গ্রাহককের সামনে উপস্থাপন করতে পারবেন।
ব্লগে সবকিছু সুন্দর করে সাজানো থাকে। ব্লগে যেভাবে বিভিন্ন ফিচার যুক্ত করে আপনি একটি কন্টেন্ট তৈরি করতে পারবেন তা অন্য কোন মাধ্যমে সম্ভব নয়। এজন্য ব্লগিংকে কন্টেন্ট মার্কেটিং এর সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম বলা হয়। ব্লগের মাধ্যমে আপনি মার্কেটিং এর পাশাপাশি আপনি বিভিন্নভাবে ব্লগ থেকে আয় করতে পারবেন।
পডকাস্ট কন্টেন্ট মার্কেটিং
পডকাস্ট হচ্ছে অডিও স্ট্রিমিং। একজন ব্যক্তি কথা বলেন অন্যরা শুনেন। আবার দুই বা ততোধিক মানুষ একসাথে কথা বলে পডকাস্ট করতে পারে। এক পরিসংখ্যান দেখা গেছে ২০২৫ সালের মধ্যে পডকাস্ট এর শ্রোতার সংখ্যা ৭১ মিলিয়নে পৌঁছাবে।
পডকাস্ট এর মাধ্যমে ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি করা কমন একটি বিষয়। সিরিজ পডকাস্ট, গেস্ট পডকাস্ট এসবের মাধ্যমে গ্রাহকদের সহজেই ব্র্যান্ডের প্রতি মনযোগ বাড়ানো যায়।
ভিডিও কন্টেন্ট মার্কেটিং
Wyzowl research এর তথ্য মতে বর্তমানে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৯১% ভিডিও এর মাধ্যমে মার্কেটিং করছে। এর বড় কারণ হচ্ছে মানুষ অন্য কন্টেন্ট এর চেয়ে ভিডিও দেখতে বেশি পছন্দ করে।
ভিডিও তৈরি করার মাধ্যমে আপনি শ্রোতাদের সাথে সহজেই শক্তিশালী সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবেন এবং এর মাধ্যমে পণ্য প্রচার ও বিক্রয় বাড়াতে সক্ষম হবেন।
পেইড এড কন্টেন্ট মার্কেটিং
বিজ্ঞাপনের সুবিধা হচ্ছে এর মাধ্যমে দ্রুত বিশাল পরিমাণ মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। আপনি বিভিন্ন প্লাটফর্ম এ বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, গুগল, ব্যানার এড, ট্র্যাডিশনাল মাধ্যম যেমন টেলিভিশন, পত্রিকা ইত্যাদি।
আরও পড়ুন: সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কি? কিভাবে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করা হয়?
কন্টেন্ট মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে?
কন্টেন্ট মার্কেটাররা আকর্ষণীয় গল্প এবং মানুষের উপকার হয় এমন কন্টেন্ট তৈরি করার মাধ্যমে সম্ভাব্য গ্রাহক তৈরি করে থাকে। তারা কন্টেন্ট চ্যানেল ব্যবহার করে অনুসারি তৈরি করতে চায় যাতে তারা তার বিশ্বস্ত গ্রাহকে পরিণত হয়।
কন্টেন্ট মার্কেটিং এমন একটি মার্কেটিং কৌশল যার মাধ্যমে মানুষের একটি ক্রয় প্রক্রিয়ার মাঝে যেসব তথ্যগত বিষয় আসে সেগুলো বিনামূল্যে মানুষকে দিয়ে থাকে।
একজন ক্রেতা কোন কিছু ক্রয় করার আগে সে পণ্য নিয়ে অনেক কিছু জেনে তারপর সে ক্রয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। এখানে সে কয়েকটা ধাপ পার হয়ে তারপর ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেয়।
এক্ষেত্রে মার্কেটাররা ক্রেতাদের একটি সেলস ফানেল তৈরি করে। এই ফানেল ৩ টি ধাপে বিভক্ত। নিচে ধাপগুলো নিয়ে আলোচনা হলোঃ
ফানেলের প্রথম ধাপ
এই ধাপে গ্রাহকদের ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়। এই ধাপে এমন ব্যক্তিদের টার্গেট করা হয় যারা কোন সমস্যায় আছে এবং সমাধানের পথ খুঁজছে।
যেহেতু আপনি অনেক মানুষকে টার্গেট করে কাজ করবেন তাই আপনাকে এমন সমস্যার সমাধান দিতে হবে যেগুলোর সমাধান বেশিরভাগ মানুষ খুঁজে। অর্থাৎ মানুষের কমন প্রশ্নের উত্তর নিয়ে কাজ করতে হবে।
আপনি যখন মানুষের কমন সমস্যার সমাধান নিয়ে কাজ করতে থাকবেন তখন আপনার সার্ভিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়তে থাকবে। এটাই হচ্ছে আপনার সুযোগ।
আপনাকে এমনভাবে কন্টেন্ট কৌশল ঠিক করতে হবে যা মানুষের জানার পিপাসা মেটানোর পাশাপাশি ব্যবসার লক্ষ্য অর্জন করতে সাহায্য করবে।
ফানেলের প্রথম ধাপে আপনি যেসব বিষয় নিয়ে কাজ করবেন সেগুলো হচ্ছেঃ
- ব্লগ পোস্ট
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পোস্ট
- পডকাস্ট
- ইনফোগ্রাফিকস,
- ইবুক
- ভিডিও
- সেমিনার ইত্যাদি
ফানেলের মাঝামাঝি ধাপ
প্রথম ধাপে আপনার বিভিন্ন কন্টেন্ট দেখে শ্রোতাদের মাঝে আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে একটি সচেতনতা তৈরি হবে। তারা আপনার পণ্য নিয়ে চিন্তা করা শুরু করবে।
তারা আপনার পণ্য দেখার জন্য আপনার ওয়েবসাইটে ঘুরে যাবে, নিউজলেটারে সাইন আপ করবে এবং অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার সাথে যুক্ত হবে।
এর ফলে এটা প্রমাণিত হয় আপনার ব্র্যান্ডের প্রতি তাদের আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে। এখন আপনার কাজ হচ্ছে আপনার তাদের বিশ্বাস অর্জন করা।
এই পর্যায়ে প্রথম দিকেই আপনার পণ্য ক্রয় করার জন্য অফার করবেন না। আপনাকে তাদের আচরণ পরিবর্তন করার চেষ্টা করতে হবে। এজন্য আপনাকে যা করতে হবে;
- পাঠকদের ইমেইল পাঠাতে হবে,
- আপনার পণ্যের স্যাম্পল দেখাতে হবে,
- গ্রাহকদের উদ্দেশ্য করে দীর্ঘ ভিডিও তৈরি করতে হবে,
- তাদেরকে আরও বেশি আগ্রহী করে তোলার জন্য আপনার পণ্যের সুযোগ সুবিধা বর্ণনা করে ব্লগ পোস্ট তৈরি করতে হবে,
- সেমিনার বা প্রশ্ন উত্তর পর্ব আয়োজন করতে হবে।
ফানেলের সর্বশেষ ধাপ
এই ধাপের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সম্ভাব্য গ্রাহককে প্রকৃত গ্রাহকে পরিণত করা। ফানেলের প্রথম দুইধাপে ক্রেতারা আপনার ব্যবসা এবং পণ্য সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। তারা এখন আপনার পণ্য কেনার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে চিন্তা করা শুরু করে দিয়েছে।
এই পর্যায়ে গ্রাহকদের আপনার পণ্য পরীক্ষামূলক ব্যবহার করা, দাম সম্পর্কে ধারণা দেওয়া এবং ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে।
এমনভাবে কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে যেন গ্রাহকরা মনে করে তাদের বর্তমান সমস্যা সমাধানের জন্য আপনার পণ্যটিই ব্যবহার করতে হবে। এজন্য আপনাকে যা করতে হবে,
- ব্যক্তি বিশেষে আলাদা মেইল করতে হবে,
- গ্রাহকদের রিভিউ শেয়ার করতে হবে,
- কেস স্টাডি,
- গ্রাহকদের প্রাইসিং পেজে নিয়ে যেতে হবে,
- তুলনা করে ব্লগ পোস্ট তৈরি করতে হবে,
- পণ্য ব্যবহার বিধি নিয়ে ভিডিও তৈরি করতে হবে,
- পুনঃমার্কেটিং ক্যাম্পেইন করতে হবে,
- এমনভাবে কল টু অ্যাকশন তৈরি করতে হবে যাতে গ্রাহকরা তাৎক্ষণিক ক্রয় করতে উৎসাহিত হয়।
আরও পড়ুন: ২০২৫ সালে মোবাইল দিয়ে ডিজিটাল মার্কেটিং করার কৌশল
কন্টেন্ট মার্কেটিং কৌশল (কিভাবে কন্টেন্ট মার্কেটিং শুরু করবেন)
কন্টেন্ট মার্কেটিং শুরু করার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন,
১. টার্গেট গ্রাহক খুঁজে বের করা,
২. লক্ষ্য নির্ধারণ করা,
৩. কন্টেন্ট ধরণ এবং কন্টেন্ট ফরম্যাট নির্ধারণ করা,
৪. কন্টেন্ট চ্যানেল নির্বাচন করা,
৫. বাজেট নির্ধারণ
৬. কন্টেন্ট তৈরি ও প্রচার করা,
৭. পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ
১. টার্গেট গ্রাহক খুঁজে বের করা
প্রথমেই আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি কাদের টার্গেট করে মার্কেটিং করবেন। টার্গেট গ্রাহক নির্ধারণ না করে আপনি যদি বিশাল সংখ্যক মানুষকে উদ্দেশ্য করে কন্টেন্ট প্রচার করতে থাকেন তাহলে আপনার লক্ষ্য অর্জন করা কঠিন হয়ে যাবে।
আপনি যত বেশি সুনির্দিষ্ট গ্রুপকে টার্গেট করে মার্কেটিং করবেন তত বেশি আপনার জন্য ভাল হবে। কারণ সবাই আপনার ক্লায়েন্ট হবে এটা ভাবার কোন অবকাশ নেই। দিন শেষে খুবই সুনির্দিষ্ট একটা অংশ আপনার ক্লায়েন্ট হবে। তারাই আপনার পণ্য কিনবে। তাদেরকে নিয়ে একটি টেকসই কমিউনিটি গড়ুন।
টার্গেট গ্রাহক জন্য উপযুক্ত কন্টেন্ট তৈরি করার জন্য কিছু প্রশ্নের উত্তর বের করা প্রয়োজন, যেমন:
তারা আপনার কাছে কোন বিষয়ে সাহায্য চায়?
তারা তাদের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে কোন কোন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে?
তার কেন আপনার পণ্য ক্রয় করবে?
তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য আপনি কি করতে পারবেন?
২. লক্ষ্য নির্ধারণ করা
লক্ষ্য নির্ধারণ করা যেকোনো কাজে সফল হওয়ার পূর্বশর্ত। লক্ষ্যহীন চলা নাবিকবিহীন জাহাজের মত।
লক্ষ্য হতে হবে সুনির্দিষ্ট এবং আপনার ব্যবসার সাথে সংগতিপূর্ণ। যেমন ধরে নিলাম আপনি একটি অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। আপনার টার্গেট গ্রাহক হচ্ছে ছোট এবং মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
আপনার প্রাথমিক লক্ষ্য হতে পারে ছোট ব্যবসায়ীদের গ্রাহক হিসেবে পরিণত করা। যখন আপনার প্রাথমিক লক্ষ্য পূরণ হবে তখন আপনার লক্ষ্য হবে মাঝারি ব্যবসায়ীদের আপনার গ্রাহকে পরিণত করা। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আপনাকে কন্টেন্ট মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি ঠিক করতে হবে।
তবে কন্টেন্ট মার্কেটিং এর মূল লক্ষ্যগুলো হচ্ছে;
ব্র্যান্ড সচেতনতা সৃষ্টি: এটি করার জন্য ওয়েবসাইটে ট্রাফিক নিয়ে আসতে হবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনুসারি বাড়াতে হবে, সাবস্ক্রাইবার বাড়াতে হবে ইত্যাদি।
বিশ্বস্ত গ্রাহক তৈরি করা: এর ফলে একজন গ্রাহক বার বার আপনার কাছ থেকে কেনার জন্য আসবে। বিশ্বস্ত গ্রাহক তৈরি করার জন্য নিয়মিত প্রচারণা, প্রডাক্ট রিভিউ তৈরি করা, গ্রাহকরা যাতে তাদের পরিচিতদের রেফার করে এজন্য তাদের উৎসাহিত করতে হবে।
রেভিনিউ: বিক্রয় বাড়ানো একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। ওয়েবসাইটে প্রতিদিনের ভিজিটরের পরিমাণ এবং বিক্রয় এর পরিমাণ দেখে আপনি রেভেনিউ পারফর্মেন্স যাচাই করতে পারবেন।
গ্রাহকদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো: কন্টেন্ট মার্কেটিং এর আরেকটি লক্ষ্য হতে পারে গ্রাহকদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো। যখন দেখবেন গ্রাহকরা আপনার পোস্টে লাইক, শেয়ার কমেন্ট করছে তখন বুঝবেন তাদের সম্পৃক্ততা বাড়ছে।
কৌশলগত অংশীদার করা: এর মানে হচ্ছে এমনভাবে গ্রাহকদের সাথে যুক্ত হওয়া যা দেখে মনে হবে গ্রাহকরা হচ্ছে কৌশলগত অংশীদার।
৩. কন্টেন্ট ধরণ এবং কন্টেন্ট ফরম্যাট নির্ধারণ করা
আপনি কোন ধরণের কন্টেন্ট প্রচার করবেন এবং কোন ফরম্যাটে সেটা আপনাকে ঠিক করতে হবে। ধরণ হচ্ছে ক্যাটাগরি যেমন আপনি ব্লগ পোস্ট করেন সেটাকে আপনি কন্টেন্টের ধরণ বলতে পারেন।
আর ফরম্যাট হচ্ছে আপনি কিভাবে মানুষের সামনে উপস্থাপনা করছেন সেটাকে বুঝায়। যেমন আপনি ব্লগ পোস্টে রিভিউ আর্টিকেল লিখছেন সেটাকে বলা যায় কন্টেন্ট ফরম্যাট।
৪. কন্টেন্ট চ্যানেল নির্বাচন করা
কন্টেন্ট প্রচার করার চ্যানেল নিয়ে উপরে ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি। আপনি ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করলে ইউটিউব হচ্ছে পারফেক্ট, আবার ভাল লিখতে পারলে ব্লগ হচ্ছে আপনার জন্য উপযুক্ত মাধ্যম। আবার ফেসবুক, টিকটক, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদি মাধ্যমে যদি আপনার অনেক অনুসারী থাকে তাহলে আপনি সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
আপনার যদি লোকবল বেশি থাকে তাহলে একসাথে অনেকগুলো চ্যানেল ব্যবহার করে মার্কেটিং করতে পারেন।
৫. বাজেট নির্ধারণ করা
আপনি কি ধরণের কন্টেন্ট তৈরি করবেন এবং কোন মাধ্যম ব্যবহার করে মার্কেটিং করবেন তার উপর নির্ভর করবে আপনার বাজেট কি রকম হবে। বাজেট নির্ধারণ এর ক্ষেত্রে আপনাকে যে বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে সেগুলো হচ্ছে :
কন্টেন্ট তৈরি করার জন্য সফটওয়্যার, ডিভাইস বা সার্ভিস ক্রয়। যেমন : এডোবি ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, ক্যানভা (Canva) এর সাবস্ক্রিপশন ক্রয়, ভাল ক্যামেরা, কম্পিউটার ক্রয়, Chatgpt এর মতো এআই সার্ভিস ক্রয় ইত্যাদি।
কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হায়ার করা (যদি আপনি নিজে না করেন),
বিজ্ঞাপন প্রদানের খরচ,
ডিজিটাল মার্কেটিং টুল এর ব্যবহার ইত্যাদি।
৬. কন্টেন্ট তৈরি এবং প্রচার করা
এমনভাবে কন্টেন্ট তৈরি করুন যা আপনার টার্গেট গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে পারে এবং তারা ক্রয় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়।
কন্টেন্ট প্রচার করার জন্য একটা শিডিউল তৈরি করুন। সেই শিডিউল অনুযায়ী নিয়মিত কন্টেন্ট পাবলিশ করুন। নিয়মিত কন্টেন্ট পাবলিশ করলে গ্রাহকের এনগেজমেন্ট দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
শিরোনাম ভিজটর আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে অনেক ভূমিকা পালন করে। তাই দৃষ্টি আকর্ষক শিরোনাম ব্যবহার করুন, লেটেস্ট ট্রেন্ডি টপিক নিয়ে কন্টেন্ট তৈরি করুন।
সার্চ রেজাল্টে ভাল পারফর্ম করতে হলে এসইও এর বিকল্প নেই। তাই কন্টেন্ট তৈরি করার সময় এসইও সম্বৃদ্ধ কন্টেন্ট তৈরি করুন।
কন্টেন্ট প্রচার করার জন্য ইমেইল মার্কেটিং করুন, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং করুন, এবং গুগল এডস ফেসবুক এডস ব্যবহার করুন।
৭. পারফরম্যান্স ট্র্যাকিং এবং বিশ্লেষণ করুন
সর্বশেষ ধাপে আপনার কাজ হচ্ছে পারফরম্যান্স ট্র্যাকিং এবং বিশ্লেষণ করা। এই পর্যায়ে আপনাকে বের করতে হবে কন্টেন্ট মার্কেটিং এর কোন স্ট্র্যাটেজি ভাল কাজ করছে আর কোনটা করছে না।
যে স্ট্র্যাটেজি ভাল কাজ করবে সেটাকে আরো ভাল করার চেষ্টা করত্ব হবে। আর যে স্ট্র্যাটেজি ভাল করবে না সেটি বাদ দিতে হবে নাহলে সংশোধন করতে হবে।
গুগল অ্যানালিটিক্স, গুগল সার্চ কন্সোল, ফেসবুক প্রফেশনাল ড্যাশবোর্ড, Sprout Socia, HubSpot Marketing Analytics Software, SEMrush ইত্যাদি টুল ব্যবহার করে আপনি আপনার পারফরম্যান্স ট্র্যাক করতে পারবেন এবং বিশ্লেষণ করতে পারবেন।
পরিশেষে
কন্টেন্ট মার্কেটিং বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এর উপাদানগুলোর মধ্যে খুবই জনপ্রিয় এবং কার্যকরি উপাদান।বিজ্ঞাপন দেখার প্রতি মানুষের অনীহা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে দিনদিন কন্টেন্ট মার্কেটিং এর গুরুত্ব বেড়েই চলছে। তাই আধুনিক এই প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসার জগতে টিকে থাকতে হলে আপনাকেও এই মার্কেটিং কৌশল অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে।