HomeDigital Marketingইমেইল মার্কেটিং এর সংজ্ঞা টুলস সুবিধা এবং শুরু করার গাইডলাইন।

ইমেইল মার্কেটিং এর সংজ্ঞা টুলস সুবিধা এবং শুরু করার গাইডলাইন।

ইমেইল মার্কেটিং কি?

ইমেইল হচ্ছে ইলেক্ট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বার্তা আদান প্রদান করা। ইমেইলের মাধ্যমে দ্রুত এবং খুব কম খরচে যোগাযোগ করা যায়। আর ইমেইল মার্কেটিং হলো একটি ডিজিটাল মার্কেটিং কৌশল, যার মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে ইমেইলের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা প্রচার করা হয়।

এটি কেবল পণ্য বিক্রির উদ্দেশ্যে নয়, বরং গ্রাহকদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি, ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি ও গ্রাহকদের বিভিন্ন তথ্য যেমন নতুন পণ্য বা সেবা সম্পর্কে অবহিতকরণ, ডিসকাউন্ট অফার ইত্যাদি জানানোসহ বহু কাজে ব্যবহৃত হয়।

ইমেইল মার্কেটিং এর প্রকারভেদ 

বিভিন্ন উদ্দ্যেশ্য এবং কার্যক্রমের ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরণের ইমেইল মার্কেটিং এর প্রকারভেদ রয়েছে, যেমন:

১. স্বাগতম ইমেইল (Welcome emails)

এই ধরণের ইমেইল এর মাধ্যমে গ্রাহকদের পণ্য বা সেবা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে উৎসাহিত করা হয়। এর মাধ্যমে সম্ভাব্য গ্রাহককে কিছু অফার দিয়ে গ্রাহকে পরিণত করার চেষ্টা করা হয়।

২. নিউজলেটার ইমেইল (Newsletter emails)

বর্তমানে জনপ্রিয় এই ইমেইল ব্যবহার করে গ্রাহকদের নতুন পণ্য বা সেবা সম্পর্কে জানানো হয়। ইমেলে আর্টিকেল, ব্লগ বা গ্রাহকদের রিভিউ সম্পর্কে পড়তে উৎসাহিত করা হয় ।

৩. লিড জেনারেশনের জন্য সিরিজ ইমেইল 

এর ধরণের মার্কেটিং এ নির্দিষ্ট গ্রাহককে সিরিজ ইমেল পাঠানো হয়। এক্ষেত্রে ওই গ্রাহকের পছন্দকে অগ্রাধিকার দিয়ে পণ্য বা সেবা সম্পর্কিত অতিরিক্ত তথ্য প্রদান করে তাকে ক্রয় করতে উৎসাহিত করা হয়।

৪. নিশ্চিতকরণ ইমেইল (Confirmation emails)

এই মেইলের মাধ্যমে গ্রাহককে নিশ্চিত করা হয় যে তার ক্রয় করা সম্পন্ন হয়েছে বা কোন সাইন আপ পূরণ করে থাকলে সেটি সফলভাবে জমা হয়েছে। অর্থাৎ গ্রাহক এই মেইলের মাধ্যমে তাদের ক্রয় বা সাইন আপের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারে ।

৫. ডেডিকেটেড ইমেইল (Dedicated emails)

আপনি যদি সম্প্রতি ক্রয় করা কোন গ্রাহক বা নতুন গ্রাহক বা আপনার ইমেইল লিস্টের সক্রিয় না এমন গ্রাহককে অফার দিয়ে কোন মেইল পাঠান তখন তাকে ডেডিকেটেড ইমেইল বলে। যেমন আমি সম্প্রতি envanto market থেকে থিম ক্রয় করেছি এখন তারা আমাকে আবার ক্রয় করতে উৎসাহিত করার জন্য ৫০% ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রির অফার দিচ্ছে ।

৬. সার্ভে বা রিভিউ ইমেইল 

এই ধরণের মেইলের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে ব্যবহৃত পণ্য বা সেবা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা এবং মতামত জানতে চাওয়া হয়। এছাড়া তাদের কাছে কিছু প্রশ্ন করা যার মাধ্যমে পণ্য বা সেবার মান উন্নয়ন করা হয়।

ইমেইল মার্কেটিং এর টুলস কি কি?

ইমেইল মার্কেটিং টুল

ইমেইল মার্কেটিং কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ধরণের টুলস বা সফটওয়্যার রয়েছে। নিচে জনপ্রিয় কিছু টুলসের নাম ও বৈশিষ্ট্য দেওয়া হলো:

১. Mailchimp

এটি একটি জনপ্রিয় ইমেইল মার্কেটিং টুল। Mailchimp এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে ছোট থেকে শুরু করে বড় ধরণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা অনলাইন স্টোর এই টুল ব্যবহার করে তাদের ইমেইল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন চালাতে পারবে। এদের স্বয়ংক্রিয় মেসেজিং সিস্টেম ব্যবহার করে আপনি কোন কিছু না করেই একসাথে অনেক গ্রাহকের কাছে মেসেজ পাঠাতে পারবেন ।

ইমেইল ট্র্যাকিং ও অ্যানালিটিক্স সুবিধা পাবেন। ফ্রি প্ল্যানে ৫০০ সাবস্ক্রাইবার পর্যন্ত সাপোর্ট পাবেন এবং মাসে ১ হাজার ইমেইল পাঠাতে পারবেন।

২. Constant Contact

ইমেইল মার্কেটিং এর টুলস এর মধ্যে constant contact ক্যাম্পেইন ম্যানেজমেন্টে অনেক দক্ষ। এখানে আপনি অটোমেশন ও টেম্পলেট সুবিধা পাবেন।

এটি রিয়েল-টাইম পারফরম্যান্স রিপোর্ট প্রদান করে থাকে যার ফলে আপনি আপনার ক্যাম্পেইন ডেটা বিশ্লেষণ করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। Constant Contact এর প্রাইসিং শুরু হয় মাসে ১২ ডলার থেকে, আবার ওদের ৬০ দিনের ফ্রি ট্রায়ালের সুবিধাও আছে।

৩. Brevo

Brevo হচ্ছে এমন একটি ইমেইল মার্কেটিং টুল যার মাধ্যমে আপনি ইমেইল, এসএমএস, চ্যাট, নিউজলেটার, ট্রান্সেকশনাল ইমেইল, মার্কেটিং অটোমেশন, এসএমটিপি (SMTP) ইত্যাদি ফিচার ব্যবহার করতে পারবেন।

এখানে আপনি ফ্রি টেমপ্লেট, প্লাগিন, উচ্চ ডেলিভারি রেট, ড্রেগ এন্ড ড্রপ (Drag & Drop) এডিটর, এডভান্সড অটোমেশন অপশন ইত্যাদি সুবিধা পাবেন। ফ্রি প্ল্যান ব্যবহার করে প্রতি দিন ৩০০ ইমেইল পাঠাতে পারবেন। এদের প্রাইসিং মাসে ৯ ডলার দিয়ে শুরু।

৪. GetResponse

ওয়েবিনার এবং ইমেইল ক্যাম্পেইন চালানোর জন্য GetResponse একটি আদর্শ ইমেইল মার্কেটিং টুল। ইমেইল অটোমেশন, সেলস ফানেল  ও ল্যান্ডিং পেজ তৈরির জন্য আপনি এটি ব্যবহার করতে পারেন। সব সাইজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এই টুল ব্যবহার করে তাদের মার্কেটিং কার্যক্রম চালাতে পারবে ।

৩০ দিনের ফ্রি ট্রায়ালের ব্যবস্থা আছে। ১৫. ৫৮ ডলার থেকে এদের প্রাইসিং শুরু।

৫. HubSpot Email Marketing

HubSpot CRM-এর সঙ্গে ইন্টিগ্রেটেড একটি ইমেইল মার্কেটিং টুল যার মাধ্যমে অটোমেটেড ও কাস্টমাইজড ইমেইল ক্যাম্পেইন চালানো যায়।

আপনি এই টুল ব্যবহার করে ডিটেইলড রিপোর্টিং এবং অ্যানালিটিক্স দেখতে পারবেন। এদের ইমেইল অটোমেশন ব্যবহার করে আপনি সহজেই ইমেইল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন চালাতে পারবেন।

ব্যবহারকারীদের জন্য ফ্রি প্ল্যান রয়েছে। এদের প্রাইসিং শুরু মাসে ১৫ ডলার দিয়ে।

৬. AWeber

এই টুল ব্যবহার করে টার্গেটেড গ্রাহকের কাছে আপনি অটোম্যাটিক সিরিজ মেসেজ পাঠাতে পারবেন। এর মাধ্যমে আপনি সহজেই অপ্ট ইন ফর্ম তৈরী করতে পারবেন এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে পারবেন । স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্লগে প্রকাশ করা পোস্ট গ্রাহকদের কাছে ইমেইলের মাধ্যমে প্রচার করা যায়।

পৃথিবী জুড়ে তাদের ১ লাখের উপর ছোট ব্যবসায়ী ক্লায়েন্ট আছে। তাদের

ব্যবহারকারীরা ফ্রি এবং পেইড দুইভাবেই AWeber ব্যবহার করার সুযোগ পাবে। ফ্রি প্ল্যানে সর্বোচ্চ ৫০০ কন্টাক্ট যুক্ত করা যায় এবং মাসে ৩ হাজার ইমেইল পাঠানো যায়।

৭. ActiveCampaign

এডভান্সড অটোমেশন সিস্টেম ব্যবহার করে আপনি সহজেই ইমেইল ক্যাম্পেইন চালাতে পারবেন।

ইমেইল পার্সোনালাইজেশন ও কাস্টমাইজেশন এর সুবিধাসম্পন্ন এবিং রিয়েল-টাইম গ্রাহক ইনসাইট ফিচার আছে।

ইমেইল মার্কেটিং টুল Activecampaign এর প্রাইসিং সিস্টেম একটু ভিন্ন ধরণের। এটি প্রতি সাবস্ক্রাইবার বা প্রতি ফিচার ব্যবহার অনুযায়ী প্রাইসিং নির্ধারণ করে থাকে । বর্তমানে ১০০ সাবস্ক্রাইবারের জন্য ২৯ ডলার ফি ধার্য করে থাকে ।

৮. Zoho Campaigns

Zoho CRM-এর সঙ্গে সংযুক্ত একটি টুলস। এর মাধ্যমে আপনি সহজেই মার্কেটিং ক্যাম্পেইন পরিকল্পনা এবং মনিটর করতে পারবেন । এদের অটোমেটেড ইমেইল মার্কেটিং ফিচার আপনার লিড জেনারেশনে সাহায্য করবে ।

আরও পড়ুন : কন্টেন্ট মার্কেটিং কি? কিভাবে কন্টেন্ট মার্কেটিং করে?

ইমেইল মার্কেটিং টুলস নির্বাচন করার সময় যা বিবেচনা করবেন?

ব্যবহারের সহজতা: একেক টুলের ব্যবহারের ধরণ একেক রকম। তাদের ড্যাশবোর্ড ইন্টারফেস সবকিছুতেই ভিন্নতা আছে। তাই আপনার জন্য যে টুলটির ব্যবহার সহজ মনে হবে সেই টুলটি নির্বাচন করতে পারেন ।

মূল্য: প্রত্যেকটা টুলের নিজস্ব মূল্যকাঠামো আছে। ফিচার অনুযায়ী দাম কম বেশি হতে পারে তাই আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী টুল কিনুন। অযথা বেশি খরচ করলে আপনি ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। আবার মূল্য অনুযায়ী ফিচার ব্যবহারের পরিমান ঠিক আছে কিনা সেটিও যাচাই করুন। এক্ষেত্রে প্যাকেজ কেনার আগে বাজারে মূল্য যাচাই করুন ।

অটোমেশন ফিচার: স্বয়ংক্রিয় ক্যাম্পেইন পরিচালনার সুবিধা আছে কিনা তা দেখে নিন। স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্যাম্পেইন পরিচালনা করার সুবিধা থাকলে আপনার অনেক সময় বেচে যাবে। গ্রাহকদের কাছেও আপনার কন্টেন্ট দ্রুত পৌঁছাতে পাবেন।

ইন্টিগ্রেশন: অন্যান্য সফটওয়্যারের সঙ্গে সংযোগ করার সুবিধা আছে কিনা দেখে নিন। ইন্টিগ্রেশন সুবিধা থাকলে আপনি এক প্লাটফর্মেই অনেক সুবিধা পেতে পারেন ।

রিপোর্টিং ও অ্যানালিটিক্স: ইমেইল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন চালানোর পর সেটি ভাল পারফর্ম করছে কিনা সেটি জানা যায় রিপোর্টিং  ও অ্যানালিটিক্স থেকে। তাই যে টুলের অ্যানালিটিক্স রিপোর্ট আপনার চাহিদা অনুযায়ী বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে সেই তুলে নির্বাচন করুন ।

ইমেইল মার্কেটিং এর ভবিষ্যত কেমন?

ইমেইল মার্কেটিং ভবিষ্যতেও একটি শক্তিশালী ও কার্যকর ডিজিটাল মার্কেটিং কৌশল হিসেবে টিকে থাকবে। আধুনিক প্রযুক্তি এবং কাস্টমাইজড মার্কেটিং কৌশলের কারণে এর গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্ট্যাটিস্টা এর রিপোর্ট অনুসারে ২০২৪ সাল থেকে ২০৩২ সালের মধ্যে ইমেইল মার্কেটিং এর রেভিনিউ বৃদ্ধি পাবে ২৮৭ শতাংশ।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ইমেইল মার্কেটিংকে আরও স্মার্ট ও স্বয়ংক্রিয় করে তুলছে। AI ব্যবহার করে একসাথে বিশাল পরিমান ডেটা বিশ্লেষণ করা যায় এবং প্রাপ্ত ফলাফল দেখে দ্রুত ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার শুরু হলেও ভবিষ্যতে এর ব্যবহার অনেক বাড়বে।

এছাড়া ভবিষ্যতে পার্সোনালাইজড মার্কেটিং, ইন্টারেক্টিভ ইমেইল (ভিডিও, ক্যারাউজেল ইমেজ, ক্লিকেবল বাটন), বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের ইন্টিগ্রেশন ইত্যাদির ব্যবহার বাড়বে।

আরও পড়ুনসোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কিভাবে করবেন? 

ইমেইল মার্কেটিং এর কি কি সুবিধা আছে?

Mailchimp এর এক স্ট্যাডিতে দেখা গেছে ৯৫ শতাংশ মার্কেটার বলেছেন ইমেইলের মাধ্যমে মার্কেটিং করে তাদের বিনিয়োগের বিপরীতে রিটার্ন (ROI) অনেক বেশি এসেছে ।

১০ জনের মধ্যে ৯ জন মার্কেটার বলেছেন ইমেইল মার্কেটিং তাদের সামগ্রীক ব্যবসায়ীক কৌশলের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

প্রতি ৫ জনের মধ্যে ৪ জন ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পছন্দ করেন ।

এই মার্কেটিং কৌশল জনপ্রিয় হওয়ার কারণ হচ্ছে এর মাধ্যমে আপনি বেশ কিছু সুবিধা পাবেন :

১. ব্যয় সাশ্রয়ী ও কার্যকর কৌশল 

মার্কেটিং বিভিন্ন ধরণের কৌশল আছে যার মধ্যে ইমেইলের মাধ্যমে মার্কেটিং করা সবচেয়ে ব্যয় সাশ্রয়ী পদ্ধতি।  খুব কম খরচে একসাথে বিশাল সংখ্যক মানুষের কাছে সহজেই পণ্য বা সেবা সম্পর্কে বার্তা পৌঁছানোর জন্য ইমেইলের বিকল্প খুব কম আছে ।

২. কাস্টমাইজেশন এবং পার্সোনালাইজেশন

এই মার্কেটিং এর বড় সুবিধা হচ্ছে আপনি ইমেইলকে কাস্টমাইজেশন করে ব্যক্তি বস বিশেষের জন্য আলাদা আলাদা কন্টেন্ট তৈরী করে পাঠাতে পারবেন। এর ফলে আপনার সেলস কনভার্সন বাড়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে । এছাড়া পার্সোনালাইজেশন এর কারণে ব্র্যান্ডের প্রতি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

৩. গ্রাহকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ

ইমেইল মার্কেটিং কৌশল ব্যবহার করে সহজেই দ্রুত সরাসরি গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানো যায়, এর ফলে গ্রাহকদের আচরণগত বিষয়গুলো সহজে ধরা যায়। গ্রাহকরা আপনার পণ্য বা সেবার প্রতি কতটুকু আগ্রহী সে ব্যাপারে তাৎক্ষণিক একটা ধারণা পাওয়া যায়।

৪. সাফল্য পরিমাপের সুযোগ 

বিভিন্নভাবে আপনি ইমেইল ক্যাম্পেইনের সাফল্য পরিমাপ করতে পারবেন যেমন ইমেইল খোলার হার, ক্লিক হার এবং কনভার্শন, লিড জেনারেশন ইত্যাদি ।

৫. গ্রাহক ধরে রাখার কৌশল

ইমেইল নিউজলেটার, অফার বা ব্যক্তিগত শুভেচ্ছা পাঠানোর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে গ্রাহকদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব। নিয়মিত গ্রাহকের কাছে পণ্য বা সার্ভিসের বিষয়ে বার্তা পাঠানোর ফলে গ্রাহকের আগ্রহ ধরে রাখা যায় এবং গ্রাহকও একসময় বিশ্বস্ত গ্রাহকে পরিণত হয়।

৬ . মাল্টিপারপাস ব্যবহার

ইমেইল মার্কেটিং শুধু পণ্য বিক্রির জন্য নয়, বরং ব্র্যান্ড সচেতনতা, গ্রাহক সেবা এবং ট্রাফিক বাড়ানোর জন্যও ব্যবহার করা হয়।

আরও পড়ুন : মোবাইল দিয়ে ডিজিটাল মার্কেটিং করার কৌশল 

কিভাবে ইমেইল মার্কেটিং শুরু করবেন?

ইমেইল মার্কেটিং শুরু করতে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে। সঠিক পরিকল্পনা, কৌশল এবং কার্যকর টুল ব্যবহার করলে এই মার্কেটিং কৌশল ব্যবহার করে  ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। নিচে ধাপে ধাপে নির্দেশনা দেওয়া হলো:

১. লক্ষ্য নির্ধারণ করুন

আপনার মার্কেটিংয়ের উদ্দেশ্য কী তা আগে থেকে ঠিক করুন। যেমন :

  • গ্রাহক সংগ্রহ করা।
  • পণ্য বা সেবা প্রচার করা।
  • ওয়েবসাইটে ট্রাফিক বৃদ্ধি করা।
  • গ্রাহকদের সঙ্গে টেকসই সম্পর্ক গড়ে তোলা।

২. ইমেইল লিস্ট তৈরি করুন

লক্ষ্য নির্ধারিত হয়ে গেলে সম্ভাব্য গ্রাহকদের একটি লিস্ট তৈরি কিরুন।

গ্রাহকদের সম্মতি নিন: ইমেইল সংগ্রহের সময় সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের অনুমতি নিন। কারণ অনুমতি ছাড়া যদি আপনি কারও ইমেইল সংগ্রহ করেন তাহলে সেটি নীতিবিরোধী হবে এবং সংশ্লিষ্ট গ্রাহক যদি দেখে আপনি অনুমতি ছাড়া তাদের ইমেইল সংগ্রহ করছেন তাহলে তারা আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।

লিড ক্যাপচার ফর্ম ব্যবহার করুন: মেইল সংগ্রহ করার জন্য ওয়েবসাইটে সাইন-আপ ফর্ম বা পপ-আপ ফর্ম ব্যবহার করুন। এসব ফর্মের মাধ্যমে পাঠকদের ইমেইলের মাধ্যমে সাইন আপ করার জন্য আহবান জানান ।

সাইন-আপ ফর্মটি আপনি ওয়েবসাইটের বিভিন্ন স্থানে রাখতে পারেন । হেডার বার, সাইড বার, টপ সাইড বার, পোস্টের নিচে বা ফুটার বাড়ে আপনি সাইন আপ ফর্ম প্রদর্শন করতে পারেন তাহলে পাঠকদের সহজেই আপনার সাইন আপ ফর্মে চোখ পড়বে এবং সাবস্ক্রাইবার বাড়ার সম্ভাবনা বাড়বে ।

ফ্রি অফার বা লিড ম্যাগনেট প্রদান করুন: ই-বুক, চেকলিস্ট বা ডিসকাউন্ট কুপন অফার করে ইমেইল সংগ্রহ করার চেষ্টা করুন। এই পদ্ধতিতে তুলনামূলক সহজেই ইমেইল সংগ্রহ করা যায়।

সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার: সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ধরণের পোস্টের মাধ্যমে ইমেইল লিস্ট বৃদ্ধি করুন।

৩. একটি ইমেইল মার্কেটিং টুল নির্বাচন করুন

ইমেইল ক্যাম্পেইন পরিচালনার জন্য একটি ইমেইল মার্কেটিং টুল প্রয়োজন। এসব টুল ব্যবহার করে ইমেইল পাঠানো, অটোমেশন সেটআপ এবং পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করা সহজ।

৪. ইমেইল কনটেন্ট তৈরি করুন

ইমেইলের কনটেন্ট হতে হবে আকর্ষণীয় ও কার্যকর। গ্রাহকরা বিরক্ত হয় এমন কন্টেন্ট তৈরি করবেন না।

বিষয়বস্তু ঠিক করুন: ইমেইলের বিষয়বস্তু গ্রাহকের প্রয়োজন অনুযায়ী তৈরি করুন। অর্থাৎ কোন গ্রাহকের যদি এসইও টুল প্রয়োজন হয় তাহলে তার জন্য বিষয়বস্তু হবে এসইও টুলকেন্দ্রিক। কারও প্রয়োজন যদি ফিটনেস ঠিক রাখা তাহলে তার বিষয়বস্তু হবে ফিটনেস বিষয়ক।

সাবজেক্ট লাইন আকর্ষণীয় করুন: সাবজেক্ট লাইনে এমন শব্দ ব্যবহার করুন যা সহজেই গ্রাহকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।

ইমেইল মার্কেটিং এ ছবির ব্যবহার

চোখ ধাধানো ডিজাইন ব্যবহার করুন: ইমেইল টেম্পলেট ব্যবহার করে চোখ ধাধানো ডিজাইন তৈরি করুন।

কল টু অ্যাকশন (CTA): কল টু অ্যাকশন বিক্রি বাড়াতে অনেক সাহায্য করে থাকে। আপনার ইমেইলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিন গ্রাহককে কী করতে হবে, যেমন: “এখনই কিনুন” বা “আরও জানুন”।

মোবাইল অপ্টিমাইজ করুন: যেহেতু বেশিরভাগ মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় কাজ মোবাইলেই সম্পন্ন করে থাকে তাই ইমেইল অবশ্যই মোবাইল ফ্রেন্ডলি হতে হবে।  পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ২৬ – ৭৮ % মানুষ তাদের মোবাইলে ইমেইল পড়ে থাকে । জেনজি (Gen Z) প্রজন্মের ৬৭ শতাংশই মোবাইলে তাদের ইমেইল খুলে দেখে । ৫০% মানুষ ইমেল মুছে ফেলে যদি দেখে সেটি মোবাইল অপটিমাইজ না।

৫. ইমেইল সেগমেন্টেশন করুন

গ্রাহকদের বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করুন, যাতে তাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক ইমেইল পাঠানো যায়।

বয়স, লিঙ্গ, এলাকা, পছন্দ বা ক্রয় ইতিহাস অনুযায়ী সেগমেন্ট তৈরি করুন।

সেগমেন্টেড ইমেইল পাঠালে ওপেন রেট এবং ক্লিক রেট অনেক বেশি হয়ে থাকে।

৬. ইমেইল পাঠানোর সময় নির্ধারণ করুন

ইমেইল পাঠানোর এমন একটি সময় নির্ধারণ করুন যখন মানুষ আপনার পাঠানো ইমেইলটি রিলাক্স নিয়ে পড়তে পারে।

গ্রাহকদের টাইমজোন অনুযায়ী ইমেইল পাঠান।

সাপ্তাহিক ছুটির আগের রাত বা ছুটির দিন সকালে ইমেইল পাঠানো অধিক কার্যকর।

৭. ইমেইল ক্যাম্পেইন পরিচালনা করুন ও ট্র্যাক করুন

নির্ধারিত সময়ে গ্রাহকদের ইমেইল পাঠান।

ইমেইল মার্কেটিং টুল রিপোর্ট দেখে বুঝার চেষ্টা করুন কোন কৌশল ভালো কাজ করছে আর কোন কৌশল কম কাজ করছে তা বিশ্লেষণ করতে হবে। ইমেইল রিপোর্টে আপনি ইমেল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য পাবেন যেমন ইউনিক ওপেন রেট , ইমেইল বাউন্স সেট ,  ক্লিক থ্রো রেট , আনসাবস্ক্রাইব রেট, স্প্যাম অভিযোগ, শেয়ারস ইত্যাদি ।

৮. অটোমেশন সেটআপ করুন

মার্কেটিং কার্যক্রম আরও সহজ করতে অটোমেশন ব্যবহার করতে পারেন।

  • ওয়েলকাম ইমেইল: নতুন সাবস্ক্রাইবারদের জন্য স্বাগত ইমেইল।
  • রিমাইন্ডার: গ্রাহকদের পছন্দ করা পণ্যের ডিসকাউন্ট বা অফার জানিয়ে ইমেইল করা।
  • কার্ট অ্যাবন্ডনমেন্ট ইমেইল: যারা পণ্য কার্টে রেখে কিনেনি তাদের মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য পুনরায় ইমেল করা।

৯. নিয়মিত লিস্ট আপডেট করুন

ইমেইল লিস্ট নিয়মিত আপডেট করুন।

এক্ষেত্রে যেসব ইমেইল গ্রহীতা ইমেইলের সাড়া দেয় না তাদের  সরিয়ে ফেলুন।

নতুন গ্রাহক যুক্ত করুন। তাদেরকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর ইমেইল পাঠান।

১০. গ্রাহকদের মতামত নিন

ইমেইল ক্যাম্পেইন আরও উন্নত এবং কার্যকর করার জন্য গ্রাহকদের মতামত নিন। গ্রাহকদের মতামত সংগ্রহের জন্য ফিডব্যাক ফর্ম বা সার্ভে ব্যবহার করুন।তাদের চাহিদা এবং পছন্দ সম্পর্কে জানুন।

ইমেইল মার্কেটিং শুরু করার জন্য একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা এবং কার্যকর টুলস প্রয়োজন। সঠিক কৌশল ব্যবহার করে এটি আপনার ব্যবসার জন্য বড় সাফল্য আনতে পারে। নিয়মিত বিশ্লেষণ এবং উন্নত কনটেন্ট তৈরি করলে ইমেইল মার্কেটিং আরও ফলপ্রসূ হবে।

পাঠক জিজ্ঞাসা 

ইমেইল মার্কেটিং শিখতে কতদিন সময় লাগে?

“ইমেইল মার্কেটিং শিখতে কতদিন দিন লাগবে” এই প্রশ্নটা অনেকেই করে থাকে। আসলে এর জন্য আপনাকে অবশ্যই পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। আপনি অনেক ইমেইল মার্কেটিং কোর্স পাবেন যেগুলো মাত্র কয়েক ঘন্টার।  কিন্তু কয়েক ঘন্টায় আপনি এই বিষয়ে এক্সপার্ট হতে পারবেন না। এক্সপার্ট হতে চাইলে আপনাকে কমপক্ষে দুই থেকে তিন সপ্তাহ খাটতে হবে।

ইমেইল মার্কেটিং কোর্স কোথায় করবো? 

অনেকেই ইমেইল মার্কেটিং কোর্স সম্পর্কে জানতে চায়। অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা ইমেইল মার্কেটিং কোর্স করিয়ে থাকে। এধরণের কিছু প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, ন্যাশনাল আইটি সলুশ্যন, ১০ মিনিটস স্কুল, ইশিখন, Udemy, Coursera, Hubspot, eMarketing Institute  ইত্যাদি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments