HomeBusiness Guidelinesরাইড শেয়ারিং ব্যবসা কি? শুরু করার স্টেপ বাই স্টেপ গাইডলাইন।

রাইড শেয়ারিং ব্যবসা কি? শুরু করার স্টেপ বাই স্টেপ গাইডলাইন।

রাইড শেয়ারিং ব্যবসা কি?

রাইড শেয়ারিং ব্যবসা হচ্ছে এমন একটি ব্যবসা যেখানে যাত্রী ও চালকদের মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে যুক্ত করা হয়।

যাত্রীরা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে গাড়ি বুক করে এবং যে ভাড়া আসে সেখান থেকে রাইড শেয়ারিং কোম্পানিকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন দিয়ে থাকে।

এই ব্যবসার মূল বৈশিষ্ট্য:

  • এটি একটি অ্যাপ-ভিত্তিক সেবা,
  • যাত্রীরা অ্যাপের মাধ্যমে নিকটবর্তী ড্রাইভারকে দেখতে পারে,
  • দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করা হয়,
  • ডিজিটাল পেমেন্ট ও ক্যাশ দুভাবেই টাকা গ্রহণ করা যায়,
  • চালক ও যাত্রীর রেটিং ব্যবস্থা আছে। চালক ও যাত্রী উভয়ের উভয়কে তাদের আচরণ ও সেবা অনুযায়ী রেটিং দিতে পারে।

কিভাবে একটি রাইড শেয়ারিং ব্যবসা শুরু করবেন? 

১. বাজার গবেষণা করুন

রাইড শেয়ারিং ব্যবসায় নামার আগে আপনাকে প্রথমেই বাজার গবেষণা করতে হবে। বাজার গবেষণা ছাড়া এই ধরণের ব্যবসা শুরু করা উচিৎ হবে না।

আপনাকে প্রথমেই ঠিক করতে হবে আপনি কোন যায়গায় এই সার্ভিস দিবেন। আপনি কি শুধু ঢাকা শহরে সেবা দিতে চান নাকি চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীসহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরেও সেবা দিবেন?

বাংলাদেশে Uber, Pathao, Shohoz, Obhai ইত্যাদি কোম্পানি আপনার মূল প্রতিযোগী হবে। ইতিমধ্যে এসব কোম্পানি মার্কেট শেয়ার দখল করে আছে। আপনি কিভাবে আপনার সক্ষমতা ও মার্কেটিং স্ট্র‍্যাটেজি ব্যবহার করে মার্কেটে যায়গা করে নিবেন সে বিষয়ে এনালাইসিস করতে হবে।

২. ব্যবসার মডেল নির্ধারণ করুন

রাইড শেয়ারিং ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে কমিশন মিডেল নিয়ে চিন্তা করতে হবে। এই ধরণের ব্যবসায় প্রধান তিনটি মডেল প্রচলিত আছে:

Commission Model – এই মডেল অনুসারে আপনি রাইডারের প্রতি রাইড শেষে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন কেটে নেবেন।

Subscription Model– এই মডেল অনুসারে ড্রাইভাররা মাসিক ফি দিয়ে আপনার অ্যাপ ব্যবহার করবে।

Hybrid Model – নাম দেখেই বুঝা যাচ্ছে এই মডেলে দুটি পদ্ধতির ব্যবহার আছে অর্থাৎ এই মডেলে মাসিক ফি + কমিশন দুইটাই থাকবে৷

তাই ব্যবসা শুরু করার আগেই আপনি কোন কমিশন মডেল ব্যবহার করবেন এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিন। তবে ব্যবসা শুরু করার পরেও প্রয়োজন বুঝে কমিশন মডেল পরিবর্তন করা যাবে।

৩. মোবাইল অ্যাপ তৈরি করুন

রাইড শেয়ারিং ব্যবসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো অ্যাপ। কারণ গাড়ির ড্রাইভার এই অ্যাপ ব্যবহার করেই রেজিস্ট্রেশন করবে এবং যাত্রীরা গাড়ি ভাড়া করবে।

আপনাকে তিন ধরনের অ্যাপ দরকার:

  • User App (Passenger App)
  • Driver App
  • Admin Panel (Management Dashboard)

অ্যাপে যে ফিচার থাকা জরুরি:

  • Location Tracking (GPS)
  • Real-time Ride Matching
  • Wallet & Payment Gateway
  • Driver Verification System
  • Ride Fare Calculator
  • SOS & Security Feature
  • Rating & Review System

যদি আপনি নিজে অ্যাপ বানাতে না পারেন, সফটওয়্যার কোম্পানি দিয়ে আউটসোর্স করতে পারেন। ভাল সফটওয়্যার ডেভেলপার দিয়ে তৈরি করাতে হবে যাবে অ্যাপটি ইউজার ফ্রেন্ডলি হয়।

৪. আইনগত অনুমতি ও রেজিস্ট্রেশন

বাংলাদেশে রাইড শেয়ারিং কোম্পানি পরিচালনার জন্য কিছু অনুমতি নিতে হয়। আপনাকে প্রথমেই ব্যবসা পরিচালনার জন্য ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে। এটা হচ্ছে একটা ব্যবসা শুরুর ধাপ। কিভাবে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হয় তা জানা না থাকলে আমাদের এই আর্টিকেল পড়ুন।

তারপর আপনাকে একটি কোম্পানি গঠন করতে হবে। এজন্য RJSC (Registrar of Joint Stock Companies) থেকে কোম্পানি নামে নিবন্ধন নিতে হবে। কিভাবে বাংলাদেশে একটি নতুন কোম্পানি খুলবেন তা জানা না থাকলে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ুন।

BRTA থেকে Ride Sharing License সংগ্রহ করতে হবে।
BRTA এর গাইডলাইন অনুযায়ী আপনাকে ড্রাইভার, গাড়ি এবং কোম্পানিকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। BRTA গাইডলাইন হচ্ছে:

২০১৭ সালে অনুমোদিত Ride‑Sharing Service Guidelines 2017 অনুযায়ী, যেকোনো অ্যাপভিত্তিক রাইড-শেয়ারিং কোম্পানি ও সংশ্লিষ্ট মোটরযানকে BRTA থেকে এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট / অনুমোদন নিতে হবে।

কোম্পানি হিসেবে রেজিস্ট্রেশন পেতে হলে নির্ধারিত ন্যূনতম মোটরযানের সংখ্যা পূরণ করতে হবে। এর মধ্যে ঢাকায় ১০০টি, চট্টগ্রামে ৫০টি, অন্য শহর বা এলাকা হলে ২০টি মোটরযান থাকতে হবে।

আবেদন প্রক্রিয়া: কোম্পানিকে অনলাইনে BRTA-র সার্ভিস পোর্টালে আবেদন করতে হবে। আবেদনের সময় অ্যাপ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (যেমন ট্রেড লাইসেন্স, টিন/VAT/ট্যাক্স নথি ইত্যাদি) দাখিল করতে হবে আর মোটরযানের তথ্য (রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস সার্টিফিকেট, চালকের লাইসেন্স, মালিক–চালকের NID/আইডি ইত্যাদি) জমা দিতে হবে।

অনুমোদিত মোটরযানের জন্য পৃথক “মোটরযান এনলিস্টমেন্ট সার্টিফিকেট” নিতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী, নতুন গাড়ি কিনে সঙ্গে সঙ্গে রাইড-শেয়ারিং চালানো যাবে না এর আগে অন্তত এক বছর ব্যক্তিগত জন্য ব্যবহার হচ্ছে এমন গাড়িই রেজিস্ট্রেশন হবে।

ভাড়া নির্ধারণের নিয়ম: রাইড-শেয়ারিং গাড়ির ভাড়া হতে হবে Taxicab Service Guideline‑2010 অনুযায়ী (অর্থাৎ, কোম্পানি/ড্রাইভার চাইলেই যেকোনো ভাবে ভাড়া বাড়াতে পারে না)।

৫. ড্রাইভার রেজিস্ট্রেশন ও ভেহিকল অনবোর্ডিং

ড্রাইভার রেজিস্ট্রেশন করার আগে তার নিজের ও গাড়ির ডকুমেন্টস সংগ্রহ করতে হবে। এসব ডকুমেন্টস এর মধ্যে রয়েছে :

  • NID
  • ড্রাইভার লাইসেন্স
  • Bike/Car Registration (Blue Book)
  • ট্যাক্স টোকেন
  • Fitness Certificate
  • ড্রাইভারের পুলিশ ভেরিফিকেশন

ডকুমেন্টস সংগ্রহ করার পাশাপাশি ড্রাইভারদের কিভাবে অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে সে বিষয়ে ট্রেনিং দিতে পারেন যাতে তারা সহজেই অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারেন।
চালকদের অ্যাপ ব্যবহারের ট্রেনিং দিন।

৬. অফিস নেওয়া এবং অপারেশন টিম গঠন করুন

যেকোনো ব্যবসা পরিচালনার জন্য একটি অফিস প্রয়োজন। অফিসের আয়তন কেমন হবে তা আপনার মানব সম্পদ এর পরিমাণ এবং লজিস্টিক এর পরিমাণের উপর নির্ভর করবে।

গ্রাহক ও ড্রাইভারদের সহায়তা করার জন্য একটা দক্ষ কাস্টমার সাপোর্ট টিম দরকার। এই টিমের কাজ হবে গ্রাহক ও ড্রাইভারদের যেকোনো সমস্যার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া ও সমস্যা সমাধানে সাহায্য করা।

একটা টিম হবে টেকনিক্যাল টিম। সফটওয়্যার বানানো এবং ম্যানটেনেন্সে অভিজ্ঞ লোকদের এই ডিপার্টমেন্টে নিয়োগ দিতে হবে। আরেকটা টিম দরকার মার্কেটিং এর কাজের জন্য। তাদের কাজ হবে ট্রেডিশনাল এবং ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে গ্রাহক ও ড্রাইভারদের কাছে কোম্পানি এবং কোম্পানির সেবা প্রমোট করা।

৭. প্রচারণা শুরু করুন

অফিস নেওয়া এবং লোকবল নিয়োগ দেওয়ার পর আপনাকে প্রচারণার কাজ শুরু করতে হবে। যেহেতু মার্কেটে উবার, পাঠাও এর মত প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি সেবা প্রদান করছে তাই আপনাকে মার্কেটিং এ জোর দিতে হবে।

প্রচলিত ও ডিজিটাল দুই পদ্ধতিতেই মার্কেটিং শুরু করতে হবে। যেহেতু এই ধরণের সেবা নেওয়া গ্রাহক ও ড্রাইভার সবাই অনলাইন ব্যবস্থায় অভ্যস্ত তাই আপনাকে ডিজিটাল মার্কেটিং এ বেশি জোর দিতে হবে। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এবং গুগল এডস এর মাধ্যমে জোর দিন। এসব মাধ্যমে নিয়মিত ক্যাম্পেইন চালান।

ড্রাইভারদের আকৃষ্ট করার জন্য নতুন ড্রাইভার রেজিস্ট্রেশনের জন্য বোনাস দিতে পারেন। নতুন ইউজারের জন্য ডিসকাউন্ট দিতে পারেন। এর পাশাপাশি রেফারেল প্রোগ্রাম চালাতে পারেন।

এভাবেই আপনি একটি রাইড শেয়ারিং ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

রাইড শেয়ারিং ব্যবসার খরচ কত হতে পারে?

এই ধরণের একটি ব্যবসা শুরু করতে হলে আপনাকে বেশ বড় পুজি নিয়ে নামতে হবে। কারণ অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, অফিস সেটআপ, স্টাফ, মার্কেটিং ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের খরচ আপনাকে করতে হবে।

তবে আপনার কেমন খরচ হবে সেটা আপনার ব্যবসার পরিধি এবং সক্ষমতার উপর নির্ভর করবে। যেমন আপনি যদি ছোট অফিসের বদলে বড় অফিস ভাড়া করেন, উচ্চ বেতনে মেধাবী কর্মকর্তা নিয়োগ দেন, ভাল লজিস্টিক ব্যবহার করেন তাহলে অনেক পুজি লাগবে। আপনার কেমন খরচ হতে পারে তার একটা সম্ভাব্য হিসাব নিচে দেওয়া হলো:

খরচের ধরণ আনুমানিক বাজেট
অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট ১০– ৫০ লাখ টাকা
অফিস সেটআপ ৫০,০০০ – ২ লাখ
টিম/স্টাফ ১ লাখ – ২ লাখ/মাস
মার্কেটিং ৫০,০০০ – ৫ লাখ
ব্র্যান্ডিং ও অন্যান্য ১–৩ লাখ

 

রাইড শেয়ারিং ব্যবসার কমিশন মডেল (Commission Model) 

কমিশন মডেল হলো রাইড শেয়ারিং ব্যবসার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও লাভজনক মডেল। এই পদ্ধতিতে রাইড শেয়ারিং কোম্পানি প্রতিটি রাইড থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ বা পারসেন্ট কমিশন কেটে নেয়। বাকিটা ড্রাইভার তার আয় হিসেবে পায়।

উদাহরণ:
যদি একজন যাত্রী ৫০০ টাকা ভাড়ার রাইড বুক করে এবং আপনার কমিশন ১০% হয় তাহলে ৫০ টাকা কোম্পানির কমিশন এবং ৪৫০ টাকা ড্রাইভার পাবে।

রাইড শেয়ারিং কমিশন মডেল কীভাবে কাজ করে?

১. যাত্রী অ্যাপ থেকে রাইড বুক করে

যাত্রী লোকেশন ও গন্তব্য সেট করে অ্যাপ থেকে রাইড বুক করে।

২. অ্যাপ নিকটবর্তী ড্রাইভারকে রাইড পাঠায়

যাত্রী যখন অ্যাপ থেকে ড্রাইভার রাইড অ্যাকসেপ্ট করে তখম থেকে যাত্রা শুরু হয়।

৩. যাত্রা শেষে ভাড়া অটোমেটিক ক্যালকুলেট হয়

যাত্রা শেষ হলে অ্যাপের মধ্যে ভাড়া প্রদর্শন করবে। ভাড়া ক্যালকুলেট করার ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয় :

  • দূরত্ব
  • সময়
  • বেস ফেয়ার

৪. কোম্পানি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমিশন কেটে নেয়

অ্যাপের মধ্যেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমিশন হিসাব হয়ে যায়। সেই হিসাব অনুযায়ী কোম্পানি কমিশন কেটে নেয়।
কোম্পানি চাইলে ২ ভাবে কমিশন নিতে পারে:

  • প্রতি রাইডে (Percentage ভিত্তিক)
  • প্রতি ট্রিপে (Fixed amount)

৫. কমিশন পরবর্তী এমাউন্ট ড্রাইভারের অ্যাকাউন্টে যোগ হয়

পেমেন্ট ২ ভাবে হতে পারে। যদি যাত্রী নগদ অর্থ দিয়ে ভাড়া পরিশোধ করে তাহলে কোম্পানির কমিশন পরবর্তীতে অ্যাপ থেকে সমন্বয় করা হয়। আর অনলাইনে পেমেন্ট হলে কোম্পানি টাকা পায় এবং ড্রাইভার তার অংশ withdraw করে।

কমিশন মডেলের ধরণ 

১. Percentage-Based Commission

এই মডেলটি সর্বাধিক ব্যবহৃত একটি মডেল। নাম দেখেই বুঝা যায় এই পদ্ধতিতে মোট ভাড়ার বিপরীতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পারসেন্ট কমিশন হিসেবে নেওয়া হয়।

বাংলাদেশে সাধারণত ১০%–২৫% এর মধ্যে কমিশন নেওয়া হয়। যেমন উবার ২০%-২৫%, পাঠাও ১৫% কমিশন নিয়ে থাকে। এই হার সময়ভেদে পরিবর্তিত হতে পারে।

সুবিধা:

এই মডেলের কিছু সুবিধা আছে যেমন:

  • রাইড বেশি হলে কোম্পানির আয় দ্রুত বাড়ে,
  • এই মডেল ড্রাইভারদের কাছেও অধিক গ্রহণযোগ্য,
  • ড্রাইভারের সাথে আয় ভাগাভাগির ন্যায্য পদ্ধতি,
২. Fixed Commission Per Ride

এই ধরণের মডেলে প্রতিটি রাইডের বিপরীতে কমিশন ফিক্সড করে দেওয়া হয়। এর ফলে প্রতি রাইড শেষে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কেটে নেওয়া হয়।

উদাহরণ: প্রতি রাইডে ৫০ টাকা কমিশন।

সুবিধা:

  • ড্রাইভারের কাছে এটি সহজবোধ্য,
  • নতুন শহরে কিংবা কম প্রতিযোগিতামূলক মার্কেটে এই পদ্ধতি কার্যকর।

অসুবিধা: এই মডেলের বড় অসুবিধা হচ্ছে বেশি ভাড়ার রাইডে কোম্পানির কম লাভ।

৩. Dynamic Commission

ডায়নামিক মানেই পরিবর্তনশীল। এখানে রাইডের চাহিদা, সময় ও লোকেশনভেদে কমিশন বৃদ্ধি বা হ্রাস পায়।

উদাহরণ: বেশি ব্যস্ত সময়ে ২০% এবং কম ব্যস্ত সময়ে ১০%।

এই পদ্ধতি এপ্লাই করলে আপনার আয় বেশি হতে। তবে ড্রাইভাররা মাঝে মাঝে বিরক্ত হতে পারে।

৪. Tiered Commission Model

ড্রাইভারের পারফরম্যান্স বা রাইড সংখ্যার উপর ভিত্তি করে কমিশন কমানো বা বাড়ানো হয়।

উদাহরণ:

  • ১–৫০ রাইড: ২০% কমিশন
  • ৫০–১০০ রাইড: ১৫% কমিশন
  • ১০০+ রাইড: ১০% কমিশন

এই ধরণের কমিশন মডেল ব্যবহার করার উদ্দেশ্য হচ্ছে ড্রাইভারদের বেশি রাইড নিতে উৎসাহিত করা।

কমিশন সংগ্রহের পদ্ধতি

১. Wallet Deduction System

অ্যাপের মধ্যেই ড্রাইভার ওয়ালেট থাকে। রাইড শেষ করার পর পেমেন্টগুলো ওয়ালেটে জমা হয়। তারপর সেখান থেকে কোম্পানি কমিশন কেটে নেয়।

২. Weekly Settlement

এই সিস্টেমে সপ্তাহে একবার ড্রাইভারকে বিল দেওয়া হয়। সেই বিল অনুসারে ড্রাইভার বিল পরিশোধ করে থাকে।ড্রাইভার টাকা পরিশোধ না করলে অ্যাকাউন্ট ব্লক হয়ে যায়।

৩. Online Payment Settlement

যখন যাত্রীরা অনলাইনে ভাড়া দেয়, কোম্পানি প্রথমে কমিশন রাখে তারপর বাকি টাকা ড্রাইভারকে দেয়।

আরও পড়ুন: ২০২৫ সালে শুরু করতে পারবেন এমন ১০ টি স্মার্ট ব্যবসার আইডিয়া

রাইড শেয়ারিং ব্যবসায় কিভাবে লাভ করে?

রাইড শেয়ারিং ব্যবসায় একটি কোম্পানি বিভিন্নভাবে আয় করতে পারে। যেমন

  • প্রতি রাইডে ১০–২৫% কমিশন
  • ড্রাইভার সাবস্ক্রিপশন ফি
  • In-app advertisement
  • Affiliate commission (যেমন পেট্রোল পাম্প/সার্ভিস সেন্টারের সাথে চুক্তি)

কোম্পানি এসব আয় দিয়ে ড্রাইভার সাপোর্ট, অ্যাপ মেইনটেন্যান্স, সার্ভার খরচ, মার্কেটিং, অফিস ব্যয় ইত্যাদি নির্বাহ করে। খরচের পর যা থাকে তা হচ্ছে কোম্পানির প্রফিট।

রাইড শেয়ারিং ব্যবসায় সফল হওয়ার কার্যকর টিপস

১. “শহর-ভিত্তিক” স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করুন (সব জায়গায় একসাথে নয়)

এই ব্যবসার শুরুতেই সরাসরি জাতীয় পর্যায়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। প্রথমে ১টি শহর অথবা ১–২টি জোনে ফোকাস করুন। উদাহরণ: ঢাকা → মিরপুর + উত্তরা, চট্টগ্রাম → আগ্রাবাদ + হালিশহর।

তারপর ধীরে ধীরে সার্ভিস এরিয়া সম্প্রসারণ করুন।

২. ড্রাইভারই আপনার আসল কাস্টমার

অনেকেই ভুল করে শুধু যাত্রী নিয়ে ভাবে। যদি ড্রাইভার খুশি না থাকে তাহলে আপনি ড্রাইভার হারাবেন। আর পর্যাপ্ত ড্রাইভার না থাকলে আপনি যাত্রী সেবা দিতে পারবেন না। ফলে গ্রাহকও হারাবেন।

তাই ড্রাইভার ধরে রাখার জন্য শুরুতে কমিশন কম রাখুন, সাপ্তাহিক বোনাস দিতে পারেন, সময়মতো ড্রাইভার সাপোর্ট প্রদান করুন, Suspension আগে warning দিন।

৩. শুরুতে লাভ নয়, “রাইড ভলিউম” লক্ষ্য করুন

প্রথম ৬–১২ মাস কমিশন কম নিবেন, ইনসেনটিভব্দিবেন, বেশি রাইডের বিষয়টি নিশ্চিত করবেন। অর্থাৎ আপনার মূল লক্ষ্য হবে এক্টিভিটি বাড়ানো।

৪. Driver Acquisition বাড়ান

রাইড শেয়ারিং ব্যবসার সাফল্যের ৫০% নির্ভর করবে এর উপর। এজন্য আপনি কিছু সুবিধা দিতে পারেন যেমন ওয়েলকাম বোনাস দেওয়া, কমিশন ছাড়, ড্রাইভার থেকে ড্রাইভার রেফারেল প্রোগ্রাম চালু করা, ফুয়েল ভাউচার ইত্যাদি।

৫. অ্যাপ ডিজাইন

এমনভাবে অ্যাপ তৈরি করতে হবে যাতে ব্যবহারকারীরা এটি সহজেই ব্যবহার করতে পারে। ইন্টারফেস সুন্দরভাবে ডিজাইন করুন। ফিচারগুলো যাতে ভালভাবে কাজ করে সেটি নিশ্চিত করুন। Fast location update, ৩–৫ সেকেন্ডে match, Low-end ফোনেও smooth কাজ করা এই বিষয়গুলোতে ফোকাস করুন।

৬. কমিশন মডেল Flexible রাখুন

শুধু এক ধরনে কমিশনে আটকে থাকবেন না। ডায়নামিক কমিশন ব্যবস্থা চালু করুন Peak hour এ বেশি কমিশন, off-Peak এ কম কমিশন, বেশি রাইড হলে কম কমিশন (Tier system) ইত্যাদি।

৭. ক্যাশ ও ডিজিটাল পেমেন্ট

বাংলাদেশে ক্যাশ ছাড়া টিকে থাকা কঠিন। তাই শুধু ডিজিটাল পেমেন্ট হলে গ্রাহক অসন্তুষ্ট হতে পারে। তাই ডিজিটাল এবং ক্যাশ পেমেন্ট উভয়ের ব্যবস্থা রাখুন।

৮. গ্রাহক সেবা উন্নত করুন

যেকোনো ব্যবসা সফলতার পেছনে গ্রাহক সেবার অনেক ভূমিকা রয়েছে। কারণ গ্রাহকরা দ্রুত ভাল সেবা পেলে কোম্পানির সেবা নিতে বেশি আগ্রহী হয়। এজন্য ২৪/৭ আপনাকে ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ, মেইল ইত্যাদি মাধ্যমে গ্রাহকদের সেবা দিতে হবে এবং অ্যাপে অভিযোগ জানানোর সিস্টেম থাকতে হবে।

৯. নিরাপত্তা নিয়ে একটুও ছাড় নয়

নিরাপত্তা নিয়ে কোন ছাড় দেওয়া যাবে না। এজন্য আপনার যা লাগবে:

SOS Button
Live ride sharing
Driver police verification
Trip recording/log system

১০. Fake Ride ও Fraud Control করুন

মনে রাখবেন এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় Silent killer। এগুলো
বন্ধ করার উপায়:

  • Same phone–same location detect
  • GPS spoofing block
  • Pattern-based fraud detection
  • Bonus abuse limiter

এগুলোর পাশাপাশি আরো কিছু কাজ করতে হবে:

  • মার্কেটিং এ জোর দিতে হবে,
  • যাত্রীদের জন্য পার কিমি, পার মিনিট, বেস ফেয়ার ইত্যাদি ভাগে ভাড়ার সিস্টেম করতে পারেন। হিডেন চার্য রাখা যাবে না।
  • কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিচের ডেটাগুলো বিশ্লেষণ করে তারপর সিদ্ধান্ত নিন। যেমন:

* Ride completed rate
* Cancellation ratio
* Driver active ratio
* Avg wait time
* Profit per ride

পরিশেষে

রাইড শেয়ারিং ব্যবসা হচ্ছে একটি স্মার্ট ব্যবসা। এই ধরণের ব্যবসা করতে হলে ব্যবসায়িক জ্ঞানের পাশাপাশি প্রযুক্তি জ্ঞান থাকা একেবারে আবশ্যক। কারণ এই ব্যবসাটার পথচলা শুরু হয়েছে প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করেই। এই ধরণের ব্যবসা বেশ লাভজনক কিছু বিনিয়োগ লাগে অনেক বেশি। অ্যাপ তৈরি, ভাল ড্রাইভার যুক্ত করা, নিরাপত্তা ও সার্ভিস মান এই ৪টি বিষয়ে বেশি ইনভেস্ট করতে হয়। সঠিকভাবে পরিকল্পনা করে বিনিয়োগ করতে পারলে আশা করা যায় আপনি সফল হবেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments