HomeFreelancing Guidelines২০২৫ সালে অভিজ্ঞতা ছাড়া ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার পূর্ণ গাইডলাইন।

২০২৫ সালে অভিজ্ঞতা ছাড়া ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার পূর্ণ গাইডলাইন।

ফ্রিল্যান্সিং কি?

ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে এক প্রকার স্বাধীন পেশা। এটি এমন একটি পেশা যেখানে আপনি কোন একক নিয়োগ কর্তৃপক্ষের নিকট দায়বদ্ধ নয়। ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার পেছনে এটি একটি বড় কারণ।

এটাকে খণ্ডকালীন বা চুক্তিভিত্তিক চাকরি বলা যায়। যেখানে একটি ক্লায়েন্টের প্রদান করা প্রজেক্ট ডেস্ক্রিপশন অনুযায়ী একটি প্রজেক্ট সম্পন্ন করতে হয় বা ফ্রিল্যান্সার নিজেই নিজের সার্ভিসগুলো ক্লায়েন্টের সামনে তুলে ধরে এবং ক্লায়েন্ট তার প্রয়োজন অনুযায়ী সার্ভিস ক্রয় করে থাকে।

সবচেয়ে কমন ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারের মধ্যে রয়েছে রাইটিং, গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি।

ফ্রিল্যান্সিং আপনাকে পৃথিবীর যেকোন জায়গা থেকে বাড়িতে বসে কাজ করার সুযোগ করে দিবে, এর জন্য আপনার অফিসের দরকার নেই। পুরো কাজটি রিমোট জব হিসেবে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে করতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য আপনার একটি ভাল ইন্টারনেট কানেকশন এবং একটি কম্পিউটার লাগবে ।

ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ

একজন ফ্রিল্যান্সার তার দক্ষতা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরণের কাজ করে থাকে। ফ্রিল্যান্সিং এর কাজসমূহ হচ্ছে:

  • ওয়েব ডেভেলপমেন্ট,
  • গ্রাফিক ডিজাইন,
  • ডিজিটাল মার্কেটিং
  • বিজনেস প্ল্যানিং,
  • আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স,
  • সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট,
  • এডিটিং এবং প্রুফরিডিং
  • সেলস, মার্কেটিং এবং পাবলিক রিলেশনশিপ,
  • কাস্টমার সার্ভিস,
  • নেটওয়ার্কিং এবং আইটি সেবা,
  • ফাইনান্সিয়াল কনসালটেন্সি,
  • কন্টেন্ট রাইটিং,
  • ভিডিও এডিটিং
  • আর্টিকেল রাইটিং
  • ডাটা এন্ট্রি ইত্যাদি।

ফ্রিল্যান্সিং এর কাজসমূহ এর মধ্যে উপরোক্ত কাজগুলোই বেশি করা হয়। তবে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজসমূহ এর মধ্যে আরো অনেক ক্যাটাগরি আছে যা আপনি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে প্রবেশ করলেই দেখতে পারবেন ।

কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন?

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য আপনাকে কতগুলো ধাপ করতে হবে। ধাপগুলো সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

১. নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করুন

ফ্রিল্যান্সিং শুরু

হঠাৎ করেই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবেন না। ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে নিন, সেটা হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং কি আপনার পার্ট টাইম আয়ের উৎস হবে নাকি ফুল টাইম চাকরি হবে।

আপনার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে আপনার পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে। আপনি চাইলে ফ্রিল্যান্সিংকে পার্ট টাইম চাকরি হিসেবে নিতে পারেন আবার পূর্ণকালীন চাকরি হিসেবেও নিতে পারেন ।

লক্ষ্য নির্ধারণ পর্যায়ে আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি কোন ধরণের সার্ভিস দিবেন এবং কি পরিমান আয় করতে চান। এসব বিষয় ঠিক করার পর পরবর্তী ধাপে যেতে হবে।

২. কোন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করুন

ফ্রিল্যান্সিং এর কাজসমূহ জানার পর ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য আপনাকে যেকোন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আপনি চাইলে একাধিক বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। আপনার যদি ইচ্ছা, আগ্রহ এবং শেখার আগ্রহ থাকে তাহলে অবশ্যই সেটি পারবেন।

কিন্তু যে কাজই শিখেন আপনাকে পরিপূর্ন জ্ঞান অর্জন করতে হবে। অল্প জ্ঞান নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে প্রবেশ করলে হাজারো দক্ষ ফ্রিল্যান্সারের মাঝে আপনি অসহায় বোধ করতে পারেন। কারণ আপনি যদি ভাল করে কাজ না পারেন তাহলে আপনার ক্লায়েন্ট আপনাকে খারাপ রিভিউ দিতে পারে আর খারাপ রিভিউ পেলে আপনার কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

দক্ষতা অর্জন করার জন্য কোন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন না কোন ভাল ফ্রিল্যান্সারের কাছ থেকে সরাসরি শিখতে পারেন । ফ্রিতে ফ্রিল্যান্সিং শেখার জন্য ইউটিউব আছে। ইউটিউবে ভিডিও দেখে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারেন । Udemy, Coursera এসব প্লাটফর্ম থেকে কোর্স কিনে ফ্রিল্যান্সিং কোর্স করতে পারেন । তবে আমাদের দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা ফ্রিল্যান্সিং এর নাম করে প্রতারণা করে তাদের ব্যাপারে সাবধান থাকবেন।

৩. ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মে যোগ দেওয়া 

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মের যেকোন একটি বা আপনি যদি চান একাধিক প্লাটফর্মে যোগ দিতে হবে।

  • Fiverr
  • Upwork
  • Freelancer
  • Toptal
  • Guru
  • Truelancer
  • 99designs
  • We Work Remotely
  • Dribbble
  • Startupers
  • Gigster
  • Creative Market
  • Clarity
  • Behance

এসব ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মে আপনি আপনার দক্ষতা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরণের কাজ খুঁজে পাবেন। একেক প্লাটফর্মের কাজের ধরণ বা কার্য পদ্ধতি একেক রকম। তাই এসব প্লাটফর্মে যুক্ত হওয়ার আগে অবশ্যই এগুলো সম্পর্কে ভাল করে জেনে তারপর যুক্ত হতে হবে।

আরও পড়ুন: ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস কি ? ৫ টি সেরা মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে বিস্তারিত ।

৪. প্রোফাইল তৈরি করুন

ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটে যুক্ত হওয়ার পর আপনার প্রথম কাজ হচ্ছে সেখানে একটি প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। কোন কাজে আবেদন করতে গেলে আপনাকে প্রথমেই নিয়ম অনুযায়ী একটি প্রোফাইল তৈরি করতে হবে।

প্রোফাইল হচ্ছে আপনার সিভি যেখানে বিভিন্ন বিষয় অন্তুর্ভুক্ত থাকে যেমন ছবি, কাজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা, কাজের রেট অর্থাৎ ঘন্টা প্রতি কি পরিমান অর্থ হলে আপনি কাজটি করতে রাজি হবেন, দক্ষতার বিবরণ, পোর্টফোলিও ইত্যাদি বিষয়।

একটি আকর্ষণীয় প্রোফাইল একজন ক্লায়েন্টের কাছে আপনাকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করবে। একজন ক্লায়েন্ট আপনাকে কাজ দেওয়ার আগে অবশ্যই আপনার প্রোফাইল ভাল করে দেখে নিবে। আপনার উপস্থাপনা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, পোর্টফোলিও ইত্যাদি দেখে আপনাকে কাজের অর্ডার প্রদান করবে। তাই প্রোফাইল তৈরি করার আগে কিভাবে প্রোফাইল তৈরি করতে হয় এই বিষয়ে ভাল করে জেনে তারপর প্রোফাইল তৈরি করুন ।

আরও পড়ুন: আপওয়ার্ক এবং ফাইবার এ অ্যাকাউন্ট এবং প্রোফাইল তৈরির উপায়

৫. কাজের জন্য আবেদন করুন

ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটে একাউন্ট খুলে প্রোফাইল তৈরি করার পর আপনাকে আপনার দক্ষতা অনুযায়ী কাজ খুঁজতে হবে। তবে ফাইবারের মত প্লাটফর্মে আপনাকে কাজ খুঁজতে হবে না। আপনাকে গিগ(সার্ভিস) তৈরি করতে হবে। সেখানে আপনার সার্ভিস সম্পর্কে বর্ণনা থাকবে এবং এর জন্য কি পরিমান ফি চার্জ করবেন সেটিও উল্লেখ থাকবে।

আপওয়ার্কের মত প্লাটফর্মে আপনাকে কাজ খুঁজতে হবে। কাজ খোঁজার জন্য আপনাকে সার্চ বারে গিয়ে কাজের বিষয়বস্তু লিখে সার্চ করতে হবে। সার্চ করলেই সার্চ বারের নিচে সংশ্লিষ্ট কাজের প্রজেক্টগুলো প্রদর্শিত হবে। সেখান থেকে আপনার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং রেট এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলে সেটিতে নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করতে হবে। এই বিষয়ে বিস্তারিত পড়তে পারেন: আপওয়ার্ক (Upwork) এ কাজ পাওয়ার উপায় এবং বিড করার কৌশল।

৬. পোর্টফোলিও তৈরি করুন

পোর্টফোলিও হচ্ছে একজন ফ্রিল্যান্সারের সবচেয়ে ভাল কাজগুলোর একটা প্রদর্শণী যার মাধ্যমে ক্লায়েন্টের সামনে নিজের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং সৃজনশীলতা দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। এটি এমন একটি টুল যার মাধ্যমে একজন ক্লায়েন্ট ফ্রিল্যান্সারকে বিশ্বাস করা শুরু করে ।

পোর্টফোলিও এর মধ্যে থাকে কাজের নমুনা, পূর্বের ক্লায়েন্টের জন্য করা প্রজেক্ট, ক্লায়েন্ট টেস্টিমোনিয়াল, রেজুম ইত্যাদি।

আপনাকে এমন একটি পোর্টফোলিও তৈরি করতে হবে যা দেখে ক্লায়েন্টরা আপনাকে কাজের আদেশ প্রদান করতে উৎসাহিত হবে। তবে প্রথম দিকে নতুন অবস্থায় আপনার পোর্টফোলিও নাও থাকতে পারে এক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটের বাইরে পূর্বে যদি কোন কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন করে থাকেন তাহলে সেটি উল্লেখ করতে পারেন বা কারো রেকমেন্ডেশন এর কথা উল্লেখ করতে পারেন।

৭. যোগাযোগ দক্ষতা উন্নত করুন

ফ্রিল্যান্সিং জগতে যোগাযোগ দক্ষতা একটা বড় বিষয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা একজন ক্লায়েন্ট সহজভাবে যদি কোন ফ্রিল্যান্সারে সাথে যোগাযোগ করতে পারে তখন সেই ফ্রিল্যান্সার একটু কম দক্ষ হলেও কাজ পায়। কারণ ফ্রিল্যান্সার যোগাযোগে দক্ষ হলে সহজে ক্লায়েন্টের দিকনির্দেশনা ধরতে পারে এবং কাজটা দ্রুত করতে পারে। দ্রুত এবং বন্ধুত্বপূর্ন যোগাযোগ দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক স্থাপনে খুব কার্যকর।

৮. সময় ব্যবস্থাপনা শিখুন

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে হলে আপনার সময় ব্যবস্থাপনা জ্ঞান ভাল হতে হবে। ক্লায়েন্টরা কাজের আদেশ দেওয়ার পর তা নির্দিষ্ট সময়ে ডেলিভারি দেওয়ার শর্ত প্রদান করে।

নির্দিষ্ট সময়ে যদি আপনি কাজ ডেলিভারি দিতে ব্যর্থ হোন তাহলে ক্লায়েন্ট আপনার সাথে চুক্তি বাতিল করতে পারে বা আপনার রিভিউ খারাপ দিতে পারে । এছাড়া ক্লায়েন্ট কোন কিছু জানতে চাইলে তা দ্রুত সাড়া দিতে হবে। কেউ যদি সাড়া দিতে দেরি করে তাহলে সেটি ফ্রিল্যান্সারের জন্য নেগেটিভ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

ফ্রিল্যান্সিংকে কি ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রহণ করা যায়?

ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শুরু করবেন এই ব্যাপারে আশা করা যায় উপরের লেখা থেকে ভাল একটা ধারণা পেয়েছেন। এখন আপনার মাথায় এই ভাবনাটা আসতে পারে যে ফ্রিল্যান্সিংকে কি ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রহণ করা যায় কিনা।

হ্যাঁ, ফ্রিল্যান্সিংকে একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রহণ করা যায়। বর্তমান সময়ে অনেক মানুষই ফ্রিল্যান্সিংকে স্থায়ী পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন কারণ এতে স্বাধীনতা, আয়ের বৈচিত্র্য এবং কাজের নমনীয়তা থাকে। ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার হিসেবে সফল হওয়ার জন্য কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হবে।

ফ্রিল্যান্সিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়ার সুবিধা 

১. স্বাধীনতা ও নমনীয়তা

ফ্রিল্যান্সাররা নিজের পছন্দমতো কাজ করতে পারে এবং কাজের সময় নির্ধারণ করতে পারে। এতে জীবনের অন্যান্য দিকগুলোর সাথে ব্যালান্স বজায় রাখা সহজ হয়।

নির্দিষ্ট কোন নিয়োগকর্তার অধীনে কাজ করতে হয় না। কোন অফিসের প্রয়োজন হয় না। কোন নির্দিষ্ট সময়ে কাজ করতে হয় না অর্থাৎ কাজের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা পাওয়া যায়।

২. বৈশ্বিক ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করার সুযোগ

ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আপনি সারা বিশ্বের বিভিন্ন ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করতে পারেন, যা আপনাকে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা এবং বহুমাত্রিক কাজের সুযোগ এনে দিবে।

যেহেতু ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মেগুলোতে সারা বিশ্বের ক্লায়েন্ট ফ্রিল্যান্সারের খুঁজে আসে তাই আপনি এমন একটি অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবেন যেখানে আপনার শেখার অনেক কিছুই থাকবে।

৩. উচ্চ আয়ের সুযোগ

এই মুক্ত পেশায় আপনার কাজের নির্দিষ্ট কোন সীমা পরিসীমা নেই যার কারণে আপনি আপনার সময় সুযোগ অনুযায়ী যতক্ষণ পারা যায় ততক্ষণ কাজ করতে পারবেন।

বেশি কাজ করতে পারলে বেশি আয়ের সুযোগ থাকবে। আর আপনার অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার কাজের রেট বাড়তে হবে। দক্ষ এবং ফ্রিল্যান্সারা মাসে কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন।

৪. নিজের ব্যবসা তৈরির সুযোগ

ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আপনি নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। পরবর্তীতে নিজের ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সি বা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলতে পারেন।

আমার এক বাল্য বন্ধুকে দেখেছি সে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে ভিডিও এডিটিং এবং ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট এর কাজ করতো। অনেক দিন কাজ করার পর সে নিজেই একটা এজেন্সি খুলে ফেললো। সেখানে এখন ১৫ জনের একটা টিম কাজ করে।

অসুবিধা

১.  অনিশ্চয়তা এবং স্থায়িত্বের অভাব

ফ্রিল্যান্সিংয়ে স্থায়ী চাকরির মতো নির্দিষ্ট আয়ের নিশ্চয়তা থাকে না। কাজের প্রাপ্তি এবং আয় অনিয়মিত হতে পারে।

যেহেতু ফ্রিল্যান্সিং কোন প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট বেতনের চাকরি নয় তাই এখানে অনিশ্চয়তা ও স্থায়ীত্বের অভাব আছে।

২. ভিন্ন টাইমজোন এবং সময় ব্যবস্থাপনার চাপ

ফ্রিল্যান্সিং এর একটা বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সময় ব্যবস্থাপনা করা। এখানে আপনি যে কাজই করেন না কেন আপনাকে ডেড লাইন ধরে কাজ করতে হবে।

অনেক প্রজেক্ট আছে অনেক সময় ধরে করতে হয়। সেখানে নির্দিষ্ট মাইলস্টোন অর্জন করার পর ক্লায়েন্ট পেমেন্ট প্রদান করে। আবার অনেক প্রজেক্ট আছে যেখানে ক্লায়েন্ট কাজ করার জন্য অল্প সময় দিবে এবং কাজ ১০০% সন্তোষজনকভাবে শেষ হওয়ার পর আপনাকে পেমেন্ট দিবে।

অনেক সময় দেখা যায় ব্যক্তিগত কাজের জন্য ভিন্ন টাইমজোনের কারণে ক্লায়েন্টের সময়ের সাথে নিজ দেশের সময়ের তাল মেলানো কঠিন হয়ে পড়ে। যার কারণে নির্দিষ্ট ডেড লাইনে কাজ শেষ করা সবসময় সম্ভব হয় না। আর আপনি যদি নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে না পারেন তাহলে ক্লায়েন্ট আপনাকে খারাপ রিভিউ দিতে পারে।

৩. আর্থিক ব্যবস্থাপনা

ফ্রিল্যান্সারদের আয় মাসিক বা নির্দিষ্ট পরিমাণে না আসায় আর্থিক পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনা করা কঠিন হতে পারে।

এমন হতে পারে কোন মাসে আপনি প্রচুর আয় করে ফেলবেন আবার কোন কোন মাসে দেখবেন আপনি কোন কাজই পাবেন না। অনিয়মিত আয়ের কারণে আপনি যদি বুঝে টাকা খরচ না করেন তাহলে আপনি আর্থিক সংকটে ভুগতে পারেন। তাই ফ্রিল্যান্সিং জগতে আসতে চাইলে আপনার অবশ্যই একটি আর্থিক পরিকল্পনা থাকতে হবে।

সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য টিপস

• প্রতিনিয়ত নিজের দক্ষতা উন্নয়ন করতে হবে এবং নতুন ট্রেন্ড সম্পর্কে আপডেট থাকতে হবে । মনে রাখবেন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে দক্ষরাই টিকে থাকে অন্যরা কিছুদিন চেষ্টা করে কাজ না পেয়ে হতাশ হয়ে যায়।  কিন্তু দক্ষতা থাকলে কাজের অভাব হবে না।

• নিজেকে ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। একটি আকর্র্ষনীয় প্রোফাইল তৈরি করুন এবং নিজেকে এমনভাবে বিক্রয় করুন যাতে আপনাকে কাজ দিতে ক্লায়েন্ট বাধ্য হয়।

• ক্লায়েন্টদের সাথে অবশ্যই ভাল সম্পর্ক বজায় রাখবেন । প্রায় সময় দেখা যায় শুধুমাত্র নিয়মিত যোগাযোগ করার কারণে একই ক্লায়েন্টের কাছ থেকে বার বার অর্ডার আসে। তাই ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টা করুন ।

• ভালভাবে কাজের মূল্যায়ন করুন এবং সময়মতো ডেলিভারি দেওয়ার চেষ্টা করুন । কাজের মধ্যে পেশাদারি ভাব বজায় রাখুন।

চাকরির পাশাপাশি কি ফ্রিল্যান্সিং করা যায়?

হ্যাঁ, চাকরির পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করা যায়। একটি অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং বেশ কার্যকর পন্থা হতে পারে। তবে চাকরির সাথে ফ্রিল্যান্সিংকে ব্যালান্স করে কাজ করা বেশ খুব একটা সহজ ব্যাপার না।

চাকরির পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করার সুবিধা

১. অতিরিক্ত আয়: আপনি যদি চাকরির পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করেন তাহলে সেটা থেকে আপনি যে আয় করবেন তা হবে আপনার অতিরিক্ত আয়। বর্তমান সময়ে জীবনযাত্রার খরচ যেভাবে বাড়ছে তাতে কিছু অতিরিক্ত আয় আপনাকে অনেক স্বস্তি দিবে

২. দক্ষতা উন্নয়ন এবং ভবিষ্যত নিরাপত্তা: চাকরিতে আপনি একটি নির্দিষ্ট কাজ করে থাকেন এর ফলে অন্যান্য ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করার সুযোগ কম থাকে। চাকরির পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করলে আপনার নতুন আরেকটা বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান সময়ে দক্ষ লোকের কাজের কোন অভাব নেই। ভবিষ্যতে কোন কারণে আপনার বর্তমান চাকরি চলে আপনার আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।

৩. ক্যারিয়ার বৈচিত্র্যতা: আমাদের মধ্যে একটা বিষয় দেখা যায়, আমরা এক ধরণের কাজ করতে করতে একসময় ক্লান্ত হয়ে যাই। তখন ক্যারিয়ার এ বৈচিত্র্যতার একটা প্রয়োজন বোধ করি। এখন আপনি যদি চাকরির পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করেন তাহলে আপনার সেই চাহিদা মিটে যাবে এবং একঘেয়েমি লাগবে না।

৪. নেটওয়ার্ক বৃদ্ধির সুযোগ: ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন ক্লায়েন্ট এবং প্রফেশনালদের সাথে কাজ করার সুযোগ পাবেন, যা আপনার নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। একটি ভাল নেটওয়ার্ক আপনার লাইফে অনেক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে । আপনি যদি ভাল একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারেন তাহলে আপনার কাজের অভাব হবে না। আপনার নেটওয়ার্ক থেকে আপনি নিয়মিত কাজ পাবেন।

চাকরির পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করার চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

১. সময় ব্যবস্থাপনা: যেহেতু আপনি একজন চাকুরীজিবি এটাই আপনার পক্ষে ফুল টাইম দেয়া কোনভাবেই সম্ভব না। তাই আপনার পক্ষে ডেডলাইন মেনে প্রজেক্ট সম্পন্ন করা খুব কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।

করণীয়:

  • আপনার কাজের একটি সুনির্দিষ্ট সময়সূচী তৈরি করুন
  • আপনার প্রধান চাকরির সময়ের বাইরে ফ্রিল্যান্সিংয়ের সময় নির্ধারণ করুন, যেমন সন্ধ্যা বা সপ্তাহান্তে শুক্র ও শনিবার হতে পারে। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানে শনিবার খোলা থাকে তাদের জন্য শনিবার কাজ করা সম্ভব নাও হতে পারে ।
  • যেহেতু আপনি বেশি সময় দিতে পারবেন না তাই ছোট ছোট প্রজেক্টে কাজ করতে পারেন। এর ফলে আপনার পক্ষে সঠিক সময়ে কাজ জমা দেওয়া সম্ভব হবে।

২.  ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগের সমস্যা: ক্লায়েন্ট আপনার সাথে যেকোন সময় যোগাযোগ করতে চাইতে পারে। আপনি যদি কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত অবস্থায় থাকেন তাহলে আপনার পক্ষে দ্রুত ক্লায়েন্টের উত্তর দেওয়া সম্ভব হবে না।

করণীয়:

  •  ক্লায়েন্টদের সাথে কাজের শুরুর দিকেই আপনার সময় সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা দিন। এর ফলে ক্লায়েন্টের সাথে কোন ভুলবোঝাবুঝি হবে না।

৩. কাজের চাপ ও মানসিক চাপ: একসঙ্গে দুটি কাজ করার ফলে চাপ বাড়তে পারে। এতে আপনি শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারেন। খুবই শক্ত মনের না হলে অনেক সময় সেটা সহ্যের বাইরে চলে যায়। 

করণীয়:

  • কাজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং অতিরিক্ত কাজ না নেওয়ার চেষ্টা করুন। আপনি যতটুকু কাজের লোড নিতে পারবেন তার বেশি অবশ্যই নিতে যাবেন না। অল্প কাজ করে যদি সফলভাবে শেষ করতে পারেন তাহলে আপনি নিজেই প্রশান্তি অনুভব করবেন।

৪. অগ্রাধিকার ব্যবস্থাপনা: কখনো কখনো চাকরির কাজ এবং ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হতে পারে। অনেক সময় দেখা যাবে অফিসের কাজের প্রেশার বেড়ে গেছে তখন আপনি চাইলেও অফিসের কাজ এড়িয়ে ক্লায়েন্টের কাজে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারবেন না। আবার এমনও হতে পারে চাকরির পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করতে গিয়ে অফিসের কাজে মন দিতে পারছেন না।

করণীয়:

  • আপনার চাকরিকে প্রথম অগ্রাধিকার হিসেবে রাখুন, কারণ এটি আপনার স্থায়ী আয়ের উৎস। এটাকেই প্রথম অগ্রাধিকার দিয়ে তারপর ফ্রিল্যান্সিং করুন।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments