সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং কি?
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি উপাদান যা ব্যবহার করে আপনার ব্যবসার পরিচিত এবং পণ্য বিশাল সংখ্যক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর সামনে উপস্থাপন করতে পারবেন। সহজভাবে বলা যায়, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বলতে বুঝায় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে মার্কেটিং করা।
তবে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং মানে শুধু আপনি শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় একাউন্ট খুলবেন আর পোস্ট করবেন তা নয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের জন্য কন্টেন্ট তৈরি করা, শেয়ার করা, ম্যানেজ করা এবং বিক্রয় বৃদ্ধির চেষ্টা করা।
নিয়মিত ছবি, ভিডিও, স্টোরিজ, লেখা এবং লাইভ ভিডিও আপনার ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়াতে এবং গ্রাহক বাড়াতে সাহায্য করবে। কন্টেন্টে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করার জন্য গ্রাহকদের উৎসাহিত করতে হবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রমোট করার আরেকটি উপায় হচ্ছে পেইড বিজ্ঞাপন প্রদান। এর মাধ্যমে খুব দ্রুত অনেক মানুষের কাছ সহজেই পৌঁছা যায়।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর গুরুত্ব
সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর গুরুত্ব যে অত্যন্ত বেশি তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সোশ্যাল মিডিয়া এমন একটি প্লেস যেখানে প্রায় সব বয়সী নারী পুরুষ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ এবং স্থানের মানুষ পাওয়া যায়। এই বিশাল সংখ্যক ব্যবহারকারীকে টার্গেট করে মার্কেটিং করতে পারল আপনি দ্রুতই ব্র্যান্ড পরিচিতি এবং পণ্যসমূহ টার্গেট গ্রাহকদের কাছে তুলে ধরতে পারবেন। নিচে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
ওয়েবসাইটে ট্রাফিক নিয়ে আসা
সোশ্যাল মিডিয়ায় ওয়েবসাইটের লিংক শেয়ার করার মাধ্যমে আপনি আপনার ওয়েবসাইটে প্রচুর পরিমাণে ট্রাফিক নিয়ে আসতে পারবেন। নিয়মিত কন্টেন্ট শেয়ার করে অনুসারীদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে পারলে ওয়েবসাইটে ট্রাফিক আনা কঠিক কোন কাজ নয়।
বিক্রয় বৃদ্ধি
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর বড় সুবিধা হচ্ছে এর মাধ্যমে আপনি সহজেই বিক্রয় বাড়াতে পারবেন। যেমন আপনি আপনি ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে অল্প খরচেই বিশাল পরিমাণ মানুষের কাছে আপনার পণ্য সম্পর্কে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে পারবেন।
আপনি যত বেশি গ্রাহকের কাছে আপনার পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে পারবেন তত বেশি আপনার বিক্রয় বাড়ার সম্ভাবনা বাড়বে। তবে এজন্য আপনাকে ফেসবুকে কিভাবে বিজ্ঞাপন দিতে হয় তা জানতে হবে।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকে নিজস্ব মার্কেটপ্লেস আছে যেখানে আপনি আপনার পণ্য ক্রয় বিক্রয় করতে পারবেন।
ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সহজেই গ্রাহকদের কাছে ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি করা যায়। কিভাবে সেটা করবেন?
ধরেন আপনি একজন মোটর গাড়ির পার্টস ব্যবসায়ী। আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একটা ফেসবুক পেজ আছে যেখানে আপনি আপনার মোটর গাড়ি এবং পার্টস নিয়ে বিভিন্ন কন্টেন্ট তৈরি করবেন।
এক সময় দেখবেন আপনার পেজে এই সম্পর্কিত অনুসারীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে। তারা আপনার কন্টেন্ট দেখার পাশাপাশি আপনার ব্র্যান্ডের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে। গ্রাহকদের ফিডব্যাক গ্রহণ করা, সমস্যার সমাধান করা এবং তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা ব্র্যান্ডের প্রতি আগ্রহী করে তোলার অন্যতম উপায়।
গ্রাহকদের সাথে টেকসই সম্পর্ক গড়া
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্ট, সরাসরি মেসেজ, কমেন্টস ইত্যাদির মাধ্যমে গ্রাহকদের সাথে সহজেই যোগাযোগের ক্ষেত্র তৈরি করা যায়।
আপনি যখন গ্রাহকদের সাথে এভাবে পোস্ট, ভিডিও, লাইভ, রিলস, কমেন্টস, মেসেজ ইত্যাদির মাধ্যমে গ্রাহকদের সাথে মতবিনিময় করবেন, তাদের ফিডব্যাক নিবেন, তাদের প্রশ্নের সমাধান দিবেন এবং গ্রাহকদের পরামর্শ অনুযায়ী পণ্য এবং সার্ভিসের উন্নয়ন করবেন তখন গ্রাহকদের সাথে আপনার সম্পর্কটা হবে খুবই টেকসই।
আরও পড়ুন: কন্টেন্ট মার্কেটিং কি? কিভাবে কন্টেন্ট মার্কেটিং করবেন? গাইডলাইন।
সোশ্যাল মিডিয়া পরিসংখ্যান
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্করা প্রতিদিন গড়ে ২.২৫ ঘন্টা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যয় করেন।
এক জরিপে দেখা গেছে ৭০% মানুষ তাদের পছন্দের ব্র্যান্ডকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রেকোমেন্ডেড করেছে।
ফেসবুকের ব্যবহারকারীরা মাসে গড়ে ১২ টি বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে।
৮১% মানুষ পণ্য ও সেবা গবেষণার ক্ষেত্রে ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করেন।
টুইটার (X) ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৮০% তাদের টুইটে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের রিপ্লাইকে ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করেন।
একটি সফল সোশ্যাল মিডিয়া স্ট্র্যাটেজির জন্য যা যা প্রয়োজন
প্রত্যেকটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সোশ্যাল মিডিয়া স্ট্র্যাটেজির অবশ্যই ভিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এখানে কিছু কমন বিষয় আছে যা আপনাকে একটি সফল সোশ্যাল মিডিয়া স্ট্র্যাটেজি তৈরি করতে সাহায্য করবে। এগুলো হচ্ছেঃ
গ্রাহক সম্পর্কে জানা
আপনার টার্গেট গ্রাহকরা কোন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে, কখন তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি সময় ব্যয় করে, কোন ধরণের কন্টেন্ট তারা বেশি পছন্দ করে এসব বিষয়ে ভালভাবে জেনে তারপর সোশ্যাল মিডিয়া স্ট্র্যাটেজি ঠিক করতে হবে।
কন্টেন্ট স্ট্র্যাটেজি
টার্গেট গ্রাহকরা যে ধরণের কন্টেন্ট পছন্দ করে বা তাদের প্রয়োজন সে ধরণের কন্টেন্ট নিয়মিত তৈরি করা এবং অবশ্যই আপনাকে কন্টেন্টের মান বজায় রাখতে হবে। কন্টেন্টের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং মানসম্মত কন্টেন্ট তৈরি করতে পারলে প্রচুর অনুসারি তৈরি করা যায়।
কন্টেন্ট তৈরি করার ক্ষেত্রে একটা বিষয় আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। সেটা হচ্ছে আপনি শুধু নিজ ব্যবসার কথা বললে মানুষের আগ্রহ খুব বেশি দিন ধরে রাখতে পারবেন না। আপনাকে একটা নিয়ম মেনে চলতে হবে সেটা হচ্ছে কন্টেন্টেরঃ
৭০% হবে তথ্যবহুল অংশ;
২০% হবে মনস্তাত্ত্বিক অংশ;
১০% হবে প্রচারণার অংশ;
তথ্যবহুল অংশে বিভিন্ন বিষয় থাকতে পারে যেমনঃ শিক্ষা, উপদেশ, কিভাবে করবেন এই ধরণের বিষয়, সাম্প্রকিত পরিসংখ্যান, নতুন আপডেট ইত্যাদি।
মনস্তাত্ত্বিক অংশে থাকতে পারে নিজ ব্যবসার পরিবেশ, মূল্যবোধ, অর্জন, উৎসাহব্যঞ্জক বিষয়, বিনোদন ইত্যাদি।
প্রচারণার অংশে আপনি আপনার ব্যবসার পণ্য বা সেবা সম্পর্কে সরাসরি প্রচার করবেন।
এই নিয়ম মেনে যদি আপনি আপনার কন্টেন্ট স্ট্র্যাটেজি ঠিক করতে পারেন তাহলে আপনার শ্রোতাদের আগ্রহ ধরে রাখতে পারবেন।
ব্র্যান্ডকে পরিচিত করা
আপনার মার্কেটিং এর একটা বড় উদ্দেশ্য থাকবে মানুষের কাছে ব্র্যান্ডের পরিচিতি পৌঁছে দেওয়া। যারা জানে তাদের সামনে আরও ভালভাবে ব্র্যান্ডকে উপস্থাপন করা এবং জানে না এরকম মানুষের কাছে ব্র্যান্ড পরিচিতি তুলে ধরা। সোশ্যাল মিডিয়া ব্র্যান্ড পরিচিতি বাড়ানোর একটা বড় মাধ্যম।
পারফর্মেন্স মূল্যায়ন
সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার কন্টেন্ট কেমন পারফর্ম করছে সেটা অবশ্যই আপনাকে মূল্যায়ন করতে হবে। নিয়মিত এনালিটিক্স দেখতে হবে। অনুসারি প্রবৃদ্ধি কেমন হচ্ছে, মানুষের সম্পৃক্তটা কেমন হচ্ছে, টার্গেট গ্রাহকরা আপনার কন্টেন্ট দেখছে কিনা, তারা কেমন ফিডব্যাক দিচ্ছে এসব বিষয় মূল্যায়ন করতে হবে।
আরও পড়ুন: ফেসবুক ফেসবুক অ্যাডস কি? স্টেপ বাই স্টেপ গাইডলাইন।
যেসব প্লাটফর্ম ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করবেন
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করার জন্য বেশ কিছু প্লাটফর্ম আছে। সেগুলো হচ্ছেঃ
ফেসবুক
ইউটিউব
টিকটক
ইন্সটাগ্রাম
লিংকডইন (LinkedIn)
টুইটার (X)
ফেসবুক
নিচে এগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ
ফেসবুক
সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যে ফেসবুক হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম। বর্তমানে ৩.০৭ বিলিয়ন মানুষ প্রতি মাসে ফেসবুক ব্যবহার করছে। কিছু দেশ ছাড়া সারা বিশ্বের নানা বয়সী মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করছে।
শুধু ব্যবহারকারীরাই নয় প্রায় সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ফেসবুকে একাউন্ট আছে। কারণ এই প্লাটফর্মে সব ধরণের গ্রাহক পাওয়া যায়। এখানে আপনি যা পাবেনঃ
- ফেসবুক মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি গ্রাহকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবেন,
- ফেসবুক মার্কেটপ্লেস এর মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় করতে পারবেন,
- ইভেন্ট এবং মাইলস্টোন,
- লাইভ ভিডিও’র মাধ্যমে গ্রাহকদের সাথে সরাসরি আলোচনা করতে পারবেন,
- মেসেঞ্জারের মাধ্যমে গ্রাহকদের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ করতে পারবেন,
- ফেসবুক এডস এর মাধ্যমে বিশাল পরিমাণ গ্রাহকের কাছে পণ্য পৌঁছে দিতে পারবেন,
ইউটিউব
ইউটিউব আরেকটি বিশাল প্লাটফর্ম। প্রতি মাসে ২.৭ বিলিয়ন মানুষ প্রতি মাসে ইউটিউব ব্যবহার করছে। মুলত যারা ভিডিও তৈরির মাধ্যমে মার্কেটিং করতে চান তাদের জন্য ইউটিউব হচ্ছে বেস্ট প্লাটফর্ম। ইউটিউবে মার্কেটিং করার জন্য আপনাকে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে হবে। যদি ইউটিউবে কিভাবে চ্যানেল খুলতে হয় না জানলে এই আর্টিকেলটি পড়ুন।
ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিও আপলোড করে আপনি সহজেই আপনার ব্র্যান্ডকে শ্রোতাদের সামনে উপস্থাপন করতে পারবেন। নিজের ভিডিও আপলোডের পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কিত অন্যদের ভিডিওতে লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করুন। সাবস্ক্রাইবার বাড়ানোর জন্য নিয়মিত মানসম্মত ভিডিও আপলোড করুন।
ইউটিউবে ভিডিও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আপনি আপনার পণ্য এসব এবং ব্র্যান্ড পরিচিতি তুলে ধরতে পারবেন। লাইভ ভিডিও, টিউটোরিয়াল ভিডিও, তথ্যবহুল ভিডিও তৈরি করে শ্রোতাদের এনগেজমেন্ট বাড়াতে পারবেন।
ইন্সটাগ্রাম
তরুণদের মাঝে ইন্সটাগ্রাম দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বাজারে আসার পর থেকেই এর এর ব্যবহারকারী দ্রুত বাড়তে থাকে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি অনুযায়ী, ইন্সটাগ্রাম এ মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২ বিলিয়ন।
ছবি, রিলস, লাইভ, স্টোরিজ, IGTV ইত্যাদি ফরম্যাটে ইন্সটাগ্রামে পোস্ট করে আপনি মার্কেটিং করতে পারবেন। ইন্সটাগ্রামে বিজ্ঞাপন দিয়ে দ্রুত আপনি বিশাল পরিমাণ মানুষের কাছে আপনার পণ্যকে পৌঁছে দিতে পারেন।
ইন্সটাগ্রামের অর্গানিক রিচ যথেষ্ট ভাল। এই প্লাটফর্মে মার্কেটিং করে আপনি তরুণ গ্রাহক টানতে পারবেন।
লিংকডইন
লিংকডইন হচ্ছে পেশাজীবিদের একটি প্লাটফর্ম। মূলত পেশাজীবিরা অন্য পেশাজীবিদের সাথে তাদের পেশাগত অভিজ্ঞতা বিনিময় করা, নেতৃত্ব শেখা, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ শেখা এবং নিজের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য এই প্লাটফর্মে একে অন্যের সাথে যুক্ত থাকে।
এই প্লাটফর্ম ব্যবহার করে আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, কার্যক্রম, অর্জন ইত্যাদি শেয়ার করার মাধ্যমে ব্র্যান্ড পরিচিতি বাড়াতে পারেন। যেহেতু এখানে আপনি সকল পেশাজীবিদের পাচ্ছেন তাই আপনি আপনার ব্র্যান্ড পরিচিত বাড়ানোর পাশাপাশি মেধাবিদের আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রতি আকর্ষণ বাড়াতে পারবেন। এরাই আপনার ব্যবসার প্রবৃদ্ধি বাড়াতে বড় ভূমিকা পালন করবে।
টুইটার (X)
যদিও ফেসবুকের মত এত বিশাল পরিমাণ ব্যবহারকারি টুইটারে নেই তারপরও আপনি এই প্লাতফর্ম ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করতে পারবেন। টুইটারে মার্কেটিং খরচ তুলনামূলক বেশি।
টিকটক
টিকটক হচ্ছে তরুণ প্রজন্মের কাছে তুমুল জনপ্রিয় একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম। প্রতিষ্ঠার পর থেকে খুব দ্রুত এই প্লাটফর্ম তরুণদের আকৃষ্ট করে। মাত্র ৫ বছরের মধ্যেই এটি ১ বিলিয়ন ব্যবহারকারীর মাইলফলক ছুয়ে ফেলে।
এই প্লাটফর্মে আপনি ছোট ছোট ভিডিও পোস্ট করতে পারবেন। যেহেতু তরুণরা বিনোদনের উদ্দেশ্যে এই প্লাটফর্মে ভিডিও দেখার জন্য আসে তাই আপনি বিনোদনের মধ্যেই আপনার ব্র্যান্ড এবং পণ্যের প্রচারণা চালাতে পারেন।
মজাদার ভিডিও বানানোর পাশাপাশি উতসাহমূলক ভিডিও তৈরি করতে পারেন। তরুণরা এগুলোও পছন্দ করে। টিকটকেও বিজ্ঞাপন সুবিধা আছে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আপনি টার্গেট গ্রাহকদের কাছে সহজে পৌঁছাতে পারবেন।
আরও পড়ুন: টিকটক থেকে আয় করুন ৭ টি উপায়ে
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করার উপায়
সোশ্যাল মিডিয়া স্ট্র্যাটেজি ঠিক করার পর আপনাকে মার্কেটিং পরিকল্পনা করতে হবে। কারণ স্ট্র্যাটেজি বাস্তবায়ন করতে হলে সঠিক পরিকল্পনা করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একটি সঠিক পরিকল্পনা একটি সফল মার্কেটিং এর পূর্ব শর্ত। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করার উপায় হচ্ছেঃ
১. প্রথমেই আপনার টার্গেট গ্রাহক কারা সেটি নির্ধারণ করুন।
২. আপনার লক্ষ্য কি সেটা নির্ধারণ করুন। এসব লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছেঃ ব্র্যান্ডকে মানুষের কাছে পরিচিত করা;
- ওয়েবসাইটে ভিজিটরের পরিমাণ বাড়ানো;
- লিড তৈরি করা,
- পণ্য বিক্রয় বাড়ানো ;
- গ্রাহক সেবা বৃদ্ধি করা;
৩. আপনার সম্ভাব্য গ্রাহকরা যে প্লাটফর্ম বেশি ব্যবহার করে আপনাকে সেই প্লাটফর্মকে ফোকাস করে কার্যক্রম চালাতে হবে। যেমন আপনি যদি একেবারে তরুণদের টার্গেট করে মার্কেটিং করতে চান তাহলে ইন্সটাগ্রাম, টিকটক এর মতো প্লাটফর্ম বেছে নিন।
৪. নিয়মিত পারফর্মেন্স মনিটর করুতে হবে। এনালিটিক্স দেখে কিভাবে আপনি আপনার পারফর্মেন্স আরও ভাল করবেন সেই পরিকল্পনা আপনাকে আগে থেকেই ঠিক করতে হবে।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং টিপস
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি, পরিকল্পনা, প্লাটফর্ম এসব বিষয়ে জানলেন। এখন আপনাদের কিছু টিপস দিচ্ছি যদি অনুসরণ করতে পারেন তাহলে ভাল কিছু হবে বলে আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি।
কন্টেন্টে বৈচিত্রতা আনুন
একঘেয়েমি মানুষের ভাল লাগে না। একই ধরণের জিনিস মানুষ যখন বার বার দেখে তখন মানুষ সেটার স্বাভাবিকভাবেই আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। এজন্য পাঠকদের মনোযোগ ধরে রাখার জন্য আপনাকে কন্টেন্ট তৈরি করার সময় বৈচিত্রতা রাখতে হবে।
পাঠকদের জন্য মূল্যবান এবং তথ্যবহুল কন্টেন্ট তৈরি করে তাদের আকর্ষণ ধরে রাখা যায়। এসব কন্টেন্টের মধ্যে রয়েছেঃ
- পাঠকদের বিভিন্ন বিষয়ে টিপস দেওয়া। যেমন আপনি যদি শরীর চর্চার পাঠক টার্গেট করে থাকেন
- তাহলে তারা কিভাবে শরীর ফিট রাখবে এই বিষয়ে বিভিন্ন টিপস দিতে পারেন।
- ‘কিভাবে করবেন’ এই ধরণের বিষয় নিয়ে কন্টেন্ট তৈরি করুন;
- স্থানীয় এবং ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কিত খবর;
- ইভেন্ট, পোলস (Polls), প্রতিযোগিতার আয়োজন করুন;
- বিভিন্ন ধরণের আপডেট এবং ঘোষণা;
ধারাবাহিক থাকুন
ধারাবাহিকতা একটা বড় বিষয়। আজকে পোস্ট দিলেন আবার তিনদিন পর আরেকটা পোস্ট তাহলে পাঠকদের এনগেজমেন্ট কমে যাবে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর এলগরিদম এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যা ধারাবাহিক ভাবে পোস্ট দেয় এমন একাউন্টগুলোকে প্রমোট করে।
অনুসারীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা
অনুসারীদের এনগেজমেন্ট বাড়ানোর একটা বড় উপায় হচ্ছে তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা। তারা যখন আপনার পোস্টে লাইক, কমেন্ট, মেনশন বা শেয়ার দিবে দিবে তখন আপনার কাজ হবে তাদের কার্যক্রমের সাড়া দেওয়া।
পোস্টে কমেন্ট দিলে রিপ্লাই দেওয়া। শেয়ার করলে ধন্যবাদ দেওয়া।
অনুসারীদের কোন সমস্যার সমাধানের প্রয়োজন আছে কিনা তা জানতে চাওয়া।
তাদেরকে রিভিউ দিতে উৎসাহিত করা। মোট কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মার্কেটিং এ সফল হতে হলে অনুসারীদের সাথে অবশ্যই যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে।
আকর্ষণীয় ছবি এবং ভিডিও আপলোড
অনুসারীদের এনগেজমেন্ট বাড়িয়ে ব্র্যান্ডের প্রচারণার জন্য আকর্ষণীয় ছবি এবং ভিডিও খুবই কার্যকরী উপায়।
আপনি নিজেকে দিয়েও এটি যাচাই করতে পারবেন। আকর্ষণীয় ছবি এবং ভাল এডিটিং করা ভিডিও দেখলে আপনি কি করেন? আপনি কি এড়িয়ে যান নাকি দেখেন। আমি নিশ্চিত অন্য সবার মত আপনিও সেই পোস্টে সম্পৃক্ত হবেন।
সামাজিক প্রামাণক নিয়ে পোস্ট করুন
সামাজিক প্রামাণক হচ্ছে সন্তুষ্ট গ্রাহকদের ভাল রিভিউ, কোন সংস্থা থেকে সার্টিফিকেট পাওয়া ইত্যাদি । আপনি যখন ভাল রিভিউগুলো নিয়ে নিয়মিত পোস্ট করবেন বা কোন স্বীকৃত সংস্থা থেকে পাওয়া সার্টিফিকেট নিয়ে পোস্ট দিবেন তখন দেখবেন অনেকেই আপনার সেসব পোস্টে সম্পৃক্ত হবে। এমনকি তারা নিজেরাও তখন ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
রিসাইকেল (Recycle) করুন
আপনার কোন ছবি, লেখা বা ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করার পর সেটাকে লিংকডইন, টুইটার(X), ইন্সটাগ্রাম বা টিকটকে পোস্ট করুন। যদি দেখেন কোন কন্টেন্ট ভাইরাল হয়ে গেছে তাহলে মাসে একবার সেটি আবার পোস্ট করুন।
ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কিত অন্যদের অনুসরণ করুন
সোশ্যাল মিডিয়াতে যদি মার্কেটিং করে সফল হতে চান তাহলে আপনার ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কিত অন্যদেরও অনুসরণ করতে হবে।
অনেক বিষয় থাকে যা আপনার একার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। যেমন সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এর কথা বলা যায়। এটি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। নতুন নতুন বিষয় যুক্ত হচ্ছে। আপনি যদি নতুন ট্রেন্ড এর সাথে তাল মেলাতে না পারেন তাহলে পিছিয়ে যাবেন।
আপনাকে আপনার প্রতিযোগীদের কাছ থেকে আইডিয়া নিয়ে নিতে হবে। আপনার কন্টেন্টে কোন কিছুর অভাব আছে কিনা তা বের করতে হবে। সর্বোপরি চেষ্টা করতে হবে প্রতিযোগীদের চেয়ে আরও ভাল কন্টেন্ট তৈরি করা।
বিজ্ঞাপন দেওয়া
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করতে হলে অবশ্যই আপনাকে কিছু খরচ করে এসব প্লাটফর্মে বিজ্ঞাপন দিতে হবে।
আপনি যদি মনে করেন কোন খরচ না করে ফ্রিতে অনেক মানুষের কাছে আপনার পণ্য পৌঁছে দিবেন তাহলে আপনি প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাবেন।
বিজ্ঞাপনের সুবিধা হচ্ছে আপনি খুব দ্রুত টার্গেট কাস্টমারের কাছে পৌঁছাতে পারবেন। কারণ এসব প্লাটফর্মের বিজ্ঞাপন মডেল এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে আপনি খুব সহজেই নির্দিষ্ট বয়স, লিঙ্গ, স্থান, পছন্দ, পেশার মানুষের কাছে আপনার ব্র্যান্ড বা পণ্য পৌঁছে দিতে পারবেন।
পরিশেষে এটাই বলবো আপনি যদি আমাদের এই গাইডলাইন মেনে মার্কেটিং করতে পারেন তাহলে অবশ্যই সফল হবেন বলে আমরা মনে করি।