গুগল এডস কি?
গুগল এডস হচ্ছে একটি পিপিসি (পে পার ক্লিক) বিজ্ঞাপনী প্লাটফর্ম যেখানে একজন বিজ্ঞাপন দাতা ক্লিক ক্লিক প্রতি পেমেন্টের শর্তে বিজ্ঞাপন প্রদান করে থাকে।
আপনি যখন গুগলে সার্চ করবেন তখন সার্চ রেজাল্ট পেজে অনেকগুলো লিংক প্রদর্শিত হতে দেখবেন। বিজ্ঞাপনগুলো রেজাল্ট পেজের একেবারে প্রথম দিকে প্রদর্শিত হয়। সেখানে বাংলায় প্রজোজিত এবং ইংরেজিতে Sponsored লেখা থাকে। নিচের ছবিতেই সেটি দেখতে পাবেন।
এটি এমন প্লাটফর্ম যার মাধ্যমে আপনি টার্গেট গ্রাহকের কাছে সহজেই পৌঁছাতে পারবেন। গুগল এডস ওয়েবসাইটে ভিজিটর আনা, ফর্ম পূরণ, সার্ভে সম্পন্ন করা এবং বিক্রয় বাড়াতে সাহায্য করে।
কেন গুগল এডস ব্যবহার করবেন?
আপনি কি জানেন প্রতিদিন কি পরিমাণ মানুষ গুগল সার্চ ব্যবহার করে? প্রায় ৮.৫ বিলিয়ন! তার মানে বুঝতেই পারছেন কি পরিমাণ মানুষ গুগল ব্যবহার করছে।
আপনি যদি অর্গানিকভাবে গুগলে র্যাংক করাতে চান তাহলে আপনাকে সঠিকভাবে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন করতে হবে। এর জন্য আপনার অনেক সময় ব্যয় করতে হবে।
আবার দেখা যায় প্রথম পেজে র্যাংক পেলেও সেটা বেশিদিন স্থায়ী থাকে না। অন্য ওয়েবসাইট ভাল কন্টেন্ট তৈরি করলে সেই ওয়েবসাইট আপনার স্থান দখল করে ফেলতে পারে।
গুগল এডস এর সুবিধা হচ্ছে আপনি যখন বিজ্ঞাপন প্রদান করবেন তখন আপনার ওয়েবসাইট একেবারে প্রথমদিকে প্রদর্শন করবে। এর ফলে প্রচুর ক্লিক পাওয়া যাবে। যত ক্লিক তত ভিজিটর এবং তত বেশি কনভার্সন হওয়ার সম্ভাবনা।
গুগল এডস এর কিছু সুবিধা আছে যেমনঃ
১. আপনি নির্দিষ্ট এলাকা, পছন্দ, বয়স, লিঙ্গ, ডিভাইস, সুনির্দিষ্ট কিওয়ার্ড ইত্যাদি টার্গেট করে গুগলে বিজ্ঞাপন দিতে পারবেন।
২. আপনি প্রতিদিন, প্রতি মাস বা বিজ্ঞাপন প্রতি কত খরচ করবেন সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। বিজ্ঞাপনে ক্লিক পড়লেই কেবল আপনি পেমেন্ট করবেন।
৩. আপনার লিংকে কি পরিমাণ ক্লিক পড়ছে এবং কনভার্সন কেমন হচ্ছে সেটা ট্র্যাক করতে পারবেন।
৪. গুগল এডস এর বড় সুবিধা হচ্ছে গুগল আপনাকে আপনার সার্ভিস সম্পর্কিত সার্চে ফোকাস করার সুযোগ করে দিবে। এর ফলে আপনি প্রতিনিয়ত আপনার টার্গেট ফিল্টার করার সুযোগ পাবেন যা আপনার পণ্য বা সেবাকে সুনির্দিষ্ট গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিবে এবং বিক্রয় বৃদ্ধি করবে।
৫. local targeting and customizable budgets টুলের মাধ্যমে আপনি ক্রয় করতে ইচ্ছুক এমন গাহকের কাছে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে পারবেন।
গুগল এডস কিভাবে কাজ করে?
গুগলে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে গুগল এডস একাউন্ট তৈরি করতে হয় এবং একটি ক্যাম্পেইন অবজেকটিভ সেট করতে হয়। তারপর গুগল এড তৈরি করে সেটা সক্রিয় করতে হবে।
তবে বিজ্ঞাপন সক্রিয় করার আগে বাজেট সেট করতে হবে এবং টার্গেট অডিয়েন্স ঠিক করতে হয়। ব্যবহারকারীর সেটিংস অনুযায়ী গুগল বিজ্ঞাপন সক্রিয় করে। বিজ্ঞাপনদাতারা গুগলের বিভিন্ন প্লাটফর্ম যেমন জিমেইল, ইউটিউব, ম্যাপ, গুগল সার্চ, এডসেন্স পাবলিশার্সদের প্লাটফর্ম এ বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে পারে।
গুগলের পিপিসি এড ক্যাম্পেইনের নিয়ম অনুসারে কেউ যখন বিজ্ঞাপনে ক্লিক করে তখন বিজ্ঞাপন বাজেট থেকে অর্থ কাটা হয়।
আরও পড়ুন: ফেসবুক অ্যাডস কি? স্টেপ বাই স্টেপ গাইডলাইন।
গুগল এডস এর প্রকারভেদ
বিভিন্ন ধরণের গুগল এডস আছে, যেমন:
১. সার্চ এডস
গুগল এডস এর প্রকারভেদের মধ্যে একটা হচ্ছে সার্চ এডস। সার্চ এড প্রদর্শনের স্থানগুলো হচ্ছে গুগল সার্চ রেজাল্ট পেজ, গুগল ম্যাপ, গুগলের সার্চ পার্টনার, গুগল শপিং ইত্যাদি। ব্যবহারকারীরা যখন বিজ্ঞাপনদাতার বিড করা কিওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করে গুগল তখন সেই সার্চে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে।
সার্চ এডস গ্রাহকের আচরণকে টার্গেট করে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে থাকে। এর মানে হচ্ছে ব্যবহারকারী যখন সুনির্দিষ্ট বিষয় সার্চ করতে থাকে তখন গুগল তার আচরণ অনুযায়ী তার সামনে উপযুক্ত বিজ্ঞাপনটি প্রদর্শন করে যা প্রতিষ্ঠানটির লিড জেনারেশন এর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে।
২. ডিসপ্লে এডস
ডিসপ্লে এডস হচ্ছে ভিজুয়াল এডস যা গুগলের ডিসপ্লে নেটওয়ার্ক যেমন জিমেইল, ইউটিউব এবং বিভিন্ন পার্টনার ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয়।
ডিসপ্লে এডস এর মাধ্যমে আপনি গ্রাহকদের কাছে ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারবেন। সাধারণত রিটার্গেটিং এর ক্ষেত্রে ডিসপ্লে এডস ব্যবহার করা হয়৷
৩. শপিং এডস
ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের জন্য শপিং এডস খুব কার্যকর। গুগল বিজ্ঞাপনদাতার অনলাইন স্টোর থেকে পণ্য সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে এবং সঠিক সময়ে সঠিক গ্রাহকের কাছে তা উপস্থাপন করে। এর ফলে আপনি সহজেই উপযুক্ত গ্রাহক খুঁজে পাবেন।
ডিমান্ড জেন (Demand Gen)
এই ধরণের বিজ্ঞাপনগুলো জিমেইল, ইউটিউব এবং গুগল ডিসকভার এর মাধ্যমে প্রাপ্ত গ্রাহকদের টার্গেট করে গুগল প্রদান করে থাকে। এটাকে আপনি সেলস ফানেলের প্রথম ধাপ হিসেবে অবিহিত করতে পারেন।
ব্যবহারকারীরা ইউটিউব শর্টস বা ইন স্ট্রিম ভিডিও, হোম এবং পরবর্তী পেজে প্রবেশ করার সময় এই বিজ্ঞাপনগুলো দেখে থাকে। ডিসকভার বিজ্ঞাপনগুলো প্রদর্শিত হয় ব্যবহারকারীদের ডিসকভার ফিডে, আর জিমেইল বিজ্ঞাপনগুলো প্রদর্শিত হয় Social and Promotions ট্যাবে।
ইউটিউব এডস
আমরা সবাই ইউটিউবে ভিডিও দেখার সময় ভিডিওর মাঝে বিজ্ঞাপন দেখতে পাই এটাই হচ্ছে ইউটিউব এডস। ভিডিও বিজ্ঞাপনগুলো সাধারণত দর্শকদের বেশি আকর্ষণ করে তাই ইউটিউব এডস এর রিটার্ন অনেক বেশি আসে।
৬. অ্যাপ এডস
অ্যাপ এডস এর মাধ্যমে গুগল প্লে স্টোর, গুগল সার্চ এবং ইউটিউবে টার্গেট গ্রাহকদের কাছে অ্যাপ প্রমোট করা হয়। এই এড ফরম্যাটগুলো মোবাইলকে অগ্রাধিকার দিয়েই তৈরি করা হয়।
পারফরম্যান্স ম্যাক্স ( Performance Max)
গুগল এডস এর একেবারে নতুন ফরম্যাট। এআই দ্বারা পরিচালিত এই ফরম্যাটটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিজ্ঞাপনদাতার প্রয়োজন অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট গ্রাহকের কাছে বিজ্ঞাপনটি প্রদর্শন করে।
আপনাকে লক্ষ্য নির্ধারণ করে এসেট আপলোড করতে হবে এবং আপনার টার্গেট গ্রাহক কারা সেটি সেট করতে হবে। আপনার দেওয়া তথ্য এবং চাহিদা অনুযায়ী গুগল স্বয়ংক্রিয়ভাবে টার্গেট গ্রাহকের কাছে বিজ্ঞাপনটি দেখাবে।
মূলত যারা বুঝতে পারেন না তাদের বিজ্ঞাপনটি কোথায় দিলে তাদের বিক্রয় বৃদ্ধি পাবে তাদের জন্য এই ফরম্যাটটি পারফ্যাক্ট।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল মার্কেটিং কি? ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমগুলো কি কি?
গুগল এডস ভালভাবে বুঝার জন্য আপনাকে যেসব টার্ম সম্পর্কে জানতে হবে
- Ad Extension
- AdRank
- Bidding
- Click-Through Rate
- Conversion Rate
- Display Network
- Impression
- Keywords
- PPC
- Quality Score
- Ad Extensions
Ad Extension
এর মাধ্যমে আপনি বিজ্ঞাপনে বিভিন্ন ধরণের তথ্য যুক্ত করতে পারবেন যার কারণে আপনার বিজ্ঞাপনে ক্লিকের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
বিভিন্ন ধরণের এড এক্সটেনশন আছে যেমন :
Location extensions
Callout extensions
Structured snippet extensions
Price extensions
Lead form extensions
Affiliate location extensions
AdRank
আপনার বিজ্ঞাপনটি কোথায় প্রদর্শিত হবে সেটি নির্ধারণ করা হচ্ছে AdRank এর কাজ। আপনার বিড একাউন্ট যত বেশি হবে র্যাংক তত ভাল হবে। AdRank নির্ধারণের সূত্র হচ্ছে সর্বোচ্চ বিড * কোয়ালিটি স্কোর।
Bidding
গুগল এডস বিডিং সিস্টেমে উপর চলে। এই সিস্টেম অনুযায়ী বিজ্ঞাপনদাতারা প্রতি ক্লিকের বিপরীতে সর্বোচ্চ পেমেন্টের পরিমাণ নির্ধারণ করে। গুগল সর্বোচ্চ বিডারকে প্রথমদিকে র্যাংক এর ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।
বিডিং এর ৩ টি অপশন থাকে:
১. CPC (cost-per-click): প্রতি ক্লিকের বিপরীতে পেমেন্ট নির্ধারণ।
২. CPM (cost per mile) : প্রতি ১ হাজার ইম্প্রেশনের জন্য আপনি যে পরিমাণ অর্থ প্রদান করবেন।
৩. CPE (cost per engagement): কোন ব্যবহারকারী আপনার বিজ্ঞাপনে আপনার নির্ধারণ করা কোন কাজের বিপরীতে আপনি যে পরিমাণ অর্থ প্রদান করেন।
Click-Through Rate
আপনার বিজ্ঞাপনটি যত মানুষের সামনে প্রদর্শন করা হবে তার বিপরীতে কত মানুষ সেই বিজ্ঞাপনে ক্লিক করেছে তার হারকে বুঝায়। যেমন ১,০০০ ইম্প্রেশন এর বিপরীতে ১০০ জন ক্লিক করলে CTR হবে ১০%।
Conversion Rate
আপনার ল্যান্ডিং পেজে এসে কতজন ভিজিটর ক্রয় করেছে বা আপনার নির্ধারণ করা কোন কার্যক্রম যেমন ফরম পূরণ, সার্ভেতে অংশ নেওয়া ইত্যাদি সম্পন্ন করেছে তার হারকে কনভারসন রেট বলে। এই রেট বেশি হওয়ার মানে হচ্ছে মানুষ আপনার ল্যান্ডিং পেজ পছন্দ করছে এবং আপনাকে বিশ্বাস করছে।
Display Network
ডিসপ্লে নেটওয়ার্ক হচ্ছে সেসব ওয়েবসাইটকে বুঝানো হয় যারা গুগলের বিজ্ঞাপন বসানোর জন্য তাদের ওয়েবসাইটের একটা স্থান গুগলের জন্য বরাদ্দ রাখে।
Impression
আপনার বিজ্ঞাপনটি কতবার সার্চ ইঞ্জিনে প্রদর্শিত হয়েছে সেটা জানা যায় ইম্প্রেশন থেকে। ইম্প্রেশন যত বেশি হবে তত বেশি ক্লিক পড়ার সম্ভাবনা থাকবে।
যত আপনি দেখেন আপনার ইম্প্রেশন বেশি কিন্তু ক্লিক কম তাহলে বুঝবেন আপনার বিজ্ঞাপনটির কোয়ালিটি ভাল না। এর দ্বারা আপনি বেশি পরিমাণ মানুষ আকর্ষণ করতে পারেন নাই।
PPC
PPC (Pay-per-click) হচ্ছে বিজ্ঞাপনদাতা প্রতি ক্লিকের বিপরীতে কি পরিমাণ অর্থ পে করে। এটি গুগল এডস ক্যাম্পেইনের একটি কমন পদ্ধতি।
Quality Score
কোয়ালিটি স্কোর দ্বারা আপনার বিজ্ঞাপনের ক্লিক থ্রো রেট (CTR), কিওয়ার্ড এর প্রাসঙ্গিকতা, ল্যান্ডিং পেজের কোয়ালিটি এবং সার্চ রেজাল্টে অতীত পারফরম্যান্স এসব বিষয় মূল্যায়ন করা হয়। কোয়ালিটি স্কোর ভাল থাকা মানে উপরের বিষয়গুলোতে আপনার পারফরম্যান্স ভাল। কোয়ালিটি স্কোর ভাল হবে AdRank ভাল হবে।
Keywords
কিওয়ার্ড হচ্ছে সেই ওয়ার্ড যে ওয়ার্ডের উপর আপনি বিড করবেন। অর্থাৎ একজন সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারকারী যখন আপনার বিড করা কিওয়ার্ড দিয়ে কোন কিছু খুঁজবে তখন গুগল আপনার বিজ্ঞাপনটি সেই ব্যবহারকারীর সামনে প্রদর্শন করবে।
যেমন একজন ব্যবহারকারী সার্চ করছে কক্সবাজারের সেরা আবাসিক হোটেল কোনটি? আপনার কিওয়ার্ড হতে পারে ” কক্সবাজারের সেরা আবাসিক হোটেল”। কিওয়ার্ড নির্বাচন করার আগে আপনাকে অবশ্যই কিওয়ার্ড রিসার্চ করতে হবে। বিস্তারিত পড়ুন : কিওয়ার্ড রিসার্চ কি? কিভাবে কিওয়ার্ড রিসার্চ করবেন?
কিভাবে গুগল এডস ব্যবহার শুরু করবেন?
গুগল এডস ব্যবহার শুরু করা কঠিন কোন কাজ নয়। কয়েকটি ধাপে আপনি গুগল এডস ব্যবহার শুরু করতে পারেন। ধাপগুলো হচ্ছে:
ধাপ ১: গুগল এডস এ একাউন্ট তৈরি করা
প্রথমে গুগল এডস হোমপেজ প্রবেশ করুন। সেখানে উপরে সর্বডানে থাকে “Start Now.” বাটনে ক্লিক করুন। এই বাটনে ক্লিক করলে আপনার বিদ্যমান গুগল একাউন্টে রিডাইরেক্ট করা হবে। আর যদি গুগলে কোন একাউন্ট না থাকে তাহলে নতুন একাউন্ট খুলতে হবে।।
ধাপ ২: ক্যাম্পেইন তৈরি করা
সাইনআপ করার পর আপনাকে যে পেজে নিয়ে যাবে সেখানে উপরের দিকে সর্ববামে থাকা Create বাটনে ক্লিক করলেই তিনটা অপশন দেখাবে যেমন Campaign, Conversion action, Asset । আপনি যেহেতু এড ক্যাম্পেইন শুরু করবেন তাই Campaign এ ক্লিক করেন।
আপনার ক্যাম্পেইনের অবজেক্টিভ নির্বাচন করুন। তারপর ক্যাম্পেইন টাইপ নির্বাচন করে Continueবাটনে ক্লিক করুন। অবজেক্টিভ নির্বাচন করার পর সেই অবজেক্টিভ অনুসারে অন্যান্য অপশন আসে তাই অপশন অনুসারে আপনাকে সামনে এগোতে হবে।
বিজ্ঞাপনে ক্লিক করার পর ভিজিটররা যে ওয়েবসাইটের প্রবেশ করবে সেই ওয়েবসাইটের ঠিকানা প্রদান করুন। ক্যাম্পেইনের একটি নাম দিন।
ধাপ ৩: গুগল এডস এর লক্ষ্য নির্ধারণ করুন
আপনি যে বিজ্ঞাপন প্রদান করবেন তার অবজেক্টিভ কি হবে সেটা নির্ধারণ করতে হবে। উপরের ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন আপনাকে ৭ টি অবজেক্টিভ দেওয়া হয়েছে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী অবজেক্টিভ সেট করুন। তবে গুগল প্রতিনিয়ত তাদের সিস্টেম আপডেট করে। ভবিষ্যতে হয়তো আরও অবজেক্টিভ যুক্ত করতে পারে।
ধাপ ৪: Bidding সেট করা
বিজ্ঞাপন তৈরি করার আগে আপনাকে Bidding সেট করতে হবে। আপনি কোন বিষয় ফোকাস করে বিড করতে চান সেই অপশনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৫: ক্যাম্পেইন সেট করা
এখানে আপনাকে Network, Location, language, Audienc, Broad Match Keywords এসব সম্পর্কে তথ্য দিতে হবে।
আপনি গুগলের যেকোন নেটওয়ার্কে বিজ্ঞাপন প্রদান করতে পারবেন।
আপনি ঠিক কোন যায়গায় বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে চান সেটি নির্বাচন করুন। এটি হতে পারে কোন মহাদেশ, নির্দিষ্ট দেশ, সিটি ইত্যাদি।
আপনি কোন ভাষাভাষী মানুষের কাছে বিজ্ঞাপনটি প্রদর্শন করতে চান সেটি language অপশনে ঠিক করুন।
Audienc সেকশনে আপনার টার্গেট অডিয়েন্স কারা সেটি নির্বাচন করুন। এখানে আপনি বয়স, লিঙ্গ, স্থান, পছন্দ ইত্যাদি ভেদে সুনির্দিষ্ট অডিয়েন্স সেট করতে পারবেন।
আপনি চাইলে Broad Match Keywords সেট করতে পারেন। এটি আপনাকে ভাল র্যাংকিং পেতে সাহায্য করবে।
ধাপ ৬: কিওয়ার্ড যুক্ত করা এবং বিজ্ঞাপন তৈরি করা
বিজ্ঞাপন তৈরির পর আপনাকে আপনার ব্র্যান্ডের সাথে ম্যাচ করে এমন কিওয়ার্ড নির্বাচন করতে হবে। এখানে গুগল কিছু কিওয়ার্ড এর সাজেশন দিবে। আপনার কাছে যদি কিওয়ার্ড এর আইডিয়া না থাকে তাহলে গুগল কিওয়ার্ড সাজেশন থেকে কিওয়ার্ড নির্বাচন করতে পারবেন।
কিওয়ার্ড দেওয়ার পর আপনাকে বিজ্ঞাপন তৈরি করতে হবে। এটি সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং পার্ট। আপনার বিজ্ঞাপনের কোয়ালিটির উপর নির্ভর করবে আপনি কি পরিমাণ রিটার্ন পাবেন।
ধাপ ৭: বাজেট সেট করা
এই পর্যায়ে আপনাকে বাজেট সেট করতে হবে। এখানে আপনি প্রতিদিন কি পরিমাণ বাজেট খরচ করতে চান সেটি উল্লেখ করুন। ক্যাম্পেইন অনুযায়ী বিভিন্নভাবে বাজেট সেট করা যায়।
ধাপ ৮ : পেমেন্ট সম্পর্কিত তথ্য প্রদান
এটা হচ্ছে গুগল এডস এর সর্বশেষ ধাপ। এই ধাপে আপনাকে পেমেন্ট সম্পর্কিত তথ্য প্রদান করতে হবে। তারপরেই আপনার বিজ্ঞাপন সক্রিয় হবে।
বিজ্ঞাপন সক্রিয় হওয়ার পর আপনি আরো কিছু কাজ করতে পারেন। যেমন:
১. গুগল এডস এ গুগল এনালিটিক্স যুক্ত করতে পারেন। এর ফলে আপনি আপনার এড ক্যাম্পেইন পারফরম্যান্স খুব সহজেই ট্র্যাক করতে পারবেন।
২. Urchin Tracking Module (UTM) যুক্ত করতে পারেন। এর মাধ্যমে আপনি সুনির্দিষ্ট লিংক এর কার্যক্রম ট্র্যাক করতে পারবেন। এড ক্যাম্পেইন শুরু করার সময়ই UTM কোড যুক্ত করে ফেলা ভাল নাহলে প্রতিটি এড লিংকের জন্য আলাদা কোড যুক্ত করতে হবে।
একটি সফল গুগল এড তৈরি করার জন্য নিচের টিপসগুলো অনুসরণ করুন
১. দৃষ্টি আকর্ষণ করে এমন এড কপি তৈরি করুন। এড এর মূল বিষয়বস্তু অর্থাৎ আপনার পণ্য বা সার্ভিস সংক্ষিপ্ত এবং সহজ ভাষায় উপস্থাপন করুন। লেখা অবশ্যই প্রাসঙ্গিক হতে হবে। শুধুমাত্র দৃষ্টি আকর্ষক ফিচার উল্লেখ করুন। যেমন আপনার সার্ভিসটি এখন ১০,০০০ মানুষ ব্যবহার করছে। তাহলে আপনি এই বিষয়টি ফোকাস করতে পারেন তাহলে অনেকেই আগ্রহী হবে।
২. আপনার পণ্য বা সার্ভিসের সাথে প্রাসঙ্গিক সকল কিওয়ার্ড নির্বাচন করুন। আপনি যত বেশি প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড ব্যবহার করবেন তত বেশি র্যাংক পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। বেশি কিওয়ার্ড ব্যবহার করলে কিছু সুবিধা পাওয়া যায় যেমন phrase match, broad match, or exact match হয়ে যেতে পারে। লং টেইল কিওয়ার্ড ব্যবহার করতে পারেন। লং টেইল কিওয়ার্ড র্যাংকিং পেতে সাহায্য করে।
৩. উপযুক্ত কল টু অ্যাকশন (CTA) সেট করুন। আপনি বিজ্ঞাপন দিলেন কিন্তু কোন CTA নাই তাহলে ভিজিটর পাবেন না। পরিষ্কারভাবে CTA উল্লেখ করুন। যেমন : এখনই কিনুন, আপনার অফার দেখুন, এখনই ফ্রি ট্রায়াল নিন ইত্যাদি।
৪. এড কপিতে শুধু পণ্য, সার্ভিস বা ফিচার না দিয়ে ক্লায়েন্টের অভিজ্ঞতা বা রিভিউ এর চুম্বক অংশও জুড়ে দিতে পারেন। এর মাধ্যমে আপনি সহজেই অনেক ক্লায়েন্ট আকর্ষণ করতে পারবেন।
৫. ল্যান্ডিং পেজ বিক্রয় বাড়াতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। তাই আপনাকে এমনভাবে ল্যান্ডিং পেজ তৈরি করতে হবে যেন গ্রাহকরা তাদের সকল প্রশ্নের উত্তর পায় এবং ফিচার রিভিউ ইত্যাদি দেখে যেন ক্রয় করতে উৎসাহিত হয়।
৬. Negative Keyword ব্যবহার করুন। এটি ব্যবহার করার সুবিধা হচ্ছে এটি আপনার বিজ্ঞাপন অপ্রাসঙ্গিক যায়গায় প্রদর্শন থেকে রক্ষা করবে। ধরেন আপনি ফ্রেশ মাছ বিক্রি করেন। তাহলে আপনি ফ্রেশ মাংশকে নেগেটিভ কিওয়ার্ড দেন তাহলে গুগল শুধু মাছের গ্রাহকদের কাছেই আপনার বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করবে।
উপসংহার
এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় গুগল এডস বিজ্ঞাপনের জগতে একটি শক্তিশালী প্লাটফর্ম। এই প্লাটফর্ম ব্যবহার করে আপনি আপনি অল্প খরচে সহজেই অনেক বেশি রিটার্ন আনতে পারবেন। তবে এজন্য আপনাকে গুগল এডস এর বিভিন্ন কৌশল ভালভাবে রপ্ত করতে হবে। এটা একদিনে হবে না। এজন্য আপনাকে অনেক সময় দিতে হবে এবং বিভিন্ন কৌশল পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে হবে কোন কৌশল থেকে সবচেয়ে বেশি রিটার্ন আসে।