HomeBusiness Guidelinesডিলারশিপ ব্যবসা কি? ডিলারশিপ ব্যবসার চুক্তিপত্র তৈরি করার নিয়ম।

ডিলারশিপ ব্যবসা কি? ডিলারশিপ ব্যবসার চুক্তিপত্র তৈরি করার নিয়ম।

ডিলারশিপ ব্যবসা কি?

ডিলারশিপ ব্যবসা হলো এমন একটি ব্যবসায়িক মডেল যেখানে একজন ব্যবসায়ী অন্য কোন কোম্পানির পণ্য বা সেবা তাদের অনুমোদিত প্রতিনিধি (Authorized Dealer) হিসেবে বিক্রি করে থাকেন। এখানে বিক্রেতা ব্যবসায়ীকে বলা হয় ডিলার।

সহজভাবে বললে, ডিলারশিপ হচ্ছে এমন ব্যবসা যেখানে একটি কোম্পানি তাদের নির্দিষ্ট পণ্য/সেবা ডিলারকে বিক্রির অনুমতি দেয় এবং ডিলার সেই পণ্যের বিতরণ, মার্কেটিং, সাপোর্ট ও বিক্রি বিষয়ক সকল কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

এটাকে Brand + Dealer Partnership ভিত্তিক ব্যবসাও বলা যায় যেখানে আপনি কোম্পানির ব্র্যান্ড, প্রোডাক্ট, সাপ্লাই-চেইন ও মার্কেটিং সাপোর্ট ব্যবহার করে নিজের একটি ব্যবসা গড়ে তুলতে পারবেন।

যে কারণে ডিলারশিপ ব্যবসা জনপ্রিয়

  • এই ব্যবসার ঝুঁকি তুলনামূলক কম,
  • ব্র্যান্ড রেডিমেড হওয়ায় মার্কেটিং খরচ কম,
  • পণ্য বা সেবার কাস্টমার চাহিদা আগে থেকেই থাকে,
  • লাভের মার্জিন নির্দিষ্ট থাকে,

ডিলারশিপ ব্যবসার সুবিধা ও অসুবিধা

ডিলারশিপ ব্যবসার সুবিধাসমূহ 

১) ব্র্যান্ড রেডিমেড তাই মার্কেটিং খরচ কম,

২) অন্য ব্যবসার তুলনায় রিস্ক কম কারণ পণ্য পরীক্ষিত থাকায় মানুষের কাছে দ্রুত গ্রহনযোগ্যতা পায়,

৩) নিয়মিত বিক্রি হওয়ার কারণে ক্যাশফ্লো ভাল থাকে,

৪) কোম্পানির সাপোর্ট পাওয়া যায়, তাই সমস্যা মোকাবিলা করা সহজ হহ।

ডিলারশিপ ব্যবসার অসুবিধাসমূহ 

১) লাভের মার্জিন অনেক ক্ষেত্রে কম হয়, বিশেষ করে FMCG, সিমেন্ট, রড, LPG। এসব ক্ষেত্রে ৩% থেকে 8% লাভ হয়। 

২) খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বাকিতে বিক্রি করার কারণে টাকা আটকে থাকে।

৩) কোম্পানির বিভিন্ন চাহিদা থাকে যা আপনাকে পূরণ করতে হবে।

আরও পড়ুন: পাইকারি ব্যবসা কি? শুরুর করার ধাপ, সুবিধা অসুবিধা, লাভ-খরচসহ বিস্তারিত

ডিলারশিপ ব্যবসার আইডিয়া

যারা এই ধরণের ব্যবসা শুরু করতে চান তারা প্রথমেই ডিলারশিপ ব্যবসার আইডিয়া খুঁজে থাকেন। কারণ আইডিয়া ছাড়া আপনি ব্যবসা শুরু করতে পারবেন না। নিচে কতগুলো ডিলারশিপ ব্যবসার আইডিয়া দেওয়া হলোঃ 

১) মোবাইল ও ইলেকট্রনিকস ডিলারশিপ ব্যবসার আইডিয়া

  • স্যামসাং, ওয়ালটন ডিলারশিপ, ভিভো, ইনফিনিক্স, রিয়েলমি ডিলারশিপ,
  • ফ্রিজ, টিভি, এয়ার কন্ডিশনার ডিলারশিপ
  • মোবাইল অ্যাক্সেসরিজ ডিলারশিপ

২) মোটরবাইক / স্কুটার ডিলারশিপ ব্যবসার আইডিয়া

Yamaha, Bajaj, TVS, HERO ডিলারশিপ

৩) কৃষি যন্ত্রপাতি ডিলারশিপ ব্যবসার আইডিয়া

পাওয়ার টিলার, হারভেস্টার, থ্রেসার ডিলারশিপ

৪) সোলার প্যানেল ও ইকো-এনার্জি প্রোডাক্ট ডিলারশিপ

হোম সোলার সিস্টেম, সোলার লাইট, পাওয়ার ব্যাঙ্ক ডিলারশিপ

৫) নির্মাণসামগ্রী (Construction Materials) ডিলারশিপ ব্যবসার আইডিয়া

  • সিমেন্ট Holcim, Crown, Bashundhara ডিলারশিপ
  • রড (MS/Deformed Bar) ডিলারশিপ
  • পেইন্ট Asian Paints, Berger ডিলারশিপ

৬) এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার ডিলারশিপ ব্যবসার আইডিয়া

* Bashundhara LPG, Omera LPG, BM Energy ডিলারশিপ

৭) ফুড & FMCG ডিলারশিপ ব্যবসার আইডিয়া

  • Nestlé, ACI, Danish, প্রাণ কোম্পানির ডিলারশিপ, ফ্রেশ কোম্পানির ডিলারশিপ,
  • সাবান, ডিটারজেন্ট, বিস্কুট, নুডলস ইত্যাদি পণ্যের ডিলারশিপ

৮) অটোমোবাইল স্পেয়ার পার্টস ডিলারশিপ ব্যবসার আইডিয়া

মোটরসাইকেল, গাড়ি, ট্রাক ইত্যাদির যন্ত্রাংশের ডিলারশিপ

৯) মেডিকেল ও হেলথ ইকুইপমেন্ট ডিলারশিপ ব্যবসার আইডিয়া

  • BP machine, Nebulizer, Glucose meter ডিলারশিপ
  • Lab equipment ডিলারশিপ

১০) প্লাস্টিক প্রোডাক্ট ডিলারশিপ ব্যবসার আইডিয়া

হাউজহোল্ড প্লাস্টিক (ড্রাম, বালতি, চামচ, কন্টেইনার ইত্যাদি) ডিলারশিপ

ডিলারশিপ ব্যবসায় লাভ কেমন থাকে?

ডিলারশিপ ব্যবসায় লাভ নির্ভর করে পণ্যের ধরন, ব্র্যান্ড, এলাকাভিত্তিক চাহিদা, এবং ক্রেডিট সিস্টেমের উপর। তবে সাধারণভাবে একেক সেক্টরে লাভের পরিমাণ একেক রকম হয়।

ডিলারশিপ ব্যবসায় লাভের পরিমাণ (সেক্টরভিত্তিক হিসাব)

১) FMCG পণ্য (খাবার, সাবান, কসমেটিকস

লাভ: ৩% %

যেমনঃ প্রাণ ডিলারশিপ, ACI, কোহিনূর, ড্যানিশ, নেসলে ইত্যাদি।

ব্যবসার বৈশিষ্ট্য: এসব পণ্যে বিক্রি বেশি, মার্জিন কম বিক্রি হবে প্রতিদিন

মাসে ৫ থেকে ১৫ লাখ টাকার বিক্রয় করতে পারলে ৩০,০০০৯০,০০০ টাকা লাভ হতে পারে।

২) প্লাস্টিক পণ্য ডিলারশিপ

লাভ: ১০% ২৫%

যেমনঃ বালতি, ঝুড়ি, বক্স, চেয়ার, টেবিল, জগ, ড্রাম।

ব্যবসার বৈশিষ্ট্য: লাভের পরিমাণ বেশি নিয়মিত চাহিদা থাকে কাঁচামালের দাম কমবেশি হলে লাভ বাড়ে বা কমে

ভালো পরিমাণে বিক্রি হলে মাসে ৫০,০০০২ লাখ টাকা লাভ করা যায়।

৩) ইলেকট্রনিকস (মোবাইল, ফ্রিজ, টিভি, এসি)

লাভ: ৮% ১৫%

উদাহরণ:

ফ্রিজ/এসি: ১০১৪%

মোবাইল: ৪% (কিছু ব্র্যান্ড ৩% দেয়)

টিভি: ৮১২%

মাসে ১৩ লাখ টাকা লাভ সম্ভব।

৪) মোটরবাইক ডিলারশিপ

লাভ: ৫% % (বাইক)

সার্ভিস ও স্পেয়ার পার্টসে লাভ: ২০% ৩৫%

মোটরসাইকেল ডিলারশিপের মূল লাভ আসে

সার্ভিস

পার্টস

ওয়ারেন্টি কাজ

মাসিক ১৩ লাখ বা আরও বেশি হওয়া সম্ভব।

৫) LPG গ্যাস সিলিন্ডার ডিলারশিপ

লাভ: ২০৪০ টাকা প্রতি সিলিন্ডার

(ব্র্যান্ড ভেদে বেশি/কম হতে পারে)

কিছু স্থানে ৫০৭০ টাকা পর্যন্তও পাওয়া যায়।

দিনে ৫০ সিলিন্ডার হলে মাসে ৩০,০০০৫০,000+ লাভ।

৬) নির্মাণসামগ্রী (সিমেন্ট, রড, পেইন্ট)

সিমেন্ট

লাভ: ১০১৫ টাকা প্রতি ব্যাগ

আবার ২০ টাকা পর্যন্তও হতে পারে।

রড

লাভ: প্রতি টনে ৮০০১,৫০০ টাকা

পেইন্ট

লাভ: ৮% ১৮%

বড় পাইকারিতে মাসে ৫০,০০০২,০০,০০০ টাকা+ হতে পারে।

৭) মেডিকেল ইকুইপমেন্ট (BP Machine, Nebulizer, Glucose Meter)

লাভ: ১৫% ৩০%

মান কম হলে ৩০৪০% মার্জিনও পাওয়া যায়। কিন্তু ব্র্যান্ডেড পণ্যে ১৫১৮% মাসে ৬০,০০০১.৫ লাখ লাভ সম্ভব।

৮) কৃষিযন্ত্রপাতি ডিলারশিপ

লাভ: 8% ১৫%

যন্ত্রপাতির দাম বেশি হওয়ায় সামান্য % হলেও টাকা অনেক আসে। যেমনঃ পাওয়ার টিলার, কম্বাইন হারভেস্টার, থ্রেসার। বড় মেশিনে প্রতি বিক্রয়ে ১০,০০০৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত লাভ।

কোন ডিলারশিপে লাভ সবচেয়ে বেশি?

১) প্লাস্টিক পণ্যঃ ১০%২৫%

২) পেইন্টঃ %১৮%

৩) মেডিকেল ইকুইপমেন্টঃ ১৫%৩০%

৪) স্পেয়ার পার্টসঃ ২০%৩৫%

৫) কৃষি যন্ত্রপাতিঃ উচ্চমূল্যের কারণে লাভ বেশি হয়

আরও পড়ুন: ২০২৫ সালে শুরু করতে পারবেন এমন ১০ টি স্মার্ট ব্যবসার আইডিয়া

ডিলারশিপ ব্যবসা শুরু করার ধাপসমূহ

ডিলারশিপ ব্যবসা শুরু করা তুলনামূলক সহজ, তবে সঠিক পরিকল্পনা ও কোম্পানি নির্বাচন খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিচে ধাপে ধাপে একটি প্র্যাক্টিক্যাল গাইড দিচ্ছি যা অনুসরণ করে আপনি সহজেই এই ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। নিচে ডিলারশিপ ব্যবসা শুরু করার ধাপসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ 

ধাপ ১: কোন পণ্যের ডিলারশিপ নেবেন তা নির্ধারণ করুন

প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিন আপনি কোন ধরণের পণ্যের ডিলারশিপ নিয়ে কাজ করতে চান। প্রথম দিকে একটা পণ্য নিয়ে কাজ করাই উত্তম। একাধিক পণ্য নিয়ে শুরু করলে সেটা আপনার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আপনি যেসব পণ্য নিয়ে কাজ করতে পারেন:

  • FMCG (ফুড, কসমেটিকস, হাউজহোল্ড)
  • ইলেকট্রনিকস
  • সিমেন্ট/রড
  • মোটরসাইকেল
  • LPG গ্যাস
  • মেডিকেল ইকুইপমেন্ট
  • প্লাস্টিক পণ্য
  • কৃষি যন্ত্রপাতি

পণ্য নির্বাচনে আপনার এলাকায় কোন পণ্যের চাহিদা বেশি সেটা বিবেচনায় রাখুন।

ধাপ ২: বাজার গবেষণা করুন (Market Research)

এই ধরণের ব্যবসা নামার আগে অবশ্যই বাজার নিয়ে রিসার্চ করে নিবেন কারণ কিছু না জেনেই কোন ব্যবসা শুরু করলে কখনো ভাল করতে পারবেন না। বাজার গবেষণায় যেসব বিষয় বিবেচনা করবেন:

  • আপনার এলাকায় কোন ব্র্যান্ড জনপ্রিয়?
  • প্রতিদ্বন্দ্বী ডিলার কয়জন?
  • গ্রাহক কারা? (হোলসেলার, রিটেইলার, ভোক্তা)
  • লাভের মার্জিন কেমন হতে পারে?
  • পণ্যের সরবরাহ ও পরিবহন সুবিধা কেমন?

ধাপ ৩: বাজেট ঠিক করুন

বাজেট হচ্ছে একটি প্রজেক্ট সম্পন্ন করতে আপনাকে কত টাকা খরচ হতে পারে তার হিসেব করা। বাজার গবেষণার পর এই ধাপে আপনাকে বাজেট ঠিক করতে হবে। সঠিক বাজেট ব্যবস্থাপনা যেকোন ব্যবসার জন্য  খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই বাজেট প্রনয়ণে খুব সতর্ক থাকতে হবে।   

ডিলারশিপে বাজেট ঠিক করার ক্ষেত্রে ভিন্নভাবে চিন্তা করতে হবে কারণ এখানে ব্র্যান্ড অনুযায়ী বাজেট ভিন্ন হবে। যেমন:

  • ছোট FMCG ডিলারশিপ: ১৫ লাখ টাকা
  • প্লাস্টিক/হাউজহোল্ড: ২৮ লাখ টাকা
  • ইলেকট্রনিকস: ১০২০ লাখ টাকা
  • মোটরবাইক: ২০৫০ লাখ টাকা
  • সিমেন্ট/রড: ১০৩০ লাখ টাকা

আপনার বাজেট অনুযায়ী ব্র্যান্ড নির্বাচন করুন। সামর্থের বাইরে গিয়ে কখনো বিনিয়োগ করা ঠিক নয়।

ধাপ ৪: কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করুন

বাজেট ঠিক করার পর যেসব ব্র্যান্ডের ডিলারশিপ নিতে চান, তাদের অফিস বা ওয়েবসাইটে গিয়ে ইনফরমেশন সংগ্রহ করুন। ডিলারশিপ নেওয়ার জন্য যেসব প্রয়োজনীয় বিষয় আছে সেগুলো সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করুন।

এক্ষেত্রে আপনাকে যা জানতে হবেঃ 

  • ডিলারশিপ ফি আছে কিনা?
  • প্রথম অর্ডারের মিনিমাম পরিমাণ কত?
  • কতো % কমিশন (margin) দিবে?
  • রিটার্ন পলিসি আছে কি?
  • ব্র্যান্ড কি মার্কেটিং সাপোর্ট দেবে?
  • এলাকায় আগে থেকে ডিলার আছে কিনা?

সবকিছু ঠিক থাকলে কোম্পানি আপনার ট্রেড লাইসেন্স, ট্যাক্স সার্টিফিকেট, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, ব্যাংক সলভেন্সি ইত্যাদি বিষয়ে ডকুমেন্টস চাইতে পারে।

ধাপ ৫: লোকেশন ও গুদাম (Godown) ঠিক করুন

ডিলারশিপে মাল রাখার জন্য একটি স্টোর প্রয়োজন। একটা লোকেশন সিলেক্ট করুন যেখান থেকে সহজে বিভিন্ন যায়গায় মালামাল সাপ্লাই দেওয়া যায়। রাস্তার পাশে দোকান বা ডিপো নিলে রিটেইলাররা সহজে আসতে পারবে। ছোট ডিলারশিপ হলে ২০০ থেকে ৪০০ স্কয়ার ফিট এবং বড় আকারে করতে চাইলে ৪০০+ স্কয়ার ফিট যায়গা নিতে পারেন।

ধাপ ৬: রিটেইলার নেটওয়ার্ক তৈরি করুন

ডিলারশিপ ব্যবসার সাফল্য রিটেইলার নেটওয়ার্কের উপর নির্ভর করে। আপনার নেটওয়ার্ক যত শক্তিশালী হবে তত আপনার বিক্রয় বাড়বে।

নেটওয়ার্ক তৈরি করার জন্য নিচের কাজগুলো করতে পারুন:

  • আশেপাশের মুদি দোকান/ফার্মেসি/হোলসেল দোকানে গিয়ে পরিচিতি করুন,
  • আপনার পণ্যের সুবিধা গুণাগুণ বুঝিয়ে বলুন,
  • কিস্তি সুবিধা দিতে পারেন,
  • অফার/ডিসকাউন্ট দিন,
  • ডেলিভারি সাপোর্ট দিন,

ধাপ ৭: লজিস্টিকস ও ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা করুন

পণ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য লজিস্টিক ও ট্রান্সপোর্ট এর ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য যা লাগবেঃ 

  • ভ্যান, পিকআপ বা অটোভ্যান
  • ডেলিভারি বয়
  • নিয়মিত বিল সংগ্রহকারী
  • গুদাম রক্ষক
  • সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ
  • অ্যাকাউন্টস ম্যান
  • ডেলিভারি স্টাফ

ইনভেন্টরি সিস্টেমও খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইনভেন্টরি ভালভাবে ম্যানেজ করার জন্য ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন।

ধাপ ৯: ক্যাশফ্লো ম্যানেজমেন্ট

এই ধরণের ব্যবসায় সবচেয়ে বড় সমস্যা ক্যাশ আটকে যাওয়া। তাই এই বিষয়ে খুব সতর্ক থাকতে হবে। সঠিকভাবে ক্যাশফ্লো ম্যানেজমেন্ট করতে পারলে ব্যবসায় সহজে তারল্য সংকট দেখা দিবে না। সঠিকভাবে ক্যাশফ্লো ম্যানেজমেন্ট করতে যা করতে হবেঃ 

  • বেশি বাকি না দেওয়া
  • নিয়মিত কালেকশন করার চেষ্টা করা,
  • ইনভেন্টরি কম বেশি না রাখা,
  • কোম্পানির ইনভয়েস সময়মতো পরিশোধ করা,

ডিলারশিপ ব্যবসার চুক্তিপত্র কিভাবে করবেন?

ডিলারশিপ ব্যবসার  চুক্তিপত্র

ডিলারশিপ ব্যবসার চুক্তিপত্র (Dealership Agreement) খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় কারণ এর মাধ্যমে আপনার এবং কোম্পানির দায়িত্ব, অধিকার, শর্ত ও আর্থিক লেনদেন সবকিছু লিখিতভাবে নির্ধারিত হবে। নিচে সহজ ভাষায় পুরো প্রক্রিয়াটি বুঝিয়ে দিলাম।

ধাপ ১: কোম্পানি প্রদত্ত অফিশিয়াল Agreement Draft সংগ্রহ করুন

প্রায় সব কোম্পানিরই প্রস্তুতকৃত Dealership Agreement Template থাকে। এই চুক্তিপত্রে বিভিন্ন বিষয় থাকে যেমন:

  • Terms & Conditions
  • Payment Policy
  • Supply Rules
  • Territory Rights
  • Return Policy

প্রথমে এসব বিষয় ভালোভাবে পড়ে নিন। সবগুলো পড়ে বুঝার চেষ্টা করুন যে কোম্পানির দেওয়া বিভিন্ন কন্ডিশন আপনার ব্যবসার জন্য কতটুকু সুবিধাজনক হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হবেন। 

ধাপ ২: নিজ তথ্য ও ডকুমেন্ট প্রস্তুত রাখুন

ডিলারশিপ চুক্তির আপনাকে নিজস্ব তথ্য এবং প্রয়োজনীয় যেসব ডকুমেন্ট আছে সেগুলো প্রস্তুত রাখতে হবে যাতে কোম্পানি চাইলেই সেগুলো জমা দিতে পারেন। সাধারণত যেসব ডকুমেন্ট লাগে সেগুলো হচ্ছেঃ 

  • ট্রেড লাইসেন্স
  • NID
  • TIN Certificate
  • ছবি (PP Size)
  • দোকান/গুদামের ঠিকানা
  • ব্যবসার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট (কিছু কোম্পানি চায়)
  • ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন (যদি প্রয়োজন হয়)

ধাপ ৩: চুক্তির প্রতিটি পয়েন্ট ভালোভাবে বুঝে নিন

চুক্তিপত্রে যেসব পয়েন্ট থাকবে সেগুলো ভালভাবে বুঝে নিন।

চুক্তিতে সাধারণত যেসব পয়েন্ট থাকেঃ 

১) Dealership Type

  • Exclusive Dealer?
  • Non-exclusive Dealer?
  • আপনার এলাকায় অন্য ডিলার থাকবে নাকি থাকবে না?

২) Territory / Area Coverage

আপনি কোন থানা/উপজেলা/জোনে পণ্য সরবরাহ করতে পারবেন তা লিখা থাকবে।

৩) Commission / Margin Structure

  • বিক্রয়ের বিপরীতে কত % লাভ তার উল্লেখ থাকা?
  • Bonus/Target Commission কেমন?
  • Company কি প্রতি পণ্যে আলাদা profit প্রদান করে

৪) Payment Terms

পেমেন্ট Cash বা Credit হবে?

কত দিনের মধ্যে বিল পরিশোধ করতে হবে?

Security money দিতে হবে? দিলে কত টাকা?

৫) Product Return & Replacement Policy

  • Damage হলে কি হবে?
  • কোন পণ্য Expire হলে কি হবে? Unsold stock কোম্পানি নেবে কিনা?

৬) Delivery & Transport

* পণ্য কোম্পানি পৌঁছে দেবে নাকি আপনি নিয়ে আসবেন?

* Transport cost কে দেবে?

৭) Advertising & Branding Support

সাইনবোর্ড, প্যাকেট, POS materials ইত্যাদি কি কোম্পানি দিবে?

৮) Contract Duration

চুক্তির মেয়াদ কতদিন হবে সেটি উল্লেখ থাকবে। নবায়ন করার পদ্ধতিও বলা থাকবে।

৯) Contract Termination

কোন পরিস্থিতিতে চুক্তি বাতিল হবে তা উল্লেখ থাকবে। সেক্ষেত্রে Security money ফেরত কিভাবে পাবেন তা উল্লেখ থাকতে হবে। 

ধাপ ৪: নিজের কোন শর্ত থাকলে যোগ করুন

অনেক ডিলার অন্ধভাবে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে ফেলেন এটি একটি ভুল কাজ। চুক্তি পড়ার পর আপনার যদি মনে হয় কোন বিষয় যুক্ত করা আপনার ব্যবসার ক্ষেত্রে সুবিধাজনক হবে তাহলে সেটি যুক্ত করার চেষ্টা করুন। 

চাইলে আপনার সুবিধার জন্য নিচের শর্তগুলো যোগ করতে পারেনঃ 

  • পণ্যের স্টক সময়মতো দিতে হবে,
  • আপনার এরিয়াতে অন্য ডিলার না দেওয়া (exclusive),
  • Damage/Expiry replacement বাধ্যতামূলক,
  • Target না পূরণ হলেও penalty না রাখা ইত্যাদি।

ধাপ ৫: উভয় পক্ষ চুক্তি স্বাক্ষর

সবকিছু ঠিক থাকলে উভয়পক্ষ চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে।  সাধারণত ২ কপি Agreement তৈরি হয়। তার মধ্যে ১ কপি কোম্পানির কাছে থাকবে এবং ১ কপি আপনার কাছে থাকবে। 

স্বাক্ষর করার সময়ঃ 

  • উভয় পক্ষের স্বাক্ষর লাগবে,
  • কোম্পানির সিলমোহর লাগবে,
  • আপনার ব্যবসার সিল লাগবে,
  • ২ জন সাক্ষী (অনেক সময় প্রয়োজন হয়)

আপনি চাইলে চুক্তিপত্র নোটারি করতে পারেন। তবে এটা ঐচ্ছিক বিষয়।

ডিলারশিপ চুক্তিপত্রে যেসব ভুল করবেন না

  • ভালভাবে চুক্তিপত্র না পড়ে স্বাক্ষর করে ফেলা, 
  • লাভের % সম্পর্কে পরিষ্কার না হওয়া, 
  • রিটার্ন/ড্যামেজ পলিসি না জেনে স্বাক্ষর করা,
  • ওয়ারেন্টি/গ্যারান্টি বিষয়ে ভুল বোঝা, 
  • area’s exclusive right আছে কি নেই- তা না জানা, 
  • verbal promise বিশ্বাস করে চুক্তিতে না লেখা, 

পরিশেষে 

ডিলারশিপ ব্যবসা বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ও লাভজনক একটি ব্যবসায়িক মডেল। কারণ এই ব্যবসায় নিজস্ব উৎপাদন, গবেষণা বা বড় ধরনের বিনিয়োগ ছাড়াই প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়। সঠিক কোম্পানি এবং পণ্য নির্বাচন, শক্তিশালী নেটওয়ার্ক, পরিকল্পিতভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে  যে কেউ সফলভাবে ডিলারশিপ ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে।

যদিও ব্যবসাটিতে কিছু ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে যেমন বিক্রয়ের লক্ষ্য পূরণ, ব্র্যান্ড নীতি মেনে চলা, প্রতিযোগিতা ইত্যাদি তবুও সঠিক পরিকল্পনা, যথাযথ চুক্তিপত্র, ব্যবসায়িক সৎ আচরণ এবং গ্রাহক সেবার মান বজায় রাখলে ডিলারশিপ থেকে নিয়মিত আয় করা সম্ভব।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments