অন পেজ এসইও (ON-PAGE-SEO) কি?
অন পেইজ এসইও (ON-PAGE-SEO) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ওয়েব পেজের বিভিন্ন উপাদান নির্দিষ্ট কিওয়ার্ড এর জন্য এমনভাবে অপটিমাইজ করা হয় যাতে সার্চ ইঞ্জিন সহজে বুঝতে পারে পেজটির বিষয়বস্তু কি এবং ব্যবহারকারীর জন্য কতটা উপযোগী।
মূলত ওয়েব পেজের বিভিন্ন অংশ যেমন টাইটেল ট্যাগ, হেডিং ট্যাগ, মেটা ডেসক্রিপশন, ইউরাল স্ট্রাকচার, লিংক ইত্যাদি অপ্টিমাইজ করার মাধ্যমে ওয়েব পেজকে অপটিমাইজ করা হয়। সঠিকভাবে অপটিমাইজ করতে পারলে সেটা র্যাংকিং ভাল প্রভাব ফেলে।
অন পেজ এসইও কেন গুরুত্বপূর্ণ?
অন পেজ একটি ওয়েবসাইটের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু সার্চ ইঞ্জিনকে ওয়েবসাইট সম্পর্কে ভাল ধারণা দেয় না এটি ওয়েবসাইট ভিজিটরদের সুন্দরভাবে সাইট নেভিগেট করতে সাহায্য করে।
ভালভাবে অন পেজ এসইও করলে সার্চ ইঞ্জিন সেটিকে সার্চ র্যাংকিং এ গুরুত্ব দিয়ে থাকে । ইন্টারনাল লিংকের কারণে সার্চ ক্রলাররা খুব সহজেই ওয়েবসাইটের অন্যান্য পেজ সম্পর্কে জানতে পারে এবং সেগুলোকে দ্রুত ইনডেক্স করে থাকে । ভিজিটররাও একই কারণে অন্যান্য পেজ সম্পর্কে জানতে পারে এবং ওয়েবসাইটে অনেক সময় ব্যয় করে।
কিভাবে অন পেজ এসইও (ON-PAGE-SEO) করবেন?
অন পেজ এসইও (ON-PAGE-SEO) করার জন্য আপনাকে প্রথমে অন পেজ এসইও এর উপাদান জানতে হবে। নিচে প্রতিটি উপাদান বর্ণনা করার পাশাপাশি কিভাবে অন পেজ এসইও করবেন তা আলোচনা করা হলো।

কিওয়ার্ড অপটিমাইজেশন
অন পেজ এসইও (ON-PAGE-SEO) এর জন্য ওয়েবপেইজের প্রতিটি কনটেন্টের ক্ষেত্রে সঠিক কিওয়ার্ড নির্বাচন করুন এবং সেগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করুন। আপনার টার্গেট কিওয়ার্ডগুলো নিচের উপাদানগুলোতে যুক্ত করুন যাতে গুগল আপনার ওয়েব পেজ সম্পর্কে জানতে পারে,
পেজ টাইটেল
ইউআরএল
প্রধান শিরোনাম (H1)
সাব-হেডিং (H2, H3, H4 ইত্যাদি)
প্রথম প্যারাগ্রাফসহ বডির বিভিন্ন যায়গায়
বিভিন্ন স্থানে মূল কিওয়ার্ড ব্যবহার করার ফলে গুগল সেটিকে ওয়েব পেজের মূল বিষয়বস্তু হিসেবে ধরে নেয়। যদিও আপনি একটি কিওয়ার্ডকে ফোকাস করছেন তবে গুগল এর পাশাপাশি সম্পর্কিত কিওয়ার্ডগুলোকেও র্যাংক করার জন্য বিবেচনা করে থাকে।
তবে কিওয়ার্ড ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। অপ্রয়োজনীয়ভাবে অতিরিক্ত কিওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না। শুধু সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক পাওয়ার জন্য যদি আর্টিকেলের বিভিন্ন জায়গায় অপ্রয়োজনীয়ভাবে কিওয়ার্ড ব্যবহার করেন তাহলে গুগল আপনাকে কিওয়ার্ড স্টাফিং (Keyword Stuffing) এর জন্য শাস্তি দিতে পারে।
টাইটেল ট্যাগ (Title Tag)

টাইটেল ট্যাগ হচ্ছে কন্টেন্টের প্রধান শিরোনাম যেখানে একজন সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারকারী ক্লিক করলে তাকে সরাসরি কন্টেন্টের বিষয়বস্তুতে নিয়ে যাওয়া হয়।
টাইটেল ট্যাগ এর মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী এবং সার্চ ইঞ্জিন বট কন্টেন্টের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা পায়। যদিও এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ৬১.৬% ক্ষেত্রে গুগল টাইটেল ট্যাগ কিছু পরিবর্তন করে সার্চ রেজাল্টে প্রকাশ করেছে।
ভাল টাইটেল ট্যাগ লিখার ক্ষেত্রে কিছু টিপস:
- টাইটেল ট্যাগ ৬০ থেকে ৭০ শব্দের মধ্যে হওয়া উচিত। বেশি বড় টাইটেল লিখলে সেটা সার্চ পেজে পুরোটা প্রদর্শিত হবে না।
- টাইটেল ট্যাগ এর মধ্যে মূল কিওয়ার্ড অন্তুর্ভুক্ত করুন। সার্চ ইঞ্জিন এই কিওয়ার্ডকে র্যাংকিং এর ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
- ক্লিক বাড়ানোর জন্য মিসলিডিং টাইটেল ট্যাগ দিবেন না। এটি গুগলের কাছে খুবই অপন্দের বিষয়। এই ধরণের টাইটেল ট্যাগ প্রদান করলে আপনার সাইট প্যানাল্টি খেতে পারে।
- এমন কিছু যুক্ত যা থেকে বুঝ যায় কন্টেন্টটি নতুন। যেমন বর্তমান বছর উল্লেখ করে টাইটেল লিখতে পারেন।
- টাইটেল ট্যাগে এমন কিছু লিখুন যা অন্যদের চেয়ে আপনার কন্টেন্টে সার্চ ইঞ্জিনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়।
- ইনডেক্স করতে হবে এমন প্রত্যেক পেজে টাইটেল ট্যাগ প্রদান করতে হবে।
টাইটেল ট্যাগ এর উদাহরণ
সঠিক টাইটেল:
“অনলাইন ব্যবসা শুরু করার উপায় – সম্পূর্ণ নির্দেশিকা”
ভুল টাইটেল:
“হোম | অনলাইন ব্যবসা শুরু”
(এখানে ‘হোম’ অপ্রয়োজনীয় এবং স্পষ্ট নয়।)
আরও পড়ুন: লোকাল এসইও (Local SEO) কি? লোকাল এসইও কিভাবে করা হয়?
মেটা ডিসক্রিপশন (Meta Description)

মেটা ডিসক্রিপশন হল একটি সংক্ষিপ্ত সারাংশ যা সার্চ ইঞ্জিনে আপনার ওয়েবসাইটের লিংকের নিচে প্রদর্শিত হয়। এর মাধ্যমে মূলত সার্চ ইঞ্জিনের বটকে কন্টেন্ট সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে ধারণা প্রদান করা হয়।
যদিও মেটা ডেসক্রিপশন র্যাংকিং এর ক্ষেত্রে খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করে না তবে এটি ক্লিক বাড়াতে সাহায্য করে। উপরের ছবিতে দেখতে পাচ্ছেবা backlinko কিভাবে তারা মেটা ডেসক্রিপশন লিখেছে। ডেস্ক্রিপশনের শেষে এমন একটা শব্দ লিখেছে যা আপনাকে ওই লিংকে ঢুকতে উৎসাহিত করবে। এটি সাইটে ভিজিটর বাড়ানোর একটা ভাল কৌশল।
তবে গুগল সবসময় আপনার মেটা ডেসক্রিশন প্রদর্শন করবে এমন নয়। ব্যবহারকারীর সার্চ কোয়েরি অনুযায়ী গুগল আপনার কন্টেন্টের নির্দিষ্ট অংশ মেটা ডেসক্রিশন হিসেবে প্রদর্শন করবে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ৬২.৭৮% সময় গুগল মেটা ডেসক্রিশন পুনঃলিখন করে।
মেটা ডেসক্রিপশন লেখার ক্ষেত্রে কিছু টিপস:
- মেটা ডেসক্রিশন ১৪০-১৬০ অক্ষরের মধ্যে রাখা উচিত এবং এমনভাবে লিখতে হবে যেন তা পাঠককে আকর্ষণ করতে পারে।
- এমন কিছু তথ্য যুক্ত করুন যা আপনার টাইটেল ট্যাগে নেই।
- এমনভাবে এই ট্যাগ লিখবেন যা একজন ব্যবহারকারী পরে মনে করে এই কন্টেন্টে তার প্রয়োজন অনুযায়ী তথ্য আছে। এর ফলে আপনার ক্লিক রেট বেড়ে যাবে।
- একটিভ ভয়েজে মেটা ডেসক্রিশন লিখুন।
- মেটা ডেস্ক্রিপশনে অবশ্যই মূল কিওয়ার্ড উল্লেখ করুন।
এসইও ফ্রেন্ডলি ইউআরএল (URL) স্ট্রাকচার
![]()
ছোট এবং কন্টেন্ট সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেয় এমন ইউআরএল ব্যবহার করা উচিত।
ইউআরএল এ আপনার টার্গেট কিওয়ার্ড যুক্ত করুন। গুগল সার্চ বটকে ইউআরএল কিওয়ার্ডকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কিওয়ার্ড যুক্ত করার আগে আপনাকে অবশ্যই কিওয়ার্ড রিসার্চ করে মূল কিওয়ার্ড খুঁজে বের করতে হবে। কিভাবে কিওয়ার্ড রিসার্চ করতে হয় – এই গাইডে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
তবে কিওয়ার্ড যুক্ত করলেই আপনি অনেক হাই র্যাংক পাবেন বিষয়টা এমন নয়। তবে কিওয়ার্ড থাকার কারণে ব্যবহারকারীরা বুঝতে পারবে কন্টেন্টটি তার কোয়েরির সাথে প্রাসঙ্গিক।
ইউআরএল এর গঠন উদাহরণ:
- ভুল: example.com/p=12345
- সঠিক: example.com/start-online-business
ইউআরএল এ তারিখ ব্যবহার না করে ভাল। ইউআরএল যাতে সহজবোধ্য এবং পঠনযোগ্য হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
ইউআরএল প্রধান কিওয়ার্ড যুক্ত করুন। যদি আপনার প্রধান কিওয়ার্ড start online business হয় তাহলে সেটি ইউআরএল যুক্ত করুন।
উদাহরণ:
example.com/start-online-business
ইউআরএল (URL) গুলোতে লোয়ারকেস অক্ষর ব্যবহার করা উচিত। বড় হাতের অক্ষর (Uppercase) URL-এ বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে, কারণ সার্চ ইঞ্জিন কিছু ক্ষেত্রে ক্যাপিটাল এবং স্মল লেটারকে আলাদা মনে করতে পারে।
উদাহরণ:
ভুল: example.com/Start-Online-Business
সঠিক: example.com/start-online-business
ইউআরএল (URL) এ প্রয়োজনের অতিরিক্ত শব্দ ব্যবহার না করা ভালো। যেমন “a,” “the,” “and” এর মতো স্টপ ওয়ার্ড ব্যবহার করা এড়িয়ে চলা উচিত। এটি URL কে সরল ও প্রাসঙ্গিক রাখবে।
উদাহরণ:
ভুল: example.com/start-an-online-business-tips
সঠিক: example.com/start-online-business
সার্চ ইঞ্জিন এবং ব্যবহারকারীর নিরাপত্তার জন্য আপনার সাইটে HTTPS ব্যবহার করা উচিত। Google HTTPS সাইটকে র্যাঙ্কিংয়ে প্রাধান্য দেয়।
উদাহরণ:
ভুল: http://www.example.com
সঠিক: https://www.example.com
হেডিং ট্যাগ (H1, H2, H3)

হেডিং ট্যাগ এর মাধ্যমে গুগল আপনার পেজের কন্টেন্ট ভালোভাবে বুঝতে পারে। হেডিং ট্যাগ সুন্দরভাবে বিন্যস্ত থাকলে গুগল বট এবং ব্যবহারকারী সবার জন্যই ওয়েব পেজের বিষয়বস্তু বুঝতে সুবিধা হয়।
H1 ট্যাগটি পৃষ্ঠার প্রধান শিরোনাম হিসেবে ব্যবহার করা উচিত এবং এতে প্রধান কীওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। প্রতিটি ওয়েব পেজের জন্য একটি করে H1 ট্যাগ থাকতে হবে।
ওয়েব পেজের প্রধান যে পয়েন্ট থাকবে সেটিকে H2 ট্যাগ প্রদান করুন।
আর H3 আপনার প্রধান পয়েন্টের সাপোর্ট হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এভাবে নিচের দিকের হেডিং ট্যাগগুলো উপরের দিকের ট্যাগের সাপোর্ট হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
হেডিং ট্যাগে প্রাসঙ্গিক কীওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এটি কেবল পাঠকদের জন্যই নয়, সার্চ ইঞ্জিনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সার্চ ইঞ্জিন হেডিং ট্যাগে থাকা কীওয়ার্ডগুলিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে থাকে। ভালভাবে কীওয়ার্ড রিসার্চ করে আপনি আপনার পোষ্ট এবং টাইটেল ট্যাগের জন্য প্রাসঙ্গিক কীওয়ার্ড খুব সহজেই বের করতে পারেন ।
অন পেজ এসইও এর জন্য সঠিকভাবে ইমেজ অপটিমাইজেশন করুন
ইমেজ কিন্তু আপনার ট্রাফিকের আরেকটা বড় উৎস। সঠিকভাবে ইমেজ করতে পারলে সেটি গুগলের ইমেজ সার্চে প্রদর্শিত হয় এবং এর মাধ্যমে প্রচুর ট্রাফিক পাওয়া যায়।
ইমেজ অপ্টিমাইজ করার জন্য ইমেজকে কম্প্রেস করে ফাইল ছোট রাখুন। বড় ইমেজ লোডিং স্পিড কমিয়ে দেয়।
ইমেজ ফাইলের একটি প্রাসঙ্গিক নাম প্রদান করুন। যেমন আপনি একটি গোলাপ ফুলের ছবি আপলোড করবেন তাহলে নাম দিন rose.jpg কিন্তু এর বদলে আপনি যদি IMG_855745.jpg ব্যবহার করেন তাহলে সেটি গুগলের বুঝতে সমস্যা হবে এবং র্যাংকিং এ প্রভাব ফেলবে।
ছবিতে alt text (alternative text) ব্যবহার করুন। alt text ব্যবহার করা হয় মূলত গুগল বটের জন্য। এর ফলে সার্চ বট ইমেজের বিষয় বস্তু বুঝতে পারে।
ইন্টারনাল লিংকিং
ইন্টারনাল লিংক হচ্ছে একটা পেজের কন্টেন্টের সঙ্গে অন্য একটা প্রাসঙ্গিক পেজের কন্টেন্টের যোগসূত্র স্থাপন। ইন্টারনাল লিংকের মাধ্যমে আপনি আপনার অন্য পেজগুলোকে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করতে পারবেন এবং সেগুলোতেও ভিজিটর নিয়ে যেতে পারবেন।
ইন্টারনাল লিংক আপনার পেজের ইনডেক্স হতেও অনেক সাহায্য করবে। কারণ গুগল বট ইন্টারনাল লিংকের মাধ্যমে অন্যান্য পেজে সহজে প্রবেশ করতে পারে।
ইন্টারনাল লিংক দেওয়ার ক্ষেত্রে ভিন্নতা রাখতে হবে। প্রাসঙ্গিক নয় এমন পেজের লিংক দেওয়া ঠিক নয়। সবসময় চেষ্টা করবেন ভাল পেজের লিংক করার জন্য।

উপরের ছবিতে আপনি দেখতে পাচ্ছেন আমি কিভাবে এই পেইজটার সাথে ওয়েবসাইটের আরেকটা পেইজের লিঙ্ক করে দিয়েছি। এর ফলে আমার পাঠকরা আমার এই আর্টিকেল পড়ার পাশাপাশি আমার লিঙ্ক করা আর্টিকেলেও প্রবেশ করতে পারে । এর ফলে আমি একজন পাঠককে অনেক সময় ধরে আমার ওয়েবসাইটে ধরে রাখতে পারবো যা আমার এসইও পারফর্মেন্স বাড়াতে সাহায্য করবে ।
এছাড়া ইন্টারনাল লিঙ্ক ব্যবহার করার ফলে সার্চ ইঞ্জিনের ক্রলারগুলো সহজেই এসব লিঙ্কের মাধ্যমে পুরো ওয়েবসাইটে ঘুরে বেড়াতে পারে। এসইও গাইডলাইনে এসইও সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন । আপনি খেয়াল করলে দেখবেন এসইও গাইডলাইনেও আমি একটি ইন্টারনাল লিঙ্ক ব্যবহার করেছি ।
এক্সটার্নাল লিংক
প্রতিটি ওয়েব কন্টেন্টে এক্সটার্নাল লিংক ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এটিকে গুগল গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এর মাধ্যমে আপনি আপনার ওয়েব সাইটের শ্রোতাদের অন্যান্য ভাল ওয়েবসাইটের তথ্যবহুল লেখা পড়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন যা গুগল খুব ইতিবাচকভাবে দেখে থাকে।
অন পেজ এসইও (On-Page-SEO) এর ক্ষেত্রে এক্সটার্নাল লিংক র্যাংকিং ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। আপনার ওয়েব পেজে যদি বিশ্বাসযোগ্য অথেনটিক সাইটের লিংক থাকে তাহলে গুগলের কাছে আপনার সাইটের বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।
মোবাইল ফ্রেন্ডলি ডিজাইন
বর্তমান স্মার্টফোনের এই যুগে বেশিরভাগ মানুষ এখন হাতে থাকা স্মার্টফোনের মাধ্যমেই তাদের বেশিরভাগ কাজ করে থাকে। আপনি যদি গুগল সার্চ কনসোল, গুগল অ্যানালিটিক্স অন্য অ্যানালিটিক্স ব্যবহার করে থাকেন তাহলে ড্যাশবোর্ডে দেখে থাকবেন আপনার ওয়েবসাইটের কম্পিউটার এর চেয়ে মোবাইলের ব্যবহারকারী বেশি।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে মোট ওয়েবসাইট ট্রাফিকের ৬০% এর চেয়ে বেশি আসে মোবাইল থেকে। ৯২.৩% ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে।
এসব কারণে গুগল মোবাইল ফ্রেন্ডলি ওয়েবসাইটকে গুরুত্ব দিচ্ছে। যেসব ওয়েবসাইট মোবাইল ফ্রেন্ডলি সেগুলো র্যাংকিং এ ভাল করছে।
AMP প্লাগিন ব্যবহার করে আপনি সহজেই আপনার সাইটের মোবাইল ফ্রেন্ডলি ডিজাইন নিশ্চিত করতে পারবেন। আর গুগল সার্চ কনসোলে AMP অপশন থেকে আপনি আপনার সাইটের AMP পারফর্মেন্স দেখতে পারবেন।

পেজ লোড স্পিড
ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড র্যাংকিং এর ক্ষেত্রে একটা বড় ফ্যাক্টর। শুধু র্যাংকিং নয় ব্যবহারকারীদের কাছেও লোডিং স্পিড খবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
লোডিং স্পিড বেশি হলে আপনি ভিজিটর হারাতে পারেন। আপনি নিজের কথাই চিন্তা করেন। দেখবেন কোন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার সময় বেশি সময় লাগলে আপনার নিজেই বিরক্ত হয়ে বের হয়ে যাবেন। এই বিষয়টি সবার জন্যই প্রযোজ্য।
আপনার ওয়েবপেজের লোডিং স্পিড ভাল হলে ব্যবহারকারীরা দ্রুত ওয়েব পেজে প্রবেশ করতে পারবে এবং সাইটের বিভিন্ন পেজে বিচরণ করতে পারবে। অন পেজ এসইও (On-Page-SEO) এর ক্ষেত্রে লোডিং স্পিড অন্যতম অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।
পেজ লোড স্পিড কমানোর জন্য CSS, জশ মিনিফাই করে এবং ইমেজ কম্প্রেস করে পেজ স্পিড বাড়ানো যেতে পারে। কিভাবে ওয়েব পেইজের লোডিং স্পীড বাড়ানো যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।
মানসম্মত কনটেন্ট
আপনারা অনেকেই গুগলের কোয়ালিটি রেটার গাইডলাইন (Google’s quality rater Guidelines) এর কথা শুনেছেন। এই গাইডলাইন অনুসারে গুগলের পক্ষ থেকে কন্টেন্টকে শক্তিশালী করার জন্য EEAT” অনুসরণ করার জন্য বলা হয়েছে।
EEAT মানে experience, authoritativeness, and trustworthiness. যদিও EEAT র্যাংকিং এর ক্ষেত্রে বড় ফ্যাক্টর নয় কিন্তু এটি আপনাকে একটি শক্তিশালী ভিত্তি প্রদান করবে যা আপনার ওয়েবসাইটের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিবে। বিভিন্নভাবে আপনি এই কাজটি করতে পারেন। যেমন:
অথর বায়ো (Author Bio) তে নিজের যোগ্যতা এবং দক্ষতা তুলে ধরুন। গুগল আপনার এই যোগ্যতা এবং দক্ষতাকে অবশ্যই মূল্যায়ন করবে।
লেখার মাঝে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির বক্তব্য দিতে পারেন। এর ফলে আপনার লেখার ওজন বাড়বে। যেমন আপনি যদি স্বাস্থ্য বিষয়ক কোন কন্টেন্ট তৈরি করেন তাহলে স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কারো মতামত ইনভার্টেড কমা দিয়ে উল্লেখ করতে পারেন।
গুগল এবং ব্যবহারকারীদের কাছে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য নিজের আসল ছবি এবং ভিডিও দিয়ে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করুন।
এভাবেই আপনি ওয়েব পেজের জন্য মানসম্মত কন্টেন্ট তৈরি করতে পারবেন এবং এটি আপনার ও পেজ এসইওর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
ইউজার এক্সপেরিয়েন্স (UX)
ব্যবহারকারীদের জন্য অবশ্যই সাইট নেভিগেশন সিস্টেম ভাল রাখতে হবে। ব্যবহারকারীরা যদি সহজে সাইটের বিভিন্ন জায়গায় সহজে প্রবেশ করতে না পারে তাহলে তারা আপনার সাইটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে।
গুগল ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতাকে র্যাংকিং এর ক্ষেত্রে বিবেচনা করে থাকে। যেসব সাইটে ব্যবহারকারীরা অনেক সময় ব্যয় করে সেসব সাইটকে গুগল অগ্রাধিকার দেয়। কারণ গুগল এমন ওয়েব পেজগুলোকে সার্চ রেজাল্টের প্রথম পেজে (SERP) রাখতে যেগুলো যথেষ্ট পরিমান বিশ্বাসযোগ্য এবং যেসব ওয়েব সাইটের ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ভাল।
গুগল সার্চ কনসোল থেকে আপনি Experience অপশন থেকে আপনি ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা কেমন সে সম্পর্কে আপনি জানতে পারবেন। সার্চ কনসোলের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে আপনাকে।

পরিশেষে
অন পেজ এসইও অবশ্যই গুগল সার্চ রেজাল্টে আপনাকে প্রথম দিকে রাখতে অনেক ভূমিকা পালন করবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। কিন্তু সেটা খুব তাড়াতাড়ি ঘটে যাবে তা ভাবা যাবে না। এজন্য আপনাকে সময় দিতে হবে ।
যদি দেখেন ভালোভাবে ও পেজ এসইও করার পরও আপনার ওয়েবসাইটের উন্নতি হচ্ছে না তাহলে আপনাকে কন্টেন্টের মান আরো উন্নত করার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। সার্চ রেজাল্টে যাদের পেজ প্রথম দিকে প্রদর্শিত হচ্ছে তাদের পর্যায়ে কন্টেন্টের মান উন্নত করতে হবে। আপনার চেষ্টা থাকবে তাদের চেয়ে আরো ভাল কন্টেন্ট তৈরি করা।