HomeMarketing Guidelinesঅ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং গাইডলাইনঃ সংজ্ঞা, সুবিধা, শুরু করার ধাপ।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং গাইডলাইনঃ সংজ্ঞা, সুবিধা, শুরু করার ধাপ।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি?

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার অন্য ক কোম্পানি বা ব্যক্তির পণ্য বা সেবা প্রচার করে এবং এর বিনিময়ে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন প্রাপ্ত হয়।

একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার এর কাজ হচ্ছে তারা ব্যবহার করে বা জানা আছে এমন পণ্য বা সেবা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং তাদেরকে ক্রয় করতে উৎসাহিত করা। তাদের এই বিক্রয় কার্যক্রম অ্যাফিলিয়েট লিংক এর মাধ্যমে ট্র‍্যাক করা হয়।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে কোম্পানি এবং মার্কেটার উভয়ই লাভবান হয়। মার্কেটাররা যেহেতু প্রতিটি বিক্রয়ের বিপরীতে কমিশন পায় তাই তারা অনবরত বিক্রয়ের চেষ্টা করতে থাকে। এর ফলে কোম্পানির বিক্রয় দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

অ্যাফিলিয়েটরা বিভিন্ন চ্যানেল যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ওয়েবসাইট বা ইউটিউব ভিডিও এর মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট পণ্য সম্পর্কে প্রচার চালিয়ে থাকে। শ্রোতারা যখন তাদের প্রচারণায় পণ্য সম্পর্কে আগ্রহী হয় তখন তারা অ্যাফিলিয়েট লিংকে ক্লিক করে মার্চেন্টের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে এবং কোন কিছু ক্রয় করলে তার বিনিময়ে অ্যাফিলিয়েটরা কমিশন প্রাপ্ত হয়।

আপনি যে অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করছেন সে সম্পর্কে ক্লায়েন্টকে অবহিত করুন যাতে তারা এই বিষয়ে অবগত থাকে।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে?

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি

ইতোমধ্যে বলেছি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে এমন একটি মার্কেটিং মডেল যেখানে একজন মার্কেটার এর কাজ হচ্ছে অন্য কোম্পানির পণ্য বা সেবা প্রচার করে থাকে যার বিনিময়ে পণ্য বা সেবা বিক্রির লাভের একটা অংশ তিনি কমিশন হিসেবে পেয়ে থাকেন। এই পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে ৩ টি পক্ষ বিদ্যমান :

১. পণ্য উৎপাদক এবং বিক্রেতা
২. পণ্য প্রচারক বা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার
৩. ক্রেতা

পণ্য উৎপাদক এবং বিক্রেতা

একজন বিক্রেতা হতে পারে একক মালিকানা ব্যবসায়ী, হতে পারে ছোট, মাঝারি বা বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তিনি হচ্ছেন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রক্রিয়ার প্রথম পক্ষ।
তার কাজ হচ্ছে পণ্য উৎপাদন করা সেটি হতে পারে ফিজিক্যাল পণ্য যেমন ইলেকট্রনিকস পণ্য, যন্ত্রপাতি, গাড়ির পার্টস ইত্যাদি, আবার হতে পারে ডিজিটাল পণ্য যেমন হোস্টিং সেবা, সফটওয়্যার, অ্যাপ, ইবুক, কোর্স ইত্যাদি।

এই প্রক্রিয়ায় বিক্রেতা তার পণ্য প্রচারে সক্রিয়ভাবে অংশ না নিয়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারের উপর নির্ভর করেন। তবে এই বিষয়টি সম্পূর্ণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বিষয়। তিনি চাইলে নিজেও অন্যান্য মার্কেটিং কৌশল ব্যবহার করে প্রচারণা চালাতে পারেন।

পণ্য প্রচারক বা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার

পণ্য প্রচারক হতে পারে কোন ব্যক্তি বা কোম্পানি। তাদের কাজ হচ্ছে বিক্রেতার পণ্য এমনভাবে গ্রাহকের কাছে উপস্থাপন করা যাতে গ্রাহকরা বিক্রেতার পণ্যটি ক্রয় করতে উৎসাহিত হয়।

মূলত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটাররা বিক্রেতার পণ্যের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গ্রাহকের সামনে প্রদর্শিত করে তাদেরকে পণ্য সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করে।

ভোক্তা

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারকে প্রচারণায় যখন কোন ব্যক্তি আগ্রহী হয় তখন তিনি অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করে সেই পণ্য ক্রয় করে থাকে।

ভোক্তা যেকোনো ব্যবসার প্রাণ। আপনার ভোক্তা আছে আপনার ব্যবসা চলবে। তাই ভোক্তারা কোন ধরণের পণ্য পছন্দ করে সেটি আপনাকে জানতে হবে এবং সে ধরণের পণ্য প্রচার করতে হবে। তাহলে আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ভাল পরিমাণে আয় করতে পারবেন।

আরও পড়ুন: অ্যামাজন (Amazon) থেকে আয় করার বিস্তারিত গাইডলাইন

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটাররা কিভাবে আয় করে?

আপনি যদি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে চান তাহলে আপনাকে জানতে হবে আপনি কিভাবে পেমেন্ট পাবেন বা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর কমিশন কত।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর বেশ কিছু কমিশন মডেল রয়েছে যেমন;

পে পার সেল (Pay per sale)

এই মডেল অনুসারে একজন মার্কেটার এর অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করে যখন কোন ক্রেতা মার্চেন্টের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে কোন কিছু ক্রয় করবে তখন মার্চেন্ট সেই পণ্যের লাভের একটা অংশ কমিশন হিসেবে মার্কেটারকে প্রদান করবে। বিক্রয় না হলে মার্কেটার কোন কমিশন পাবে না।।

পে পার লিড (Pay per lead)

এই মডেল অনুসারে মার্কেটারের শেয়ার করা অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করে যখন কোন ব্যক্তি নির্দিষ্ট কিছু কার্যক্রম সম্পন্ন করে তখন মার্কেটার কমিশন পাবেন। এই কার্যক্রমকে বলা হয় লিড। এর মধ্যে রয়েছে সাবস্ক্রাইব করা, ফর্ম ফিলাপ করা, ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান, ট্রায়াল ভার্সন এর জন্য সাইন আপ করা ইত্যাদি।

ক্লিক প্রতি কমিশন (Pay per click)

এই মডেল অনুসারে একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার এর প্রচার করা লিংকে যখন কোন ব্যক্তি ক্লিক করে মার্চেন্টের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করবে তখন মার্কেটার কমিশন পাবে।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর লাভ হচ্ছে যত বেশি ক্রেতা তাদের ওয়েবসাইটে আসবে তত তাদের বিক্রি বাড়তে থাকে। অন্যদিকে মার্কেটারের সুবিধা হচ্ছে বিক্রয় না হলেও তারা কমিশন পেয়ে থাকে।

তাই এসইও সম্বৃদ্ধ কন্টেন্ট তৈরি করার চেষ্টা করুন এর ফলে প্রচুর অর্গানিক ট্রাফিক পাবেন এবং আপনার অ্যাফিলিয়েট লিংকে ক্লিক পড়ার পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে।

পে পার ইন্সটল (Pay per install)

অ্যাফিলিয়েট কমিশন মডেলগুলোর মধ্যে এই পদ্ধতি অনুসারে যখন একজন ব্যক্তি অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করে মার্চেন্টের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে কোন কিছু যেমন অ্যাপ বা সফটওয়্যার ইন্সটল করে তখন মার্কেটার কমিশন পেয়ে থাকে।

Tiered commission

একজন মার্কেটারের শেয়ার করা অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করে যখন অনেক ক্রেতা পণ্য ক্রয় করে এবং একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ বিক্রয় হওয়ার পর তিনি মার্চেন্টের কাছ থেকে পূর্বের চেয়ে বেশি কমিশন প্রাপ্ত হয়, এটাকে Tiered commission বলে।

CPA (cost-per-acquisition)

এই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কমিশন মডেল অনুসারে একজন মার্কেটার তখনই পেমেন্ট পান যখন একজন একজন মার্চেন্ট একটি লিড পায়। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি যখন অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে কোন কার্যক্রম যেমন সাবস্ক্রাইব করা, কোন ফর্ম পূরণ করা ইত্যাদি করে তখন মার্কেটার কমিশন পেয়ে থাকে।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কেন করবেন?

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সুবিধাগুলো সম্পর্কে জানতে পারলে আপনি বুঝতে পারবেন কেন আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করবেন। প্রথমেই আমি কিছু পরিসংখ্যান দিচ্ছি তাহলে আপনি এর গুরুত্ব বুঝতে পারবেন।

একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার মাসে গড়ে ৮০৩৮ ডলার আয় করে থাকে।

২০২৪ সালে গ্লোবাল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর আকার হবে ১৫.৭ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২৭ সালে এর আকার দাঁড়াবে ২৭.৭৮ বিলিয়ন ডলার।

Rakuten Advertising এর এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ৮১% ব্র্যান্ড অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সাথে যুক্ত।

বৃহৎ ব্র্যান্ডগুলো তাদের অনলাইন বিক্রয়ের ৫% থেকে ২৫% আসে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে।

WPBeginner এর সার্ভে অনুসারে, ৩৫% ব্লগার আয়ের সোর্স হিসেবে ফিলিয়েট মার্কেটিংকে অগ্রাধিকার দেয়।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর সুবিধাগুলো নিচে আলোচনা করা হলঃ

কম খরচে মার্কেটিং

ব্যবসায়ীদের জন্য অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং খুবই কার্যকরী একটি মার্কেটিং কৌশল। অন্যান্য মার্কেটিং কৌশলের তুলনায় এই মার্কেটিং কৌশল ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা কম খরচে সহজেই বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের কাছে পৌছাতে পারে।

সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে ইনফ্লুয়েন্সাররা যখন কোন পণ্য সম্পর্কে প্রচার চালায় তখন মানুষ বেশি আগ্রহ নিয়ে পণ্যটি সম্পর্কে জানতে চায়।

পেসিভ আয় ( Passive income)

পেসিভ আয় হচ্ছে এমন আয় যা আপনি কাজ না করেও করতে পারেন। অর্থাৎ আপনি কাজ না করলেও এমনকি আপনি ঘুরতে গেছেন বা ঘুমিয়ে আছেন সেই মুহূর্তেও আপনি আয় করতে পারবেন।

এই মার্কেটিং পদ্ধতি অনুসারে আপনি একটি নির্দিষ্ট সময় কম্পিউটারের সামনে ব্যয় করে আপনি ভাল পরিমাণে আয় করতে পারবেন। এমনকি আপনার মোবাইলের মাধ্যমেও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন।

বাসায় বসে আয় করার সুযোগ

ঘরে বসে আয় করার জন্য অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং একটি ভাল মাধ্যম হতে পারে। এই ধরণের মার্কেটিং এর জন্য আপনাকে বাড়ির বাইরে যাওয়ার কোন প্রয়োজন হয় না। ঘরে বসেই আপনি আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ব্লগ বা ইউটিউব ব্যবহার করে মার্কেটিং এর কাজ করতে পারেন।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ গ্রাহক সেবার প্রয়োজন নেই

এই মার্কেটিং মডেল অনুসারে আপনাকে কোন গ্রাহক সেবা প্রদান করতে হবে না। মার্কেটারের কাজ হচ্ছে গ্রাহকের কাছে পণ্যটি প্রচারের ব্যবস্থা করা আর গ্রাহক সেবা প্রদান করার দায়িত্ব হচ্ছে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের।

গ্রাহকদের পণ্য সম্পর্কে কোন অভিযোগ থাকলে তা পণ্য উৎপাদকের কাছে তুলে ধরবে এবং উৎপাদকের দায়িত্ব হচ্ছে ভোক্তার সেসব অভিযোগের সুরাহা করা।

আনলিমিটেড আয়ের সুযোগ

আপনি যদি কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন তাহলে আপনাকে মাস শেষে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতন পাবেন। নির্দিষ্ট সুযোগ সুবিধার বাইরে আয়ের কোন সুযোগ নেই।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ আছে আনলিমিটেড আয়ের বিশাল সুযোগ। আপনি যত বেশি প্রচার করবেন তত বেশি আপনার বিক্রয় বাড়ার সম্ভাবনা বাড়বে। আর যত বিক্রয় হবে তত বেশি আপনি আয় করতে পারবেন।

কারা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারবে?

এই ধরণের মার্কেটিং করতে হলে আপনাকে কিছু বিষয়ে দক্ষ হতে হবে । এর মধ্যে রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ব্লগ, ইমেইল মার্কেটিং, ফেসবুক বিজ্ঞাপন ইত্যাদি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে দক্ষতা 

অ্যাফিলিয়েট পণ্য মার্কেটিং করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে সবচেয়ে বৃহৎ প্লাটফর্ম। কারণ বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন। বিপুল এই ব্যবহারকারীদের টার্গেট করে আপনি সহজেই অ্যাফিলিয়েট পণ্য প্রচার করতে পারেন।

আপনি কি জানেন বর্তমানে বেশিরভাগ কোম্পানি সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের পেছনে অনেক খরচ করছে? এর কারণ কি জানেন? এসব প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিশাল পরিমাণ ফলোয়ার থাকে এবং ফলোয়াররা এসব প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কথায় অনেক বেশি প্রভাবিত হয়। এর ফলে ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রয় এর পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়।

ব্লগার

আপনি যদি একজন ব্লগার হয়ে থাকেন তাহলে আপনি খুব সহজেই এই ধরণের মার্কেটিং শুরু করতে পারেন। একজন ব্লগার বিভিন্নভাবে আয় করতে পারে তার মধ্যে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং অন্যতম। একজন ব্লগার কত উপায়ে আয় করতে পারে বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ুন।

ইমেইল মার্কেটার

ইমেইল মার্কেটাররা ইমেইলের মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট পণ্য প্রচার করতে পারে। আপনার কাছে যদি গ্রাহকদের ইমেইল লিস্ট থাকে তাহলে আপনি খুব সহজে এসব লিস্ট ব্যবহার করে পণ্য প্রচার করতে পারেন। তবে এই ধরণের কৌশল ব্যবহার করার পূর্বে ইমেইল মার্কেটিং সম্পর্কে ভাল করে জেনে নিন। তাহলে আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

কিভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করবেন?

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করার জন্য আপনাকে বেশ কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হবে। নিচে এসব ধাপ নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ

১. নিশ (niche) নির্বাচন করুন

আপনি যে বিষয়ে কাজ করবেন সেটিকেই নিশ বলে। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে হলে প্রথমেই আপনাকে একটি সুনির্দিষ্ট নিশ নির্বাচন করতে হবে।

আপনি যত বেশি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে কন্টেন্ট তৈরি করবেন তত বেশি সেই বিষয় সম্পর্কিত শ্রোতা আপনার প্লাটফর্মে পাবেন। তারাই একসময় আপনার বিশস্ত গ্রাহকে পরিণত হবে। কিন্তু আপনি যদি বিভিন্ন বিষয়ে কন্টেন্ট তৈরি করা শুরু করেন তাহলে আপনি প্রকৃত ক্রেতা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।

নিশ নির্বাচন করার আগে নিজেকে কিছু প্রশ্ন করুন;

  • আমি কোন বিষয়ে দক্ষ বা ভাল জ্ঞান আছে?
  • কিসে আমার আগ্রহ বেশি?
  • কোন বিষয়টি আমি মানুষকে ভাল বোঝাতে পারবো?
  • কোন বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা বেশি?

আমি বলবো আপনার ভাল জানাশোনা আছে এবং আগ্রহ আছে এমন বিষয় নিয়ে কন্টেন্ট তৈরি করা শুরু করুন। আপনার আকর্ষণীয় এবং তথ্যবহুল কন্টেন্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রাহক তৈরি করবে। আপনার কাজ হচ্ছে নিয়মিত কন্টেন্ট তৈরি করা। যত বেশি কন্টেন্ট তৈরি করবেন তত বেশি আপনি অ্যাফিলিয়েট পণ্য বিক্রয় করতে সমর্থ্য হবেন।

২. কন্টেন্ট প্লাটফর্ম ঠিক করুন

আপনি বিভিন্ন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে পারবেন। এসব প্লাটফর্ম এর মধ্যে রয়েছেঃ

  • ওয়েবসাইট
  • সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ( ফেসবুক, টিকটক, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদি)
  • ইউটিউব
  • ইমেইল
  • পোডকাস্ট (Podcast)

দ্বিতীয় ধাপে আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি কোন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে মার্কেটিং করবেন। আপনি চাইলে একটি প্লাটফর্ম ব্যবহার করে অ্যাফিলিয়েট পণ্য প্রচার করতে আবার চাইলে একাধিক প্লাটফর্ম ব্যবহার করতে পারেন। এটা সম্পূর্ণ আপনার অগ্রাধিকারের বিষয়।

আমার মত যারা লিখতে পছন্দ করে তারা সাধারণত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে চায়। আবার যারা ভাল ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি করতে পারে তারা ইউটিউব, ফেসবুক, টিকটক ব্যবহার করে থাকে।

৩. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রাম খুঁজে বের করা

বিভিন্ন ধরণের অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম আছে, যেমনঃ

উচ্চ কমিশন, ক্রেতা কম:  অনেক অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম আছে যেগুলোতে কমিশন অনেক বেশি কিন্তু গ্রাহক অনেক কম। যেমন HubSpot এর ক্রেতা হচ্ছে শুধু ব্যবসায়ী কিন্তু তাদের অ্যাফিলিয়েট কমিশন অনেক বেশি। প্রথম মাসে ১০০% এবং প্রতি মাসে ১৫% কমিশন প্রদান করে।

কমিশন কম, ক্রেতা বেশি:  কিছু অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামের কমিশন অনেক কম কিন্তু ক্রেতার পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। যেমন আপনি যদি কোন অ্যাফিলিয়েট প্লাটফর্ম থেকে ইলেকট্রনিকস আইটেম প্রচার করেন দেখবেন সেখানে ক্রেতা বেশি কিন্তু কমিশন কম থাকবে।

উচ্চ কমিশন, ক্রেতা বেশি: ফিনানশিয়ালি পণ্যের ক্ষেত্রে এই ধরণের অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম থাকে। এই ধরণের পণ্যের কমিশন বেশি থাকে এবং ক্রেতার সংখ্যাও অনেক।

আপনি কোন ধরণের অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে যুক্ত হবেন সেটা আপনার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং চাওয়ার উপর নির্ভর করবে। গুগল সার্চ করে আপনি সহজেই এই ধরণের প্রোগ্রাম খুঁজে পাবেন।

যদি আপনি কোন কোম্পানির পণ্য দেখতে পান যা আপনি প্রমোট করলে বিক্রি করতে পারবেন কিন্তু তাদের অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম নেই তাহলে তাদেরকে মেইল দিয়ে আপনার আগ্রহের কথা জানান।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ওয়েবসাইট
Amazon
AvantLink.
LinkConnector.
CJ Affiliate.
Affiliate Future.
ClickBank.
ShareASale.
FlexOffers.

আপনি এসব অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ওয়েবসাইট থেকে আপনার নিশ অনুযায়ী অ্যাফিলিয়েট পণ্য সহজেই খুঁজে পাবেন।

৪. কন্টেন্ট তৈরি করা

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ সফল হতে হলে আপনাকে অবশ্যই মানসম্মত কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে। এর কারণ হচ্ছে আপনি যদি মানসম্মত কন্টেন্ট তৈরি করতে পারেন তাহলে আপনার শ্রোতার সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকবে।

মানুষ আপনার কন্টেন্ট থেকে উপকৃত হলে আপনার উপর বিশ্বাস বেড়ে যাবে। আপনার যেকোনো পরামর্শ তারা গুরুত্ব দিবে।

এক্ষেত্রে আপনাকে কিছু কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। অ্যাফিলিয়েট পণ্য বিক্রি করার জন্য প্রোডাক্ট রিভিউ একটা বড় মাধ্যম। রিভিউ করার সময় একচেটিয়া শুধু সুবিধা বললেই হবে না আপনাকে কিছু কমন সমস্যাও তুলে ধরতে হবে।

কোন পণ্য নিয়ে রিভিউ কন্টেন্ট তৈরি করার আগে সেই পণ্য সম্পর্কে ভাল করে জেনে নিন। সবচেয়ে ভাল হয় যদি আপনি নিজে ব্যবহার করে তারপর রিভিউ লিখেন তাহলে শ্রোতাদের ভালভাবে সুবিধা অসুবিধাগুলো বুঝাতে পারবেন এর ফলে আপনার বিশ্বাস যোগ্যতা বাড়বে।

৫. অ্যাফিলিয়েট সাইটে ভিজিটর পাঠানো

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ সফল হতে হলে আপনাকে বড় যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে সেতি হচ্ছে মার্চেন্টের সাইটে ট্রাফিক নিয়ে আসা। বিভিন্নভাবে আপনি এই কাজটি করতে পারেন, যেমনঃ

ফেসবুক বিজ্ঞাপন, গুগল বিজ্ঞাপন ইত্যাদি পেইড মাধ্যম ব্যবহার করে ট্রাফিক নিয়ে আসা। এর সুবিধা হচ্ছে আপনি বিজ্ঞাপন দেওয়ার সাথে সাথেই ট্রাফিক পেতে থাকবেন। তবে অসুবিধা হচ্ছে আপনি যে পরিমাণ খরচ করবেন তার বিপরীতে পর্যাপ্ত বিক্রয় না হলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আপনি আপনার সাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের সার্চ রেজাল্টের প্রথম পেজে আসতে পারবেন এবং এর ফলে প্রচুর অর্গানিক ট্রাফিক পেতে থাকবেন। এটাকে টেকসই পদ্ধতি বলা হয়।

একটা ইমেইল লিস্ট তৈরি করুন।  অ্যাফিলিয়েট পণ্যে কোন স্পেশাল ডিস্কাউন্ট থাকলে তাদেরকে মেইলের মাধ্যমে জানান। এছাড়া মার্চেন্টের ব্র্যান্ড ইমেজ বাড়ানোর চেষ্টা করতে পারেন। এভাবে আপনি মার্চেন্টের সাইটে প্রচুর ট্রাফিক পাঠাতে পারবেন।

লিংক প্লেসমেন্ট ভালভাবে করুন। কন্টেন্টের বিভিন্ন পজিশনে এমনভাবে লিংক বসান যাতে এটাকে স্প্যামি মনে না হয়। কারণ বর্তমানে মানুষ অনেক সচেতন। স্প্যামি মনে হলে  লিংকে ক্লিক করবে না।

পাঠকদের আকর্ষণ করার জন্য বাটন, টেবল, বক্স করেও লিংক শেয়ার করতে পারেন। এর ফলে ক্লিকের সংখ্যা বাড়বে।

পাঠক জিজ্ঞাসা

মোবাইল দিয়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করা যায়?

মোবাইল দিয়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করা যায়। মোবাইল দিয়ে আপনি সহজেই অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে যুক্ত হতে পারবেন। তারপর তাদের প্লাটফর্ম থেকে লিঙ্ক সংগ্রহ করে সেটা আপনি আপনার ব্লগ, ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, টিকটক বা ইউটিউব ভিডিওতে প্রচার করে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারেন।  এসব কাজ খুব সহজে মোবাইল দিয়েই করা যায়।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কোর্স

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কোর্স সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। আমাদের দেশে অনেক প্রতিষ্ঠান এই ধরণের কোর্স করিয়ে থাকে যেমন: ক্রিয়েটিভ আইটি, ১০ মিনিটস স্কুল, ঘুড়ি লার্নিং। এছাড়া উদেমি, কোর্সিয়া থেকেও আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কোর্স করতে পারবেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular