Home Business Guidelines ট্রেড লাইসেন্স অনলাইন আবেদন এবং সরাসরি সংগ্রহ করার নিয়ম

ট্রেড লাইসেন্স অনলাইন আবেদন এবং সরাসরি সংগ্রহ করার নিয়ম

ব্যবসার সাথে ট্রেড লাইসেন্স এর বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কেউ যদি বৈধভাবে ও নিশ্চিন্তে ঝামেলা ছাড়া ব্যবসা করতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই এই লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে। আপনি এটি ছাড়া ব্যবসা করতে পারবেন না। আপনি জরিমানার মুখোমুখি হবেন এবং বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করতে এবং ব্যবসায়ীক চুক্তি করতে সমস্যার সম্মুখীন হবেন।

ট্রেড লাইসেন্স কি ?

কোন ব্যবসা শুরু করতে হলে আপনাকে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি পত্র সংগ্রহ করতে হবে। এই অনুমতি পত্রই হচ্ছে ট্রেড লাইসেন্স। এটি আপনার ব্যবসাকে বৈধতা দিবে এবং আপনার ব্যবসাটি একটি স্বতন্ত্র পরিচয় পাবে।

ট্রেড লাইসেন্স কেন প্রয়োজন ?

ট্রেড লাইসেন্স পাওয়ার মাধ্যমে আপনি বৈধভাবে ব্যবসা করার পাবেন। আপনার ব্যবসা একটি পৃথক পরিচয় বহন করবে। সরকারি বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করতে হলে আপনার ট্রেড লাইসেন্স লাগবে।

  • কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে ব্যবসায়ীক চুক্তি করার সময় আপনার ট্রেড লাইসেন্স এর প্রয়োজন হবে।
  • ব্যবসার নামে ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে চাইলে এবং ব্যাংক থেকে লোন নিতে চাইলে আপনার ট্রেড লাইসেন্স এর প্রয়োজন হবে।
  • সরকারি বা বেসরকারি কোন কার্যাদেশ পেতে হলে আপনার লাইসেন্স লাগবে।

ট্রেড লাইসেন্স না থাকলে আপনার ব্যবসার কি কি ক্ষতি হতে পারে ?

এই লাইসেন্স না থাকলে আপনি বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হবেন, সেগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ

  • এই লাইসেন্স না থাকলে আপনার ব্যবসা অবৈধ হয়ে যাবে।
  • আপনার ব্যবসার পৃথক কোন পরিচয় থাকবে না।
  • আপনি ব্যবসার নামে ব্যাংকে একাউন্ট খোলা বা লোনের জন্য আবেদন করতে পারবে না।
  • আইনি সুরক্ষা বা সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন।
  • সরকারি বেসরকারি ব্যবসায়ীক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন।

সরকারি সংস্থা আপনাকে জরিমানা করতে পারে:

  • প্রথমবার: ৫০০০ টাকা প্রথমদিনের জন্য
  • দ্বিতীয়বার: ৫০০ টাকা প্রতিদিনের জন্য

আরও পড়ুন: ব্যাংক লোন কত প্রকার ও কি কি? ব্যাংক লোন পাওয়ার উপায়।

ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে যেসব ডকুমেন্টস লাগবে

ট্রেড লাইসেন্স করতে যেসব ডকুমেন্ট লাগবে

ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করার জন্য আপনার বেশ কিছু ডকুমেন্টস লাগবে। এসব ডকুমেন্টস ইউনিয়ন পরিষদ/জেলা পরিষদ/সিটি কর্পোরেশন এর কাছে লাইসেন্সের আবেদনের সময় উপস্থাপন করতে হবে বা অনলাইনে আপলোড করতে হবে।

নিচে একটি ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে যেসব ডকুমেন্টস লাগবে তার একটি তালিকা দেওয়া হলো:

  • আবেদনকারির ৩ কপি রঙিন ছবি,
  • আবেদনকারির NID এর কপি,
    দোকান বা ব্যবসার স্থানের বিবরণের (পরিমাপ ও নকশাসহ),
  • প্রস্তাবিত ব্যবসার মূলধনের প্রমাণ
  • ব্যবসার স্থানের মালিকানা দলিল আর ভাড়া হলে ভাড়ার চুক্তিপত্র,
  • আপডেট হোল্ডিং ট্যাক্স এর কপি,
  • প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে ব্যবসা পরিচালনার উদ্দেশ্য উল্লেখকৃত অঙ্গিকারনামা
  • প্রস্তাবিত ব্যবসার স্থানের নিকটবর্তী এলাকাবাসী হতে সংগৃহীত অনাপত্তি পত্র
  • যদি কোম্পানি হয় তাহলে কোম্পানির incorporation certificate, memorandum ও articles of association-এর কপি, ব্যাংক solvency certificate, VAT / TIN /, কোম্পানির ডিরেক্টরদের তথ্য ইত্যাদি।
  • অংশীদারি ব্যবসা হলে অংশীদারদের NID, ব্যবসার চুক্তিপত্র,
  • ট্যাক্স রিটার্ন সার্টিফিকেট ইত্যাদি।

ব্যবসার ধরণভেদে ডকুমেন্টস ভিন্ন হয়।

ট্রেড লাইসেন্স এর কর্তৃপক্ষ কারা ?

যেসব এলাকা সিটি করপোরেশন এর আওতাভুক্ত সেখানে সিটি করপোরেশনের হচ্ছে এই লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ। আর পৌরসভার আওতাধীন হলে পৌরসভা / ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন হলে ইউনিয়ন পরিষদ হচ্ছে ট্রেড লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ।

আবেদন করার কতদিন পর আপনি লাইসেন্স হাতে পেতে পারেন ?

ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন করার জন্য আপনাকে বেশি কিছু ডকুমেন্টস সংগ্রহ করতে হবে। এজন্য পূর্বপ্রস্তুতমূলক কিছু সময়ের প্রয়োজন।

সকল ডকুমেন্টসসহ আবেদন করার পর ৩ থেকে ৫ কার্যদিবস এর মধ্যে লাইসেন্স হাতে পাওয়া যায়। তবে ব্যবসার আকার, ধরুণসহ বিভিন্ন বিষয়ের কারণে সময় কিছু বেশি লাগতে পারে।

ট্রেড লাইসেন্স ফি কত ?

এই লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আপনাকে যেসব খরচ করতে হবে তার একটি তালিকা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

  • লাইসেন্সের আবেদন পত্র ১০ টাকা
  • লাইসেন্স বই ৫০ টাকা
  • প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নন- জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প পেপার ১৫০-৩০০ টাকা
  • ট্রেড লাইসেন্স ফি ২০০-২৬০০০ টাকা
  • প্রযোজ্য কর ও মূসক
  • সাইনবোর্ড ফি ব্যবসার ধরন ও সাইনবোর্ডের আকার অনুযায়ী

ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ফি

ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন এর জন্য আপনাকে নতুন লাইসেন্সের সমান ফি এবং ৩,০০০ টাকা উৎসে কর দিতে হবে।

মনে রাখবেন রাখবেন লাইসেন্স ফি-র পরিমাণ সুনির্দিষ্ট নয় এটি আপনার ব্যবসার ধরন, অবস্থান, আয়, জায়গার মাপ ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে নির্ধারিত হবে। আবেদন করার আগে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা অফিস/ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে খরচ জেনে নেয়া জরুরি।

লাইসেন্স নবায়নের জন্য আপনার যেসব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে

  • পূর্বের লাইসেন্সের কপি
  • জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
  • ব্যবসার স্থান ভাড়া হলে ভাড়ার চুক্তিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি (সাধারণত ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে)
  • হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের প্রমাণপত্র (যদি প্রযোজ্য হয়)
  • দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি

আরও পড়ুন: নতুন ব্যবসা শুরু করার স্টেপ বাই স্টেপ পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন।

ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের পদ্ধতি

সিটি কর্পোরেশনের ওয়েবসাইটে (যেমন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন) অথবা সরাসরি আবেদন করতে পারেন।
নির্ধারিত আবেদন ফরম পূরণ করুন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ফরম জমা দিন। অনলাইন পেমেন্ট বা ব্যাংক/বিকাশে মাধ্যমে ফি পরিশোধ করতে পারেন।

ট্রেড লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আপনাকে যেসব কাজ করতে হবে

  • লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার পূর্বে কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ করে রাখা প্রয়োজন। এসব প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো হলো-
  • আপনি যে ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছেন তার নাম নির্ধারণ করা।
  • নাম ঠিক করার পর ব্যবসার ধরন নির্ধারণ করুন।
  • কোন এলাকায় ব্যবসা স্থাপন করতে চান সেটি নির্বাচন করুন।
  • প্রস্তাবিত ব্যবসার স্থান নিজস্ব মালিকানাধীন হলে মালিকানার দলিল প্রস্তুত রাখা। যদি যায়গাটি ভাড়া নেওয়া হয়ে থাকে তাহলে মালিকের সাথে চুক্তি সম্পন্ন করে রাখা।
  • সরাসরি আবেদন করার জন্য সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদে চলে যান। সেখানে আপনাকে আবেদন ফরম/ K- ফরম দেওয়া হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে লাইসেন্স বইটি সংগ্রহ করুন। এই বইটিতে ব্যবসার ধরন অনুযায়ী প্রযোজ্য ট্রেড লাইসেন্স ফি, ট্রেড লাইন্সেস নবায়ন ফি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত থাকে।
  • আবেদন সম্পন্ন করে ব্যাংকে লাইসেন্সের ফি জমা দিন।

ইট্রেড লাইসেন্স এর জন্য অনলাইনে আবেদন

অফলাইনের পাশাপাশি আপনি অনলাইনেও আবেদন করতে পারবেন। উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, prottoyon ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনি অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। অনলাইনে আবেদন খুবই সহজ। আপনি অপশন দেখে দেখে তথ্য প্রদান করবেন, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস আপলোড দিবেন এবং অনলাইনে পেমেন্ট প্রদান করবেন।

অনলাইনে ই-ট্রেড লাইসেন্স আবেদন করবেন যেসব ওয়েবসাইটের মাধ্যমেঃ

prottoyon

DNCC 

DSCC

etradelicense.gov.bd

ট্রেড লাইসেন্স অনলাইন আবেদন খুবই সহজ। ওয়েবসাইটে প্রবেশ করবেন। প্রবেশ করার পর সেখানে প্রথমে রেজিস্ট্রেশন করে নিন। তারপর ফরমে যেসব তথ্য চাইবে সেগুলো ইনপুট দিবেন।

তারপর সকল তথ্য দেওয়ার পর ডকুমেন্টস আপলোড করতে বলবে। আপলোড করার পর পেমেন্ট অপশন আসবে। পেমেন্ট দিয়ে সাবমিট দিয়ে দিলেই আপনার আবেদন জমা হয়ে যাবে।

আপনার আবেদনের পর কর্তৃপক্ষ চাইলে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করতে পারে। সবকিছু ঠিক থাকলে আপনার একাউন্টে ইট্রেড লাইসেন্স আপলোড করে দিবে।

আপনি আপনার একাউন্ট থেকে ইট্রেড লাইসেন্স ডাউনলোড করে নিবেন। লাইসেন্স ইস্যু করার আগে আপনি চাইলে ট্রেড লাইসেন্স চেক করতে পারবেন। মালিকানা পরিবর্তন হলে বা ঠিকানা পরিবর্তন হলে সেগুলোর তথ্য দেওয়ার অপশনও থাকবে।  লাইসেন্স পাওয়ার পর প্রতিবছর সেটি নবায়ন করাতে হবে।

উপসংহার 

আশা করি উপরের লেখা থেকে আপনি ট্রেড লাইসেন্স কিভাবে করে এবং কি কি ডকুমেন্টস লাগে সে ব্যাপারে ভাল একটা ধারণা পেয়েছেন। তবে আপনি লাইসেন্স করাতে গিয়ে কোন সমস্যায় পড়লে আপনার ট্রেড লাইসেন্স অনুমোদনের কর্তৃপক্ষ ইউনিয়ন পরিষদ বা সিটি কর্পোরেশন যেই হোক আপনি সেখানে যাবেন, সেখানে যেকোনো সমস্যা বা অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য অভিযোগ নিষ্পত্তিকারী অফিসার থাকেন। উক্ত ব্যক্তিবর্গের নিকট চিঠির মাধ্যমে অভিযোগ দাখিল করা সম্ভব। তারা আপনার সমস্যার সমাধান করবে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version