আমি অনেক ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মে অনেককেই প্রশ্ন করতে দেখি মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করা যায় কিনা। তাদের উদ্দেশ্যেই আজকে আমার এই লেখা।
বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং একটি জনপ্রিয় আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে। ছোট থেকে বড়, বেকার থেকে চাকরিজীবী অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করতে চাচ্ছেন। এর মধ্যে একটা অংশ আছে যারা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে চায় কিন্তু কম্পিউটার না থাকায় তারা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারছে না।
তারা তাদের হাতে থাকা মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে চায়। আজকে আমি এই লেখায় আপনি কিভাবে মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করবেন সে ব্যাপারে আলোচনা করবো।
মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য যা করতে হবে
১. প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করুন
মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে আপনাকে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। যেহেতু স্মার্টফোন দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করবেন তাই আপনাকে স্মার্টফোন ব্যবহার এবং মোবাইল অ্যাপ ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
ভাল করে মোবাইল ব্যবহার না পারলে এবং অ্যাপের ব্যবহার না জানলে আপনি মোবাইল এর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন না। তাই মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করুন।
২. মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মে যুক্ত হোন
দ্বিতীয় ধাপে আপনাকে একটি ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মে যুক্ত হতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মে অ্যাকাউন্ট খুলে প্রোফাইল তৈরি করতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রোফাইল একটা বড় ফ্যাক্টর তাই প্রোফাইল তৈরি করার আগে এই বিষয়ে ভাল করে জেনে তারপর প্রোফাইল তৈরি করতে হবে এবং কাজের জন্য আবেদন করতে হবে।
অনেক ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্ম আছে আপনি সবগুলোতেই কাজ করতে পারবেন। কিন্তু একসাথে অনেকগুলো প্লাটফর্ম এ কাজ করতে পারবেন না। বাংলাদেশে বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সার ফাইবার এবং আপওয়ার্ক এ কাজ করে। আপনি চাইলে অন্যান্য প্লাটফর্ম যেমন ৯৯ ডিজাইন, টোপাল এসব প্লাটফর্ম এ কাজ করতে পারেন।
৩. কাজের জন্য আবেদন করুন
ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খোলা এসং প্রোফাইল তৈরি করার পর আপনার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা আছে এমন কাজ খুঁজে বের করতে হবে এবং আবেদন করতে হবে। যেহেতু আপনি মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে চাচ্ছেন তাই আপনাকে মোবাইল দিয়ে করা এমন কাজ খুঁজে বের করতে হবে যা আমি নিচে আলোচনা করেছি।
মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করার সুবিধা এবং অসুবিধা
সুবিধা
স্মার্টফোন দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করা যদিও কঠিন তারপরও এর কিছু সুবিধা আছে যেমন,
অবস্থানগত সুবিধা : মোবাইল এর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করার একটা বড় সুবিধা হচ্ছে অবস্থানগত সুবিধা। আপনি চাইলে যেকোনো যায়গায় এটি দিয়ে কাজ করতে পারবেন। বাইরে গিয়ে গাড়িতে বসে, রেস্টুরেন্টে বসে, মাঠে বসে এমনকি অফিসে কাজের ফাঁকে আপনি মোবাইল দিয়ে বিভিন্ন করতে পারবেন। এর ফলে আপনার ক্লায়েন্ট রেট ভাল থাকবে।
অতিরিক্ত ভারমুক্ত : যেহেতু মোবাইল ছোট একটা ডিভাইস তাই এটি বহন করার জন্য ল্যাপটপ এর মতো কোন ব্যাগের প্রয়োজন নেই।
কাজে মনযোগ থাকে বেশি: যেহেতু মোবাইল একটি ছোট স্ক্রিনসম্পন্ন ডিভাইস তাই আপনাকে বার বার অন্য ট্যাবে যাওয়া সম্ভব নয়। যেহেতু একটি ট্যাব খুলে কাজ করতে হয় তাই কাজে মনযোগটা অনেক বেশি থাকে।
অসুবিধা
আপনি যদি কম্পিউটার এর সাথে তুলনা করেন তাহলে স্বীকার করতেই হবে মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করা খুব কঠিন বিষয়। অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে যেমন :
একসাথে একটি কাজের বেশি করার সুযোগ নেই: একটি কম্পিউটারে যেমন আপনি একসাথে অনেকগুলো ট্যাব খুলে বা সফটওয়্যার দিয়ে বিভিন্ন ধরণের কাজ করতে পারবেন সেটা মোবাইল দ্বারা সম্ভব নয়। আপনি একসাথে একটি কাজের বেশি করতে পারবেন না।
কম উৎপাদনশীলতা : মোবাইলের সীমাবদ্ধতার কারণে আপনি দ্রুত গতিতে অনেক কাজ করতে পারবেন না যার কারণে কম্পিউটারের তুলনায় মোবাইলে কাজ সম্পন্ন করতে অনেক বেশি সময় দিতে হবে।
সীমিত কাজের সুযোগ : স্মার্টফোন দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন কিন্তু কাজের ক্ষেত্র অনেক কম। এই অল্প পরিমাণ কাজ থেকেই আপনাকে দক্ষতা অনুযায়ী কাজ খুঁজে বের করতে হবে।
আরও পড়ুন: ২০২৫ সালে অভিজ্ঞতা ছাড়া ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার পূর্ণ গাইডলাইন।
যেসব বিষয়ে মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন
হাতে থাকা স্মার্টফোন দিয়ে আপনি যেসব ফ্রিল্যান্সিং কাজ করতেন পারবেন সেগুলো হচ্ছে:
১. গ্রাফিক ডিজাইন
ফ্রিল্যান্সিং জগতে জনপ্রিয় কাজের মতো মধ্যে গ্রাফিক ডিজাইন অন্যতম। বর্তমানে একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের অনেক চাহিদা রয়েছে যদি আপনি ক্লায়েন্টের চাহিদা অনুযায়ী ডিজাইন করে দিতে পারেন।
মোবাইল দিয়েও আপনি গ্রাফিক ডিজানের কাজ করতে পারবেন। ক্যানভা (Canva), Desygner এর মতো গ্রাফিক ডিজাইন অ্যাপস ব্যবহার করে আপনি লোগো, ব্যানার, ইনফোগ্রাফিক, ব্রোচার (brochures), ফ্লায়ার (flyers), ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ, ছবি এডিটিং ইত্যাদি কাজ আপনি করতে পারবেন।
তবে এসব অ্যাপ ব্যবহার করে আপনি হাই কোয়ালিটির গ্রাফিক ডিজাইন করবেন সেটা সম্ভব নয়। তবে চেষ্টা এবং একাগ্রতা থাকলে ভাল মানের ডিজাইন করা সম্ভব।
২. সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার
মোবাইল দিয়ে যদি ফ্রিল্যান্সিং করতে চান তাহলে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতে পারেন। এই কাজটি করতে আপনাকে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না। মোবাইল দিয়ে আপনি খুব সহজে বিভিন্ন ধরণের পোস্ট তৈরি করতে পারবেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করতে পারবেন।
প্রত্যকটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিজস্ব মোবাইল অ্যাপ আছে। এসব অ্যাপ মোবাইলে ইন্সটল করে অ্যাপ ব্যবহার করে প্রায় সব ধরণের ফিচার ব্যবহার করতে পারবেন। তবে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার (X), টিকটক, ইন্সটাগ্রাম এসবের ব্যবহার খুব ভালভানে জানতে হবে। তবে আপনি চাইলে যেকোনো একটা প্লাটফর্মের বিশেষজ্ঞ হিসেবেও কাজ কারতে পারেন।
৩. ফ্রিল্যান্স রাইটিং
মোবাইলে ফ্রিল্যান্সিং করতে চাইলে আপনি রাইটার হিসেবে কাজ করতে পারেন। কারণ মোবাইল দিয়ে আপনি যেকোনো সময় যেকোনো যায়গায় আপনি লেখার কাজ করতে পারবেন।
মোবাইলে গুগল ডকস (Google Docs), মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এসব অ্যাপ ব্যবহার করে আপনি লিখতে পারবেন, এডিট করতে পারবেন এবং নিজের রাইটিং সাবমিট করতে পারবেন।
৪. ভয়েস ওভার সার্ভিস ( Voice-Over Service)
আপনি চাইলে আপনার স্মার্টফোন ব্যবহার করে ভয়েস এর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্স মার্কেটে সেবা প্রদান করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার সুন্দর উপস্থাপনা এবং কন্ঠ থাকতে হবে।
৫. গ্রাহক সেবা এবং ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে অনেক জব পাবেন যেগুলোতে গ্রাহক সেবার প্রদান করার জন্য ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট ফ্রিল্যান্সার খুঁজে থাকে। গ্রাহক সেবার মধ্যে রয়েছে গ্রাহক জিজ্ঞাসা, সমস্যা সমাধান, পণ্য বা সেবা সম্পর্কে গ্রাহককে অবগত করা। গ্রাহক সেবার কাজ করতে হলে আপনাকে সুন্দর করে কথা বলা এবং উপস্থাপনা জানতে হবে। এছাড়া চাপ মোকাবিলা এবং পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কাজ করতে হবে।
৬. ভিডিও এডিটিং
মোবাইল অ্যাপ (যেমন Kinemaster, InShot, Adobe Premiere Rush) ব্যবহার করে সাধারণ ভিডিও এডিটিং কাজ করা যায়। যদিও পেশাদার ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করা ভালো, তবে ছোট কাজগুলো মোবাইলেও করা সম্ভব।
মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু অ্যাপ
১. কন্টেন্ট রাইটিং এবং ডকুমেন্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য:
- Google Docs, Microsoft Word, Evernote
২. গ্রাফিক ডিজাইন এবং ভিডিও এডিটিংয়ের জন্য:
- Canva, Adobe Spark, Kinemaster, InShot, PicsArt
৩. সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্টের জন্য:
- Hootsuite, Buffer, Later, Facebook Pages Manager
৪. ডেটা এন্ট্রি এবং ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টের জন্য:
- Google Sheets, Microsoft Excel, Asana, Trello
উপসংহার
আশা করি এই লেখা পড়ার পর মোবাইল দিয়ে কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করতে হয় সে ব্যাপারে আপনার খুব ভাল একটা ধারণা হয়েছে। তবে আমি বলবো আপনি যদি একজন প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সার হতে চান তাহলে একটি কম্পিউটার কেনার চেষ্টা করুন। এটা আপনার জন্য একটা বিনিয়োগ। আপনি যদি পর্যাপ্ত সময় দেন এবং আগ্রহ নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য যেসব স্কিল প্রয়োজন সেগুলো ডেভেলপ করেন তাহলে অবশ্যই আপনি সফল হবেন।