অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক ব্যবস্থাপনা এবং ট্র্যাকিং সঠিকভাবে করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লিঙ্কগুলোর কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করে কোন লিঙ্ক থেকে সবচেয়ে বেশি কনভার্সন হচ্ছে, কোন প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রাফিক আসছে এবং কোন কৌশলগুলোর মাধ্যমে আপনার আয় বাড়ানো সম্ভব সেসব বিষয় আপনি জানতে পারবেন ।
অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবস্থাপনা ও ট্র্যাকিং পদ্ধতি
নিচে অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক ব্যবস্থাপনা ও ট্র্যাকিং এর বেশ কিছু পদ্ধতি আছে সেগুলো নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো:
১. অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক সংক্ষিপ্তকরণ এবং ম্যানেজমেন্ট টুল ব্যবহার
লম্বা এবং জটিল লিঙ্কগুলোকে সহজ এবং আকর্ষণীয় করতে লিঙ্ক সংক্ষিপ্তকরণ টুল ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও এসব টুল লিঙ্কগুলোর ট্র্যাকিং এবং ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে।
জনপ্রিয় লিঙ্ক সংক্ষিপ্তকরণ এবং ম্যানেজমেন্ট টুল:
Bitly: লিঙ্ক সংক্ষিপ্তকরণ এবং ট্র্যাকিংয়ের জন্য বিটলি একটি জনপ্রিয় টুল। এই টুলের মাধ্যমে আপনি লিঙ্ক ক্লিকের সংখ্যা, ভিজিটরের উৎস এবং ভিজিটরদের অবস্থান ট্র্যাক করতে পারবেন।
Pretty Links (WordPress Plugin): ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহারকারীদের জন্য Pretty Links একটি দুর্দান্ত প্লাগইন। এটি আপনার অ্যাফিলিয়েট লিঙ্কগুলোকে সহজে ম্যানেজ করতে এবং সংক্ষিপ্ত করতে সাহায্য করে। এছাড়া এর মাধ্যমে ক্লিক এবং ট্রাফিকের ডাটা বিশ্লেষণ করতে পারবেন।
ThirstyAffiliates (WordPress Plugin): এটি আরেকটি ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগইন যা অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক সংক্ষিপ্তকরণ, ক্লোকিং এবং ট্র্যাকিং করতে সাহায্য করে।
Geniuslink: এর মাধ্যমে আপনি জিও-ট্র্যাকিং করতে এবং ভিন্ন ভিন্ন স্টোরের লিঙ্ক ম্যানেজ করতে পারবেন।
২. অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামের নিজস্ব সিস্টেম ব্যবহার করে অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবস্থাপনা ও ট্র্যাকিং
অনেক অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম আছে যেগুলোর নিজস্ব অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবস্থাপনা ও ট্র্যাকিং সিস্টেম আছে। এর মাধ্যমে আপনি রেফারাল লিঙ্কের মাধ্যমে তৈরি করা বিক্রয়, লিড এবং ক্লিক পরিসংখ্যান দেখতে পারবেন।
উদাহরণ:
Amazon Associates: অ্যামাজনের অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে আপনি ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে ক্লিক, কনভার্সন, কমিশন এবং পণ্যের বিক্রয় ট্র্যাক করতে পারবেন।
ShareASale: এটি আপনাকে ড্যাশবোর্ডে ক্লিক এবং সেল ট্র্যাকিংয়ের পাশাপাশি রিয়েল-টাইম বিশ্লেষণ দেখার সুবিধা প্রদান করবে।
CJ Affiliate: এখানে ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন পারফর্মেন্স মেট্রিক্স দেখতে পারেন যেমন ক্লিক, সেল, অ্যাড ইমপ্রেশন এবং আয়ের বিশ্লেষণ।
ড্যাশবোর্ডে প্রদর্শীত বিভিন্ন গ্রাফ ও রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে আপনি সহজেই অ্যাফিলিয়েট ক্যাম্পেইন সফল হচ্ছে কিনা তা বুঝতে পারবেন।
আরও পড়ুন : কন্টেন্ট মার্কেটিং এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মধ্যে পার্থক্য কি?
৩. Google Analytics ব্যবহার
Google Analytics হলো ওয়েবসাইটে আসা ট্রাফিক এবং ব্যবহারকারীদের আচরণ বিশ্লেষণের একটি শক্তিশালী টুল। অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক ট্র্যাকিংয়ের জন্য এটি খুবই কার্যকরী।
Google Analytics-এ অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক ট্র্যাকিং করার ধাপ:
UTM কোড ব্যবহার করুন: UTM (Urchin Tracking Module) কোডের মাধ্যমে আপনি নির্দিষ্ট লিঙ্কগুলোকে ট্র্যাক করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, একটি লিঙ্কে UTM কোড যুক্ত করলে আপনি জানতে পারবেন কোন সোর্স বা মিডিয়াম থেকে ক্লিক এসেছে।
-
- Campaign Source: কোথা থেকে ট্রাফিক আসছে (e.g., Facebook, Email)
- Campaign Medium: কোন ধরনের প্রচারণা চলছে (e.g., social, email, cpc)
- Campaign Name: প্রচারণার নাম (e.g., product_launch)
Google Analytics ড্যাশবোর্ডে রিপোর্ট দেখুন: UTM ট্যাগযুক্ত লিঙ্কগুলো থেকে কতটুকু ট্রাফিক আসছে, কনভার্সন রেট এবং ব্যবহারকারীদের আচরণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য Google Analytics-এর মাধ্যমে পেতে পারবেন।
UTM কোড জেনারেট করার জন্য টুল:
- Google’s Campaign URL Builder: এটি একটি ফ্রি টুল, যা আপনাকে সহজে UTM কোড তৈরি করতে সাহায্য করবে।
- UTM.io: এর মাধ্যমে উন্নত এবং কাস্টমাইজড UTM কোড তৈরি করতে পারবেন।
৪. Conversion Tracking (কনভার্সন ট্র্যাকিং) সেট আপ করুন
কনভার্সন ট্র্যাকিং এর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন যে কোন লিঙ্কগুলো কেবল ট্রাফিক নিয়ে আসছে না, বরং কনভার্সন হচ্ছে অর্থাৎ বিক্রয় বা লিড তৈরি করছে।
Conversion Tracking সেটআপের পদ্ধতি:
Google Ads বা Facebook Pixel ব্যবহার করুন: আপনি যদি Google Ads বা Facebook Ads ব্যবহার করে প্রমোশন ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেন, তবে তাদের ট্র্যাকিং পিক্সেল ব্যবহার করে সঠিকভাবে কনভার্সন ট্র্যাক করতে পারবেন।
পিক্সেলগুলো আপনার ওয়েবসাইটে ইনস্টল করতে পারেন। তাহলে এগুলোর মাধ্যমে আপনি বিক্রয়, লিড বা অন্যান্য কনভার্সন অ্যাকশন ট্র্যাক করবে।
Affiliate Program Tracking Code: অনেক অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম তাদের নিজস্ব ট্র্যাকিং কোড সরবরাহ করে যা আপনি আপনার ওয়েবসাইটে যুক্ত করে কনভার্সন ট্র্যাক করতে পারেন।
৫. A/B টেস্টিং করে লিঙ্ক পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করুন
A/B টেস্টিং এর মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক, কন্টেন্ট বা ল্যান্ডিং পেজের কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে পারেন। এটি আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে কোন লিঙ্ক বা পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি কার্যকর।
A/B টেস্টিং টুল:
Google Optimize: Google Optimize এর মাধ্যমে আপনি সহজে A/B টেস্টিং করে জানতে পারবেন কোন লিঙ্ক বা কন্টেন্ট সবচেয়ে কার্যকর।
Optimizely: এই টুলটি আপনাকে কন্টেন্ট এবং লিঙ্ক টেস্ট করতে এবং তাদের কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করতে সহায়তা করবে।
৬. অন্যান্য ট্র্যাকিং টুল ব্যবহার
অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক ব্যবস্থাপনা ও ট্র্যাকিং এর জন্য আরও অনেক টুল রয়েছে, এসব টুল অ্যাডভান্সড ফিচার সরবরাহ করে।
জনপ্রিয় ট্র্যাকিং টুল:
Voluum: এটি একটি পেইড ট্র্যাকিং টুল। এদের অ্যাডভান্সড ফিচার ব্যবহার করে আপনি ট্রাফিকের গুণগত মান, কনভার্সন রেট ইত্যাদির আরও বিস্তৃত পরিসরে বিশ্লেষণ করতে পারবেন।
ClickMeter: এটি একটি অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক ট্র্যাকিং টুল, যা বিভিন্ন লিঙ্ক থেকে আসা ট্রাফিক এবং কনভার্সন ট্র্যাক করতে সহায়তা করে।
LinkTrackr: এটি লিঙ্ক ক্লোকিং এবং ট্র্যাকিংয়ের জন্য ভালো একটি টুল, বিশেষ করে পেইড অ্যাডস ক্যাম্পেইন ট্র্যাক করার ক্ষেত্রে খুব কার্যকর।
৭. লিঙ্ক ক্লোকিং ব্যবহার করুন
অ্যাফিলিয়েট লিঙ্কগুলো সাধারণত খুব দীর্ঘ এবং জটিল হয়, যা দেখতে অস্বাভাবিক মনে হতে পারে।
লিঙ্ক ক্লোকিং এর মাধ্যমে আপনি এই লিঙ্কগুলোকে সংক্ষিপ্ত এবং সুন্দরভাবে প্রদর্শন করতে পারেন। এতে ভিজিটরদের ক্লিক করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
লিঙ্ক ক্লোকিং টুল:
Pretty Links: ওয়ার্ডপ্রেসে লিঙ্ক ক্লোকিংয়ের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় প্লাগইন।
ThirstyAffiliates: অ্যাফিলিয়েট লিঙ্কগুলো ক্লোক করতে এবং সহজে ম্যানেজ করতে এই টুলটি ব্যবহার করতে পারেন।
সারসংক্ষেপ:
অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক ব্যবস্থাপনা ও ট্র্যাকিং সফলভাবে করার জন্য আপনাকে বিভিন্ন টুল এবং পদ্ধতির সাহায্যে লিঙ্কগুলো সংক্ষিপ্ত, ট্র্যাকিং এবং বিশ্লেষণ করতে হবে।
লিঙ্ক সংক্ষিপ্ত করার জন্য Pretty Links বা Bitly ব্যবহার করুন, আর ট্র্যাকিংয়ের জন্য Google Analytics, UTM কোড, এবং অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামের নিজস্ব ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করুন। A/B টেস্টিং করে পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করুন এবং ক্লোকিং ব্যবহার করে লিঙ্কগুলোকে আরও পেশাদার ও আকর্ষণীয় করুন।
পাঠক জিজ্ঞাসা
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ কুকি মেয়াদ (cookie duration) কত দিন?
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এ কুকি মেয়াদ (cookie duration) বলতে সেই সময়কালকে বোঝায়, যার মধ্যে একজন ভিজিটর অ্যাফিলিয়েট লিঙ্কের মাধ্যমে একটি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে এবং সেই সময়সীমার মধ্যে যদি তিনি কোনো পণ্য ক্রয় করেন, তাহলে অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক প্রমোটকারীকে কমিশন প্রদান করা হয়।
একেকটি অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামের কুকি মেয়াদ একেক রকম হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ:
- কিছু প্রোগ্রামে কুকি মেয়াদ ২৪ ঘণ্টা হতে পারে।
- আবার কিছু প্রোগ্রামে ৩০ দিন বা তারও বেশি হতে পারে।
হিসাবটা সুন্দরভাবে বুঝার জন্য একটি উদাহরণ দিই। ধরা যাক কুকি মেয়াদ ৩০ দিন। এখন যদি একজন ভিজিটর আপনার অ্যাফিলিয়েট লিঙ্কে ক্লিক করে ৩০ দিনের মধ্যে যদি কিছু ক্রয় করেন, তাহলে আপনি কমিশন পাবেন।