Home Business Guidelines ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন- প্রকারভেদ, সুবিধা ও অসুবিধা, টিপস

ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন- প্রকারভেদ, সুবিধা ও অসুবিধা, টিপস

আমাদের মধ্যে অনেক তরুণ উদ্যোক্তা আছেন যারা ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন না জানার কারণে এই ব্যবসায় আসতে পারছেন না বা সাহস পাচ্ছে না।

অথচ ইন্টারনেট, স্মার্টফোন এবং ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার বিস্তারের ফলে এখন আর ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে বড় দোকান, বেশি মূলধন বা জটিল অবকাঠামোর প্রয়োজন হয় না।

ঘরে বসেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ওয়েবসাইট বা অনলাইন মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে খুব সহজেই ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। আজকের ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন এ এই বিষয়টি সহজভাবে আপনাদের নিকট তুলে ধরবো।

ই-কমার্স ব্যবসা কি?

ই-কমার্স (E-Commerce) হচ্ছে Electronic Commerce অর্থাৎ ইলেকট্রনিক মাধ্যম যেমন ইন্টারনেট বা ডিজিটাল ডিভাইস বা প্লাটফর্ম ব্যবহার করে পণ্য বা সেবা কেনা-বেচা করার ব্যবসা।

ই-কমার্স ব্যবসায় ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনলাইন মার্কেটপ্লেস ইত্যাদির মাধ্যমে ক্রেতার নিকট পণ্য বা সেবা প্রদর্শন করে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়।

ই-কমার্স ব্যবসা কীভাবে কাজ করে?

ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন এ এখন আপনাকে জানাব ই-কমার্স ব্যবসা কিভাবে কাজ করে। মূলত ৪ টি ধাপে এই ব্যবসার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়। ৪ টি ধাপ হচ্ছে:

১. অনলাইনে বিক্রেতা পণ্য/সেবা প্রদর্শন করে,
২. ক্রেতা অনলাইনে অর্ডার করে,
৩. ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম বা ক্যাশ অন ডেলিভারিতে পেমেন্ট প্রদান করা,
৪. কুরিয়ার/ডেলিভারির ম্যানের মাধ্যমে পণ্য পৌঁছানো,

ই-কমার্স ব্যবসা কত প্রকার?

ই-কমার্স ব্যবসা বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। সাধারণভাবে ই-কমার্স ব্যবসা ৫ প্রকার, যেমন:

১. B2C (Business to Consumer)

এই মডেল অনুসারে ব্যবসায়ী সরাসরি ভোক্তার কাছে পণ্য বিক্রি করে। বিক্রেতা তাদের প্লাটফর্মে ভোক্তাদের নিকট পণ্য প্রদর্শন করে আর ভোক্তারা সেসব পণ্য সরাসরি ক্রয় করতে পারে। এই মডেলে ক্রেতার সংখ্যা বেশি কিন্তু লাভ বেশি। যেমন Amazon, Daraz ইত্যাদি প্লাটফর্ম হচ্ছে B2C প্লাটফর্ম।

২. B2B (Business to Business)

ই-কমার্স এর এই মডেলে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অন্য ব্যবসার কাছে পণ্য/সেবা বিক্রি করে। Alibaba হচ্ছে এই ধরণের প্লাটফর্ম যেখানে শুধু ব্যবসায়ীদের মধ্যে লেনদেন হয়। এই মডেলে লাভ বেশি হয় কিন্তু অর্ডার সংখ্যা কম থাকে।

৩. C2C (Consumer to Consumer)

একজন সাধারণ ব্যক্তি আরেকজন সাধারণ ব্যক্তির কাছে পণ্য বিক্রি করে। এখানে কোন ব্যবসায়ী থাকে না। ব্যক্তি ক্রেতাদের কেন্দ্র করে এই প্লাটফর্মে লেনদেন হয়। উদাহরণ: Facebook Marketplace, Bikroy Dot Com.

৪. C2B (Consumer to Business)

এখানে একজন ব্যক্তি কোনো ব্যবসার কাছে সেবা বা পণ্য বিক্রয় করে থাকে। সরাসরি ব্যক্তি থেকে সার্ভিস নেওয়ার জন্যই ব্যবসায়ীরা এই প্লাটফর্ম ব্যবহার করে। উদাহরণ: ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্ম।

৫. D2C (Direct to Consumer)

উতপাদক বা সরবরাহকারী সরাসরি গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে। মূলত মিডল ম্যান এড়ানোর জন্য এই ধরণের প্লাটফর্মের সৃষ্টি। এর ফলে ভোক্তারা কম খরচে পণ্য ক্রয় করতে পারে। উদাহরণ: নিজস্ব ব্র‍্যান্ড পেজ বা ওয়েবসাইট।

বাংলাদেশে কোন ই-কমার্স সবচেয়ে জনপ্রিয়?

  • ফেসবুক ভিত্তিক B2C
  • C2C (Bikroy, Facebook)
  • D2C (নিজস্ব ব্র্যান্ড পেজ)

আরও পড়ুন: অ্যামাজন (Amazon) থেকে আয় করার বিস্তারিত গাইডলাইন

ই-কমার্স ব্যবসার সুবিধা ও অসুবিধা

ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন এ এবার এই ব্যবসা শুরুর সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করবো।

ই-কমার্স ব্যবসার সুবিধা

১. কম মূলধনে ব্যবসা শুরু করা যায়

এই ধরণের ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনার খুব বেশি মূলধন এর প্রয়োজন নেই। প্রাথমিকভাবে একটি ফেসবুক পেজ এর মাধ্যমে বা ওয়েবসাইট তৈরি করে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করা যায়।

২. ২৪/৭ ব্যবসা পরিচালনা করা যায়

অনলাইন দোকানের একটা বড় সুবিধা হচ্ছে এর কোন নির্দিষ্ট সময় নেই। সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে। ক্রেতার দিন রাত যেকোনো সময়ে ফেসবুক পেজ, ওয়েবসাইট, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি মাধ্যমে অর্ডার করতে পারে।

৩. দেশব্যাপী ও আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রির সুযোগ

ই-কমার্স ব্যবসার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এর কোন নির্দিষ্ট গন্ডি নেই। একজন উদ্যোক্তা চাইলেই সারাদেশ এমনকি সারা বিশ্বে পণ্য বিক্রয় করতে পারবেন।

ফেসবুক এডস, গুগল এডস এর মাধ্যমে খুব সহজেই বিভিন্ন দেশের টার্গেটেড কাস্টমারের কাছে সহজেই পৌঁছানো যায়।

৪. পরিচালনা ব্যয় কম

ই-কমার্স ব্যবসায় পরিচালনা ব্য্য অন্য ব্যবসার তুলনায় অনেক কম। যেমন এই ব্যবসায় ছোট আকারে করলে নিজের বাড়িতে থেকেই করা যায় তাই দোকান ভাড়া লাগে না, এর পাশাপাশি ইউটিলিটিজ বিল ও স্টাফ খরচও কম।

৫️. সহজে মার্কেটিং করা যায়

অন্য যেকোনো ব্যবসার তুলনায় এই ব্যবসায় মার্কেটিং খরচ কম। ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে আপনি কম খরচে সহজেই মার্কেটিং করতে পারবেন।

ডিজিটাল মার্কেটিং গাইডলাইন থেকে আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত শিখতে পারবেন।

৬. ডেটা ও রিপোর্ট বিশ্লেষণ সুবিধা

ফেসবুক পেজ বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একাউন্টে এনালিটিক্স ফিচার থাকে। যার ফলে খুব সহজেই ডেটা পাওয়া যায় এবং রিপোর্ট বিশ্লেষণ করা যায়। যেমন কোন পণ্য বেশি বিক্রি হচ্ছে, কোন বিজ্ঞাপন বেশি কাজ করছে। এছাড়া ওয়েবসাইটে Wocommerce এর মাধ্যমেও আপনি সব ধরণের ডেটা সহজেই পেয়ে যাবেন।

ই-কমার্স ব্যবসার অসুবিধা

ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন এ এবার এই ব্যবসার কিছু অসুবিধার কথা বলবো।

১. কাস্টমার ট্রাস্টের সমস্যা

এই ব্যবসার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কাস্টমার ট্রাস্ট। বর্তমানে অনলাইন জগতে অনেক ভূয়া প্রতিষ্ঠান আছে যাদের কারণে মানুষের ট্রাস্ট কমে গেছে। তাই অনেকেই অনলাইনে অর্ডার করতে ভয় পায়। তাই আপনার অন্যতম কাজ হবে কাস্টমার ট্রাস্ট অর্জন করা।

২. রিটার্ন ও ক্যানসেল রেট বেশি

অনেক গ্রাহক পণ্য হাতে পাওয়ার পর তাদের ডিমান্ড অনুযায়ী হয় নাই অভিযোগ করে অর্ডার রিসিভ না করে পণ্য রিটার্ন করে দেয়। এর ফলে ডেলিভারি খরচ লস হয়।

৩. প্রতিযোগিতা খুব বেশি

যেহেতু দিন দিন অনলাইন ব্যবসায় বিভিন্ন ব্যক্তি যোগ দিচ্ছে তাই প্রতিযোগিতার পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

৪. ডেলিভারি ও লজিস্টিক সমস্যা

ই-কমার্স ব্যবসায় ডেলিভারি এবং লজিস্টিক সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। একসাথে বেশি অর্ডার আসলে ডেলিভারি ম্যান পাওয়া যায় না। আবার কুরিয়ার সার্ভিস সরবরাহকারীরাও বেশি অর্থ দাবি করে।

ই-কমার্স ব্যবসা কাদের জন্য উপযোগী?

ই-কমার্স ব্যবসার বেশি উপযোগী হচ্ছে:

  • নতুন উদ্যোক্তা
  • প্রযুক্তি জ্ঞান আছে এমন ব্যক্তি,
  • শিক্ষার্থী
  • ফ্রিল্যান্সার
  • ঘরে বসে ব্যবসা করতে চান যারা,
  • কম বাজেটে ব্যবসা শুরু করতে চান এমন ব্যক্তি।

আরও পড়ুন: ড্রপশিপিং কি? ড্রপশিপিং ব্যবসার পূর্ণ গাইডলাইন।

ই-কমার্স ব্যবসা শুরু গাইডলাইন

ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করা খুব সহজ। ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন এ কিভাবে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করবেন তা নিচে ধাপে ধাপে আলোচনা করা হলো।

ধাপ–১. ব্যবসার মডেল ও পণ্য নির্বাচন

এই ধরণের ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি কোন ধরণের মডেল নিয়ে ব্যবসা শুরু করবেন। উপরেই ই-কমার্স এর প্রকারভেদে মডেলগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে তাই নতুন করে আর লিখলাম না।

ব্যবসার ধরণের উপর নির্ভর করে আপনার পরবর্তী কার্যক্রম ভিন্ন হবে। যেমন B2C হলে আপনার একটি ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইট তৈরি করলেই হবে। সেখান থেকে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। আবার B2B হলে আলিবাবা’র মতো প্লাটফর্মে যুক্ত হতে হবে।

এরপর কোন ধরণের পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করবেন সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রথমদিকে ১ বা ২ টি পণ্য নিয়েই শুরু করা ভালো। পরে ব্যবসা ভাল চললে পণ্য করা যাবে।
শুরুতে কম দামের এবং বেশি চাহিদার পণ্য বেছে নিন।

ই-কমার্স ব্যবসায় কিছু পণ্য ভাল চলে যেমন:

  • পোশাক
  • কসমেটিকস
  • হোম & কিচেন
  • ডিজিটাল পণ্য

ধাপ–২. ব্যবসার নাম ও ব্র্যান্ডিং

আপনার ব্যবসার জন্য একটি ইউনিক নাম ঠিক করুন। একই নামে ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইট এর ডোমেইন নাম সেট করুন। ব্যবসার জন্য একটি প্রফেশনাল লোগো ডিজাইন করুন এবং ভিজিটিং কার্ড তৈরি করুন।

ধাপ–৩: প্ল্যাটফর্ম সেটআপ

কোন প্লাটফর্মে ব্যবসা করবেন সে বিষয়টি ঠিক করুন। অল্প মূলধন হলে শুধু ফেসবুককে কেন্দ্র করেই ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে পারেন। বেশি বাজেট থাকলে ওয়েবসাইট তৈরি করুন, অ্যামাজন, শপিফাই, দারাজ আলীবাবা এর মতো প্লাটফর্মে যুক্ত হোন।

ধাপ–৪: পেমেন্ট ব্যবস্থা

পণ্য বিক্রয় করার পর কিভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে পেমেন্ট গ্রহণ করবেন তা ঠিক করুন।

বাংলাদেশে জনপ্রিয় পেমেন্ট অপশন হচ্ছে:

Cash on Delivery (COD)
bKash / Nagad / Rocket
Bank Account
Payment Gateway (SSLCommerz, ShurjoPay)

বাংলাদেশে বেশিরভাগ ক্রেতা পণ্য হাতে পেয়ে পেমেন্ট দিতে পছন্দ করে। তাই ক্রেতারা এই পদ্ধতিতেই বেশি পেমেন্ট দিয়ে থাকে।

আপনি যদি বিকাশ/ নগদ / রকেট ব্যবহার করতে চান তাহলে এসব প্লাটফর্ম এ একাউন্ট খুলতে হবে। ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে হলে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হবে। পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করতে চাইলে তাদের সাথে চুক্তি করতে হবে।

PCMI এর তথ্য মতে  বাংলাদেশে পেমেন্ট ম্যাথডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ঃ

  • ক্যাশ অন ডেলিভারি – ৭৫%
  • ডিজিটাল ওয়ালেট – ১১%
  • ক্রেডিট কার্ড- ৮%
  • ডেবিট কার্ড – ৬%

ধাপ–৫: ডেলিভারি সিস্টেম

অর্ডার পাওয়ার পর দ্রুত গ্রাহকদের কাছে পৌছানোটা হচ্ছে একটা চ্যালেঞ্জ। এর উপর গ্রাহক ধরে রাখা ও ব্যবসার সফলতা করে।

বেশিরভাগ ই-কমার্স ব্যবসায়ী কুরিয়ার সার্ভিস এর মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করে থাকে। এসব কুরিয়ার সার্ভিসের মধ্যে রয়েছে :

  • Pathao Courier
  • Steadfast
  • RedX
  • Sundarban Courier
  • SA Paribahan

বড় আকারে করতে চাইলে ডেলিভারি ম্যান নিয়োগ দিতে পারেন এবং নিজস্ব পরিবহনের ব্যবস্থা করতে পারেন।

ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ

যেকোনো ব্যবসা শুরু করতে হলে ট্রেড লাইসেন্স লাগে। তবে আপনি যদি একেবারে ছোট আকারে শুরু করতে চান তাহলে ট্রেড লাইসেন্স না হলেও চলবে।

ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে আনুমানিক খরচ

ফেসবুক ভিত্তিক ই-কমার্স

খরচের খাত

আনুমানিক টাকা

ট্রেড লাইসেন্স

১,০০০

পণ্য ক্রয়

২০,০০০

পেজ সেটআপ ও ডিজাইন

২,০০০

ফেসবুক বিজ্ঞাপন

৫,০০০
অন্যান্য

২,০০০

মোট

৩০,০০০ টাকা

 

ওয়েবসাইট ভিত্তিক ই-কমার্স

খরচের খাত

টাকা

ট্রেড লাইসেন্স

১,৫০০

ডোমেইন + হোস্টিং

৮,০০০

ওয়েবসাইট ডেভেলপ

১৫,০০০

পণ্য স্টক

৩০,০০০
মার্কেটিং

১০,০০০

মোট

৬৫,০০০+ টাকা

 

বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসার সম্ভাবনা 

বাংলাদেশে ই-কমার্স এর যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশে রয়েছে বিশাল এক ক্রেতা গোষ্ঠী যারা দিন দিন অনলাইন ক্রয়ে অভ্যস্ত হচ্ছে এবং এই মার্কেট বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে।

DHL রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪–২০২৯ সালের মধ্যে অনলাইন শপিং ব্যবহারকারী সংখ্যা প্রায় ৫.২ মিলিয়ন বাড়বে, এবং ২০২৯ সালের মধ্যে মোট প্রায় ১৫.৯ মিলিয়ন (প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ) গ্রাহক অনলাইনে কেনাকাটি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ডেইলি স্টারের রিপোর্ট অনুযায়ী ই-কমার্স মার্কেট সাইজ
২০২৩ ৬.৯ বিলিয়ন ডলার
২০২৪ ৭.৫ বিলিয়ন ডলার
২০২৮ সালে ৯.৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।

লিংকড ইন এর তথ্য অনুযায়ী ২০২৫ ৮-৯ বিলিয়ন ডলার

বাংলাদেশ বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এর তথ্য অনুযায়ী,  প্রতি বছর ১২-১৭% হারে ই-কমার্স মার্কেট বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রধান কারণগুলো হচ্ছেঃ

ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন ব্যবহার ব্যাপক বৃদ্ধি,
সোশ্যাল মিডিয়া কমার্সের দ্রুত উত্থান,
অনলাইন কেনাকাটায় অভ্যস্ত হওয়া,
সরকারি অনুকূল নীতিমালা,

ই-কমার্স ব্যবসায় কেমন লাভ?

ই-কমার্স ব্যবসার লাভের পরিমাণ নির্ভর করবে আপনি কোন ধরণের পণ্য বা সেবা বিক্রি করতে চাচ্ছেন তার উপর। যেমন আপনি যদি ইবুক, অডিওবুক, ডিজিটাল আর্ট, টিউটোরিয়াল ইত্যাদির মত ডিজিটাল পণ্য বিক্রয় করেন তাহলে আপনার খরচ কম হবে এবং লাভের পরিমাণ অনেক বেশি থাকবে।

ফিজিক্যাল পণ্য বিক্রি করলে লাভের পরিমাণ ডিজিটাল পণ্যের তুলনায় কম হবে এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে দামি সৌখিন পণ্যে লাভের পরিমাণ বেশি হয়। আবার নিত্য ব্যবহার্য পণ্য বিক্রি করলে লাভের পরিমাণ কম থাকে কিন্তু বিক্রি বেশি হয়।

ই-কমার্স ব্যবসায় সফল হওয়ার টিপস

ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন এ এবার ই-কমার্স ব্যবসায় কিভাবে সফল হবেন এজন্য কিছু টিপস দিলাম। টিপসগুলো ফলো করলে অবশ্যই সফল হবেন।

১. সঠিক পণ্য নির্বাচন এই ধরণের ব্যবসায় অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত চাহিদা আছে, রিটার্ন কম হয় সাইজ/কালার জটিলতা কম, লাভের মার্জিন বেশি এরকম পণ্য নিয়ে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করুন। যেমন কসমেটিকস, হোম কিচেন আইটেম, গ্যাজেট এক্সেসরিজ, বেবি প্রোডাক্ট ইত্যাদি।

২. ট্রাস্ট বিল্ডিং ছাড়া সেল হবে না। ট্রাস্ট বাড়ানোর জন্য নিচের কাজগুলো করুন:

  • ট্রেড লাইসেন্স ও ঠিকানা শেয়ার করুন,
  • রিয়েল কাস্টমার রিভিউ ও ছবি দিন,
  • ফেসবুক লাইভে পণ্য দেখান,

৩. কাস্টমার সাপোর্টকে প্রাইওরিটি দিন। মনে রাখবেন ভাল সার্ভিস মানেই কাস্টমার রিটেনশন রেট বাড়া। এজন্য যা করবেন:

  • ইনবক্সর রিপ্লাই দ্রুত দেওয়ার চেষ্টা করুন,
  • অর্ডার কনফার্মেশন কল,
  • ডেলিভারি আপডেট দেওয়া,

৪. রিটার্ন ও ক্যানসেল রেট কমানোর কৌশল প্রয়োগ করুন। এজন্য যা করবেন:

  • পণ্যের রিয়েল ছবি ও ভিডিও দিন,
  • স্পষ্টভাবে পণ্যের দাম, সাইজ, ফিচার লিখুন,
  • আংশিক অগ্রিম (৫০–১০০ টাকা) নেওয়ার চেষ্টা করুন,
  • সন্দেহজনক অর্ডার বাদ দিন,

সফল ব্যবসার রিটার্ন রেট সাধারণত ১০% এর নিচে থাকে।

৫. দ্রুত ডেলিভারি কাস্টমার সন্তুষ্টি বাড়ায় তাই সঠিক ডেলিভারি পার্টনার নির্বাচন করুন যাতে দ্রুত ডেলিভারি দেওয়া যায়। ডেলিভারির জন্য কয়েকটা অপশন রাখবেন।

৬. বিভিন্ন ধরণের মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি প্রয়োগ করুন। এর মধ্যে ফেসবুক এড এর উপর জোর দিন।

Facebook Marketing

  • ৭০% বাজেট → কনভার্শন অ্যাড
  • ২০% → ভিডিও/রিভিউ কনটেন্ট
  • ১০% → রিটার্টেটিং

কনটেন্ট আইডিয়া

  • Unboxing ভিডিও
  • কাস্টমার রিভিউ
  • Before–After

৭. নিয়মিত ডেটা বিশ্লেষণ করতে হবে।

যেসব ডেটা নিয়মিত ট্র্যাক করবেনঃ

  • Cost per Order
  • Return Rate
  • Profit per Product
  • Best Selling Product

৮. শুরুতে অল্প বিনিয়োগ করুন। তারপর ধীরে ধীরে পরিধি বাড়ান। নৈতিকতা রক্ষা করে ব্যবসা করুন।

সবশেষে

আশা করি ই-কমার্স শুরুর গাইডলাইনটি যদি আপনি ভালভাবে অনুসরণ করেন তাহলে আপনি খুব সহজেই এই ব্যবসা শুরু করে দিতে পারবেন। আর ই-কমার্স ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য আমার দেওয়া টিপসগুলো অবশ্যই ব্যবসায় এপ্লাই করুন তাতে আপনার ব্যবসায় দ্রুত ও টেকসই প্রবৃদ্ধি হবে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version